রংপুর-৪ (কাউনিয়া-পীরগাছা) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে পরপর দুবারের সংসদ সদস্য (এমপি) বিশিষ্ট ব্যবসায়ী টিপু এবারও মনোনয়ন চাইবেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মাঝে নির্দ্বিধায় জনপ্রিয় তিনি।
কাগজে কলমে শিহাব চৌধুরী নামে একজন রংপুর-৪ আসনে এমপির হয়ে জনগণ এবং তার মাঝে সংযোগকারী ব্যক্তি বা অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করেন। তবে স্থানীয় জনতা তাকে চেনেন না। তাদের অভিযোগ, এমপি বেশিরভাগ সময় এলাকায় থাকেন না। তার এলাকায় আসার হার গড়ে মাসে একদিন।
কাউনিয়ায় যমুনা ব্যাংকের সামনে বসে কথা হয় কয়েকজন বৃদ্ধের সঙ্গে। তারা খেটে খাওয়া মানুষ। এলাকার রাজনীতি সম্পর্কে প্রশ্ন করতেই তাদের উত্তর, কেউ খোঁজ নেন না, সংসদ সদস্য টিপু যেন অমাবস্যার চাঁদ।
তাদের ভাষায় এটিই হলো জনবিচ্ছিন্নতা।
মো. আবু সাঈদ (৫৮) ও হাফিজুর রহমান (৬০) নামে দুজন বলেন, এমপি সাহেবকে খুব কমই দেখেছি এলাকায় আসতে। এলেও পুলিশ প্রটেকশনে আসেন। সবার সঙ্গে কথা-বার্তা হয় না, যা আমাদের ভালো লাগে না। দেশের বাইরে ও ঢাকায় আলাদা জগত আছে। দেশের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী তিনি; আর কি চাই।
কাউনিয়াতে বিএনপির হয়ে রহিম ভরসার ছেলে রংপুর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এমদাদুল হক ভরসার কথা অনেকে বলেন। তার পক্ষে সাধারণ ভোটারদের বক্তব্য, একটা নতুনত্ব আসুক। এছাড়া হারাগাছে বিড়ি শ্রমিকদের নির্ধারিত ভোট আওয়ামী লীগের জন্য ইতোপূর্বে থাকলেও বিড়িতে বাজেটের বোঝা চাপানোয় তা ভাগ হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
পীরগাছা উপজেলাতেও তৃণমূলের ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে পরিবর্তনের কথা শোনা যায়। বিগত ২০০৮ সাল থেকে নানা ক্ষেত্রে উন্নয়ন হলেও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি; বিশেষ করে চালের দাম, বাজেটে ভ্যাট-ট্যাক্সের বোঝা চাপানো, কৃষি কাজে লাভ কম হওয়াসহ দেশীয় পণ্যের বাজার মূল্য কমে যাওয়ায় বিপাকে সাধারণ মানুষ।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সেখানে কথা হয় কৃষক মোহাম্মাদ, খোরশেদ, শাহ আলম, জাহাঙ্গীর ও হানিফের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তারা বলেন, মানুষ শেষ সময়ে চিন্তা করবে কাকে ভোটটা দেওয়া যায়। তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলে থাকেন, তাদের এমপি আগামীবার মন্ত্রী হতে পারেন- এমন জোর সম্ভাবনা আছে। যদি মন্ত্রী হওয়ার সুযোগ থাকে তবে তাকে তো ভোটটা দেওয়াই যায়! আর এমন প্রভাবে তিনি (টিপু মুন্সী) হয়ত খানিক এগিয়েই থাকবেন।
জাপা এরশাদের ঘাঁটিতে গত দুই মেয়াদে উন্নয়ন কেমন হয়েছে জানতে চাইলে তারা বলেন, আওয়ামী লীগ উন্নয়নে বিশ্বাসী দল, কিন্তু প্রন্তিক মানুষ যে একজন কৃষক, রিকশাওয়ালা, ভ্যানচালক, ক্ষুদ্র বিক্রেতাও সেটা বুঝতে হবে ক্ষমতাসীনদের। খেটে খাওয়া মানুষ, বেসরকারি খাতের শ্রমিকরা তো বঞ্চিতই থেকে গেলেন, তাদের জন্য সরকার কী করলো?
পীরগাছা সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহ আলম অঞ্জু বলেন, গত ৪০ বছরে যা হয়নি, টিপু মুন্সী তা করে দেখিয়েছেন।
সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রশীদুল ইসলাম বলেন, যারা উন্নয়নের বিরোধিতা করেন তারাই টিপু ভাইকে চান না।
কমলাপুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাহীদ সর্দার বলেন, তিনি একজন দুর্নীতিমুক্ত এমপি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্বে আছেন। আগামীতে মন্ত্রী হবেন বলে জানি; বাকিটা কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত।
রশীদুল ইসলাম বলেন, বিএনপির সঙ্গে এ আসনে ভোটযুদ্ধ হবে। আর জাপার সেলিম বেঙ্গল তো আমাদের দলেই ছিলেন, লোভে পড়ে দল ত্যাগ করেছেন। তার ভোট কোনো পক্ষেই তেমন নেই।
এদিকে মেয়ে ও জামাইয়ের সঙ্গে ঈদ করতে দেশের বাইরে থাকায় টিপু মুন্সীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তৃণমূল আওয়ামী লীগ সমর্থকরা বলছেন, দিনে দিনে স্বভাবতই বিরোধী হিসেবে জাতীয়তাবাদী দলের ভোট বাড়ছে। একাদশ নির্বাচনে টিপু মুন্সীকে জিততে হলে সব অভিযোগ দূর করে জনপ্রতিনিধি হতে হবে। অন্যথায় তিনি স্বল্প ভোটে ফেল করবেন।
আরও পড়ুন:
** টিপুর বিপক্ষে এমদাদেই ভরসা
একবার খেলে ভোলা যায় না হাড়িভাঙার স্বাদ
ঈদে ট্রেনেই নিশ্চিন্ত যাত্রা
‘এরশাদ কান্দিলে ভোট আছে কিসু’
‘লাইসেন্স দেন-ট্যাক্সও বাড়ান, মারেন শুধু বিড়ি শ্রমিকরে’
মিঠাপুকুর আ’লীগে গ্রুপিং, বিভক্ত ভোটাররা!
‘সুষ্ঠু ভোট হলে এমপি জাপার’
বিএনপির অফিস এখন আম-কলার আড়ৎ!
হাইওয়েতেও ইফতারির পূর্ণ আনন্দ!
বাংলাদেশ জিতবে আশা গ্রামবাসীর!
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৭
আইএ/জেডএম