তারা বলছেন, নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী নির্বাচিত হয়ে এলাকায় খুব বেশি উন্নয়ন কাজ করতে পারেননি। অধিকাংশ সময় ঢাকায় অবস্থানের কারণে এলাকার মানুষ প্রয়োজনে কাছে পাননি তাকে।
তবে সংসদ সদস্য নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর দাবি, নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার উন্নয়নকাজ করেছেন তিনি নিজের সংসদীয় আসনে। অনেক বড় বড় প্রকল্পের কাজ চলমান রযেছে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, এসব কাজ দলীয়ভাবে যোগাযোগের মাধ্যমে করা হয়েছে।
এদিকে নির্বাচনী আলাপ শুরু হলেও নির্বাচনী রোডম্যাপ চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা বলছেন, এবার জোটের সঙ্গে থেকে নির্বাচন করলেও অত্যন্ত সতর্কভাবে প্রার্থী নির্বাচিত করবেন দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ফলে ফটিকছড়িতে প্রার্থীর বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
এ অবস্থায় ফটিকছড়ির সম্ভাব্য প্রার্থীরা মাঠে নেমেছেন। দলের শীর্ষ পর্যায়ে ব্যক্তিগত যোগাযোগ শুরু করেছেন। রাজনৈতিক ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন তারা। সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন নিজের অবস্থান তুলে ধরতে।
মনোনয়ন দৌড়ে আছেন ২০০৮ সালে পরাজিত হওয়া এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে খদিজাতুল আনোয়ার সনি, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুজিবুল হক, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম বাবু, ফখরুল আনোয়ার ও আমেরিকা প্রবাসী মো. শাহজাহান।
ফটিকছড়িতে বিএনপির তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সহ-সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী, ডা. খুরশিদ জামিল, মির্জা আকবর, সাবেক বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজি, অ্যাডভোকেট বদরুল আনোয়ার প্রার্থী হতে পারেন বলে আলোচনা আছে।
তবে ওই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসি হওয়া সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবার থেকেও কেউ মনোনয়ন চাইতে পারেন বলে মনে করছেন অনেকে।
১৪ দলীয় জোটের শরিক তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান বর্তমান সংসদ সদস্য নজিবুর বশর মাইজভান্ডারী ফটিকছড়ি উপজেলার বাসিন্দা হওয়ার কারণে আসনটি জোটকে দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। দলীয় প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে এটিএম পেয়ারুল ইসলাম ও খদিজাতুল আনোয়ার সনির মধ্যে ফাইট হতে পারে বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।
ফটিকছড়ির আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সর্বশেষ দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। দলের অথবা জোটের প্রার্থী দিলে তার পক্ষেই কাজ করবেন। স্থানীয় রাজনীতিতে কোন্দল থাকলেও নির্বাচনের সময় সব ভুলে কাজ করবেন।
ফটিকছড়ি ধুরুং এলাকার বাসিন্দা হাসান শাহরিয়া বলেন, বর্তমান সংসদ সদস্যের কাছ থেকে আমরা কিছুই পাইনি। কারণ উনি এলাকায় থাকেন না। প্রয়োজনের সময় যদি না পাই তবে নির্বাচিত করে লাভ কী। যাদের সবসময় কাছে পাই তাদেরই মনোনয়ন দেওয়া হোক। আমরা দলীয় প্রার্থী চাই।
জাতীয় পর্যায়ে রাজনীতি করার কারণে এলাকায় খুব বেশি সময় দিতে পারেন না উল্লেখ করে নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, ফটিকছড়ির কথা চিন্তা করে জোট করিনি। কেবল ফটিকছড়ির চিন্তা করে কথা বললে তা আমার জন্য অপমানজনক হবে।
তিনি বলেন, ১৪ দলীয় জোটের হয়েই নির্বাচন করব। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ১৪ দলের পরিধি আরও বাড়তে পারে। তবে ১৪ দল থেকে কেউ বাদ যাবে
না এটা চূড়ান্ত। প্রধানমন্ত্রী তালিকা চেয়েছেন। তালিকা দিয়েছি। গতবারের চেয়ে বেশি আসন চেয়েছি। আলাপ-আলোচনা চলছে।
এলাকার উন্নয়নের বিষয়ে তিনি বলেন, বিগত যে কোনো সময়ের তুলনায় বেশি উন্নয়ন হয়েছে। এসবের রেকর্ড আছে। সমালোচনা করলে আমি খুশি। কারণ ভুল শোধরাতে পারব।
জোটের প্রার্থী না থাকলে মনোনয়ন চাইবেন জানিয়ে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এটিএম পেয়ারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, মানুষ রাজনীতি করে শান্তিপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব না থাকায় তা হচ্ছে না। ফলে উন্নয়নও হচ্ছে না। এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছি। জগণের সাথে আছি। থাকব।
উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ফটিকছড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম বাবু বলেন, জনগণ আমাকেও নির্বাচন করতে বলছে। তাদের কথা উড়িয়ে দিতে পারছি না। আবার যারা রাজনীতি করে তাদের জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার ইচ্ছে থাকে। তবে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হলো, দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। যত বিভক্তিই থাকুক, দলের প্রার্থীর পক্ষেই কাজ করব।
সাবেক সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের মেয়ে খদিজাতুল আনোয়ার সনি বলেন, জোটের প্রার্থীর জন্য নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলাম। জোটের প্রার্থী না থাকলে আমি মনোনয়ন চাইব।
মো. মহিউদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
বাংলাদেশ সময়: ২০১০ ঘণ্টা, জুলাই ১৮, ২০১৭
এমইউ/টিসি/জেডএম