বিএনপির সাবেক প্রতিমন্ত্রীসহ চারজন, জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্যসহ দু’জন এবং জামায়াতের একক ও একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী-মনোনয়ন প্রত্যাশীর নামও শোনা যাচ্ছে।
সরেজমিনে জানা গেছে, বর্তমান সংসদ সদস্য বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক ও দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার সম্পাদক মুজিবুর রহমান, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটন, বাঁশখালীর সাবেক সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা সুলতানুল কবির চৌধুরীর স্ত্রী লুৎফুর নাহার সুলতান এবং তারই ছেলে দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী মোহাম্মদ গালিব আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে নৌকার মাঝি হতে চান।
স্থানীয়রা বলছেন, গতবার নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী অবহেলিত বাঁশখালীর উন্নয়ন ও উপকূলবর্তী এলাকার বেড়িবাঁধ নির্মাণে উদ্যোগী হন। সরকার এ কাজে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবি) মাধ্যমে প্রায় ২৫১ কোটি টাকার বরাদ্দও দিয়েছে।
বাঁশখালীর উত্তর সীমানা আনোয়ারার তৈলারদ্বীপ সেতুর পর থেকে দক্ষিণ বাঁশখালীর নাপোড়া-প্রেমবাজার পর্যন্ত প্রধান সড়ক সংস্কারের কাজ হয়েছে। যদিও ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু ও মোরার আঘাতে চেচুরিয়া থেকে বাঁশখালী পৌরসভার দক্ষিণ সীমানা পর্যন্ত প্রধান সড়কের বেশ কিছু স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে সীমাহীন দুর্ভোগ নিয়েই যাতায়াত করছেন যাত্রীরা।
মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ‘জাতীয় সংসদে দাবি উত্থাপন করে আমার এলাকার উপকূলবাসীর জন্য বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে ২৫০ কোটি টাকার বরাদ্দ এনেছি। হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স ও এক্স-রে মেশিন এনেছি, বিভিন্ন এলাকায় রাস্তাঘাট সংস্কার ও নির্মাণ, আদালত ভবন ও উপজেলা পরিষদ ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। ইকোপার্কের জন্য ৬ কোটি টাকার বরাদ্দ পেয়েছি। ফায়ার সার্ভিসের ভবন নির্মিত হয়েছে, অফিসের জন্য গাড়ি পেলেই উদ্বোধন করবো। এলজিইডির মাধ্যমে ২৮টি রাস্তার টেন্ডার হয়েছে, বর্ষার জন্য কাজ করা যাচ্ছে না। সম্প্রতি সড়ক সংস্কারের জন্য ৪০ লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। সব মিলে প্রায় ৬০০ কোটি টাকার কাজ চলছে বাঁশখালীতে’।
‘২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে মনোনয়ন পেয়ে আমি এমপি নির্বাচিত হয়েছি। অবহেলিত বাঁশখালীর উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী আমাকে যথেষ্ট সাহায্য-সহযোগিতা ও নির্দেশনা দিচ্ছেন’।
আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা হিসেবে এলাকায় পরিচিত মুজিবুর রহমান চৌধুরী। উপজেলার বিভিন্ন এলাকাজুড়ে বেশ কিছু স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা, রাস্তা-ঘাট সংস্কার ও নির্মাণ, গরিব ও দুস্থদের দান-খয়রাত করে যাচ্ছেন তিনি। নিজের প্রতিষ্ঠিত ১৯টি শিল্প-কারখানায় প্রায় ১৬ হাজার লোকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে আগে থেকেই বেশ জনপ্রিয়।
শিক্ষাক্ষেত্রে মুজিবুর রহমানের বাবা নজির আহমদ মাস্টারের সুনামও নাপোড়া, শেখেরখীল, ছনুয়াসহ বাঁশখালীর মানুষের কাছে সমাদৃত।
মুজিবুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উন্নত দেশ গঠনের যে ভিশন নিয়েছেন, তারই অংশ হিসেবে এলাকার উন্নয়নে নি:স্বার্থভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের পরিবার অতীতেও সাধারণ মানুষের পাশে ছিল। আমিও ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলেছি। পারিবারিক সিদ্ধান্তে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছে রয়েছে। আমি আজীবন সাধারণ মানুষের পাশে থাকতে চাই’।
নৌকার মাঝি হতে বাঁশখালীর বিভিন্ন ইউনিয়নে চষে বেড়াচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ কবির লিটনও। গত সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। এমনকি প্রথম পর্যায়ে তার প্রার্থিতা নিশ্চিত হলেও দলের নির্দেশনায় সরে পড়েন লিটন।
বাঁশখালীতে লিটনের রয়েছে একটি নির্দিষ্ট গ্রুপ। আওয়ামী লীগের একাংশ ও তরুণ নেতাকর্মীদের সমন্বয়ে এটি ‘লিটন গ্রুপ’ নামে পরিচিত। গত রমজানজুড়ে বাঁশখালীর প্রায় সব ইউনিয়নে আখতারুজ্জামান চৌধুরী স্মৃতি সংসদের ব্যানারে ইফতার মাহফিল করে এলাকার সাধারণ মানুষের কাছে গিয়েছেন তিনি।
আবদুল্লাহ কবির লিটন বাংলানিউজকে বলেন, ‘বাঁশখালীর মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আছি। আশা করি, এবার দল তার মূল্যায়ন করবে’।
এবারের নবীন মনোনয়ন প্রত্যাশী তরুণ স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা চৌধুরী মোহাম্মদ গালিব। তার বাবা এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী পরিবারের দীর্ঘ সময়ের পুরোধা সুলতানুল কবিরের জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা ছিল বাঁশখালীসহ পুরো চট্টগ্রামজুড়ে।
বাবার এ গ্রহণযোগ্যতাকে পুঁজি করে এলাকায় এলাকায় গিয়ে মানুষের মনে স্থান করে নেওয়ার চেষ্টা করছেন গালিব। উপজেলা ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছেন।
সুলতানুল কবির চৌধুরীর স্ত্রী লুৎফুর নাহার সুলতান ও তার পরিবারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ওপর মহলের ভালো যোগাযোগ রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং ১৯৯১ সাল পরবর্তী অবহেলিত বাঁশখালীর উন্নয়নে সুলতানুল কবির চৌধুরীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান থাকায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের এ পরিবারের প্রতি রয়েছে সুদৃষ্টি। এক্ষেত্রে সুলতানুল কবির চৌধুরীর স্ত্রী লুৎফুর নাহার সুলতানেরও আগামী নির্বাচনে নৌকার মাঝির হওয়ার সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিচ্ছেন না এলাকাবাসী।
চৌধুরী মোহাম্মদ গালিব বাংলানিউজকে বলেন, ‘স্বাধীনতা সংগ্রামে নিজের জীবন বাজি রেখে বাবা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। এরপর থেকেই আওয়ামী লীগের মূলধারার সঙ্গে থেকে তিনি এলাকার উন্নয়নে কাজ করেন। বাবার নীতি, আদর্শকে সামনে রেখে এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। বাবার মতোই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আমি মূল ধারার রাজনীতি বিশ্বাসী। বাঁশখালীর উন্নয়নে আমি মনোনয়ন চাইবো’।
‘বাবারও ইচ্ছে ছিল, ছেলেদের মধ্যে কেউ এমপি হোক। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে চাইবেন, সেটিই হবে’।
তার বাবার প্রতি বাঁশখালীর মানুষের সহানুভূতি ও ভালোবাসা রয়েছে বলেও জানান গালিব।
তবে আওয়ামী লীগ এবারও মহাজোটগতভাবে নির্বাচন করলে একক প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও সাবেক সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির প্রেডিডিয়াম সদস্য মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী মনোনয়ন পাবেন বলে ধারণা অনেকের। শিক্ষার উন্নয়নে এলাকায় মহিলা কলেজ, মাদ্রাসা ও টেকনিক্যাল কলেজ স্থাপন করেছেন তিনি।
বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে এগিয়ে আছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী জাফরুল ইসলাম চৌধুরী।
জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। তবে তিনি বাংলানিউজকে জানান, নাগরিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে সর্বস্তরের মানুষের পক্ষে নির্বাচনে অংশ নেবেন।
সুবল বড়ুয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, জুলাই ১৬, ২০১৭
এসবি/টিসি/এএসআর