তবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কারণেই এখনও টিকে আছে এ দুর্গ। রংপুর-৩ (সদর ও সিটি করপোরেশন) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক এই রাষ্ট্রপতি ছাড়া জাপার কিছুই নেই বলে মন্তব্য সাধারণ মানুষের।
সরেজমিনে রংপুর সদরের বিভিন্ন এলাকায় গেলে অনেকেই বলেন, জাপার দুর্গ বলে পরিচিত রংপুর এখন আর সে অবস্থানে নেই। দ্বন্দ্ব-কোন্দলে রুগ্ন হয়ে পড়েছে সংসদের প্রধান বিরোধী দলটি, জনপ্রিয়তাও কমছে।
রংপুর নগরীর পায়রা চত্বরে মশিউর রহমান বলেন, এখনও এরশাদ এ আসনে দাঁড়ালে জিতে আসবেন। তার জনপ্রিয়তা আছে। কিন্তু জাতীয় পার্টির দুর্গ বলে যা বলা হতো, তা নেই আজকের রংপুরে।
সদ্য জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়া এক নেতা বলেন, জাতীয় পার্টির কে নিজ দল করেন আর কে আওয়ামী লীগ করেন, তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন কর্মীরাও। রংপুরের ছয়টি আসনের মধ্যে মাত্র দু’টি রয়েছে জাতীয় পার্টির কাছে। তার মধ্যে সদর আসনে এরশাদ নিজে এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গা রংপুর-১ (গঙ্গাচড়া) আসনের সংসদ সদস্য।
ওই নেতার দাবি, সাধারণ কর্মীরাই বলছেন, রাঙ্গার কার্যকলাপ দেখে মনে হয়, তিনি আওয়ামী লীগেরই প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, সম্প্রতি এরশাদ হুঙ্কার দিয়েছেন যে, আগামী নির্বাচনে রংপুর বিভাগের ২২টি আসনই পুনরুদ্ধার করবেন। কিন্তু রংপুরে তার কোনো প্রতিফলন দেখা যায় না।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুরের ছয়টি আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজ নিজ নাম প্রচারে ব্যস্ত রয়েছেন।
রংপুর-১ আসনে মসিউর রহমান রাঙ্গা চান আবারও জাপার টিকিটে লড়তে। কিন্তু জেলা জাতীয় পার্টির সদস্য সচিব এরশাদের ভাতিজা সাবেক সংসদ সদস্য হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ তার প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা দিয়েছেন।
জাপার নেতাকর্মীরা বলছেন, অনেকের নামই আসছে এ আসনে। আসিফকে এবারও মনোনয়ন নাও দেওয়া হতে পারে। তবে দ্বন্দ্ব যে মাত্রায় পৌঁছেছে, মনোনয়ন না পেলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছুই থাকবে না।
রংপুর-৩ আসনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিকল্প এখন তৈরি হয়নি। তার একমাত্র শত্রু তার বয়স। এটা মেনেও এখনও রংপুর সদরের অধিকাংশ ভোটার তাকেই ভোট দেবেন বলে জানান বেশ কিছু মানুষ।
নগরীর শাপলার চত্বরে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এরশাদ যে কখন কি বলেন, তার ঠিক নেই। তারপরও প্রার্থী হলে তাকে হারানো কঠিন।
এরশাদ সদর আসনে পরপর চারবারের এমপি। ২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হন তার ভাই দলের কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
আগামী নির্বাচনেও এ আসনেই লড়বেন এরশাদ- এটিও প্রায় ঠিক করাই আছে।
এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাবেক আমলা চৌধুরী খালেকুজ্জামান এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম।
বিএনপির চার নেতা প্রচারণা চালাচ্ছেন মনোনয়ন পেতে। তারা হলেন- জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রইচ আহমেদ, মহানগর বিএনপির সভাপতি মোজাফফর হোসেন ও সহ সভাপতি সামসুজ্জামান সামু এবং সাবেক জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম মণ্ডল।
জাহাজ কোম্পানির মোড়ে বিএনপির কর্মী মো. জুয়েল বলেন, পুলিশের সাহায্য নিয়ে আওয়ামী লীগ রংপুর শহরে মিটিং-মিছিল করে। পুলিশ উঠিয়ে নিলে একজনকেও পাওয়া যাবে না।
তিনি নিজেও স্বীকার করলেন, এরশাদ দাঁড়ালে তাকে হারানো কঠিন। তবে বিএনপির ধানের শীষ বিশাল প্রতিদ্বন্দ্বিতা সৃষ্টি করবে আগামী নির্বাচনে। যদি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়- যোগ করেন জুয়েল।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৪০ ঘণ্টা, জুন ১৫, ২০১৭
কেজেড/এএসআর