দলীয় উদ্যোগে বদরগঞ্জ উপজেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদে থাকা এই দু’জনের মিল করিয়ে দেওয়া হলেও এক নন তারা। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ একে অপরের বিরুদ্ধে।
এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান অন্তত পাঁচজন। বর্তমান এমপি ডিউক চৌধুরী ছাড়াও রয়েছেন তারই চাচাতো ভাই সাবেক প্রতিমন্ত্রী আনিসুল হক চোধুরীর ছেলে টুটুল চৌধুরী ও শান্ত চোধুরী। পৌরসভা মেয়র উত্তম কুমার সাহা এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কৃষিবিদ বিশ্বনাথ সরকার বিটুর নামও শোনা যায়।
সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, এমপি একদিকে আর টুটুল, শান্ত ও মেয়র উত্তম আরেক দিকে। এমপির বিরুদ্ধে যেমন দুর্নীতির অভিযোগ করেন ওই পক্ষের নেতা-কর্মীরা, ঠিক তেমনি টুটুল, শান্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ- তারা এলাকায় জোর খাটান, ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন। সব মিলিয়ে স্থানীয় রাজনীতিতে সর্বনাশ আওয়ামী লীগেরই।
সিটিং এমপির বিরুদ্ধে অঢেল সম্পদ গড়ার অভিযোগ তুলেছেন তার দলের নেতাকর্মীরাই। এমনকি এমপির নাম ব্যবহার করে তার ব্যক্তিগত সহকারী আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধেও মুফতে টাকা কামানোর অভিযোগ আছে।
আরো অভিযোগ, ডিউক চৌধুরীর সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্ক খুব ভালো; বিভিন্ন কাজ পাইয়ে দেওয়া এবং সহযোগী হিসেবে জামায়াত কর্মীদের সঙ্গে রাখেন তিনি।
উপজেলা ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি, কালুপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শহীদুল হক মানিক এমপির ডান হাত হিসেবে কাজ করেন বলেও এলাকায় বলাবলি হয়। তাকে চেয়ারম্যান করতে এমপির সমর্থনও নাকি ছিল।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি, বিএনপি থেকে এ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবর্তীকে রামনাথপুর ইউনিয়নের ঘাটাবিল শহীদ স্মৃতি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটিতে সভাপতি করতে ডিউক চৌধুরী জাতীয় সংসদের প্যাডে স্বাক্ষর করেন (তারিখ ১২/১০/১৬)। মধুপুর ইউনিয়নের বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. ছিদ্দিক আলীকে হতদরিদ্রের মধ্যে নির্ধারিত মূল্যে কার্ডের মাধ্যমে খাদ্য শস্য বিতরণের লক্ষ্যে ডিলার নিয়োগেও জাতীয় সংসদের প্যাডে স্বাক্ষর করে সুপারিশ আছে তার। তার এসব কাজ বৃহত্তর রাজনৈতিক সম্প্রীতির নজির গড়লেও খোদ দলের মধ্যেই শুরু হয় সমালোচনা।
এদিকে তারাগঞ্জ উপজেলার সয়ার, কুরশা, আলমপুরে আওয়ামী লীগের দুর্গ বিএনপি-জামায়াতকে সমর্থনের কারণে নষ্ট হচ্ছে বলে তৃণমূল নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বদরগঞ্জের মধ্যে রয়েছে বিষ্ণুপুর, লোহানীপাড়া, রামনাথপুর, গোপিনাথপুর।
সাবেক প্রতিমন্ত্রী আনিসুল হক চোধুরীর ছোট ছেলে যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শান্ত বাংলানিউজকে বলেন, এখানে যুবলীগ-ছাত্রলীগের কোনো কমিটিই পূর্ণাঙ্গ নয়। চলছে দুর্নীতি ও বিভেদের রাজনীতি। কারো কথাই কেউ শোনেন না।
এদিকে আনিসুলের বড় ছেলে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বিষ্ণুপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান টুটুল বলেন, আমি মনোনয়ন চাইবো এবং এটা আমারই পাওনা। কারণ এ আসনে আমি নৌকাকে জয় উপহার দেবো। মানুষ ‘সিজার এমপির’ কার্যক্রমে ক্ষুব্ধ; তারা পরিবর্তন চান।
২০১৬ সালের অক্টোবরে রাজধানীর ন্যাম ভবন থেকে টুটুল চৌধুরীসহ এক যুবলীগ নেতাকে অপহরণের চেষ্টা করা হয়। এ নিয়ে সংবাদপত্রে ‘ঢাকায় দুজনকে অপহরণের চেষ্টা, একজন গ্রেফতার’ শিরোনামে খবরও প্রকাশ হয়। এনিয়ে টুটুল চৌধুরীর দাবি, যাকে ধরা হয়েছিল তিনি বর্তমান সংসদ সদস্যের নাম বলেছিলেন। মূলত মনোনয়ন নিয়েই এই অপহরণ চেষ্টার ঘটনা ঘটে।
নৌকা থেকে আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী পাঁচবারের পৌরসভা মেয়র উত্তম কুমার সাহা বাংলানিউজকে বলেন, দল যদি না চায় আমি নির্বাচন করবো না। তবে এখানে বাস্তবতা টুটুল সাহেবের পক্ষে।
নানা অভিযোগের বিষয়ে সংসদ সদস্য ডিউক চৌধুরীর বক্তব্য, উপজেলা আওয়ামী লীগের ৬৫ সদস্যের কমিটি, এরমধ্যে ৬৪ জনই আমার পক্ষে। আসলে রাজার পুত্র রাজা হবেন সেই সুযোগ না পেয়ে, জনবিচ্ছিন হয়ে অভিযোগ তোলা হচ্ছে। দলে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। ১০০ জনে ৯০ জন যদি আমার বিপক্ষে বলেন তবে আমি মনোনয়ন চাইবো না। আর কেউ দুর্নীতির সুস্পষ্ট প্রমাণ দিতে পারলে পদত্যাগ করবো।
এমপি উল্টো অভিযোগ করেন, খোদ জামায়াত তার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের লোকজন লেলিয়ে তাকে হেনস্থা করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
মনোনয়ন পেলে রংপুর-২ আসনের জাতীয় পার্টির (জাপা-এরশাদ) সাবেক এমপি আনিসুল ইসলাম মন্ডল বা মনোনয়নের ভিত্তিতে দলটির আরেক নেতা আসাদুজ্জামান চৌধুরী সাবলুর সঙ্গেই মূল প্রতিদ্বন্বিতা দেখছেন তিনি।
আরও পড়ুন:
দুই ভাইয়ের বিরোধে আ'লীগের সর্বনাশ!
মন্ত্রী হবেন টিপু সেই প্রভাব ভোটে!
** টিপুর বিপক্ষে এমদাদেই ভরসা
একবার খেলে ভোলা যায় না হাড়িভাঙার স্বাদ
ঈদে ট্রেনেই নিশ্চিন্ত যাত্রা
‘এরশাদ কান্দিলে ভোট আছে কিসু’
‘লাইসেন্স দেন-ট্যাক্সও বাড়ান, মারেন শুধু বিড়ি শ্রমিকরে’
মিঠাপুকুর আ’লীগে গ্রুপিং, বিভক্ত ভোটাররা!
‘সুষ্ঠু ভোট হলে এমপি জাপার’
বিএনপির অফিস এখন আম-কলার আড়ৎ!
হাইওয়েতেও ইফতারির পূর্ণ আনন্দ!
বাংলাদেশ জিতবে আশা গ্রামবাসীর!
বাংলাদেশ সময়: ১২১৬ ঘণ্টা, জুন ২২, ২০১৭
আইএ/জেডএম