চিত্রটা রাজশাহী মহানগর জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের বাইরের। নগরীর গণকপাড়ায় অবস্থিত এ কার্যালয়ের ভেতরের চিত্র আরও করুণ।
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দলগুলোর হালহকিকত জানতে বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) সন্ধ্যায় জাপার মহানগর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢুঁ মারা। তবে কার্যালয়ে প্রবেশ করতেই দৃষ্টিগোচর হয় ভবনের ভেতরের অবস্থা।
পলেস্তার ওঠে যাওয়াই ভবনটির একমাত্র ‘খুঁত’ নয়, পুরো ভবনের দেয়ালে ঝুলছে মাকড়সার বাসা। অফিসের ভেতরের দিকে যে জায়গাটা খালি পড়ে রয়েছে, তা পুরোই ব্যবহার অনুপযোগী। দ্বিতল ভবনের নিচতলায় অফিস হলেও ময়লা-আর্বজনা জমে দ্বিতীয়তলা পুরোপুরি ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দেখে মনে হতে পারে, বহুদিন বুঝি সেখানে কোনো জনমানুষের পা পড়েনি।
আবার নিচতলায় সভা-সেমিনার করার জন্য মাঝখানে যে খালি জায়গাটুকু ছিল, ছাদের পলেস্তারা খসে সে জায়গাটুকুও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
পাশেই খুপড়ির মতো কক্ষ দেখে ভেতরে প্রবেশ করলেও তাতে বিদ্যুতের কোনো সংযোগ নেই। তবে আধো আলোতে বোঝা গেলো, এখানে অবস্থানের মতো পরিবেশ নেই। আরেকটি কক্ষে সংক্ষিপ্ত আকারে সভা আয়োজনের রেশ বোঝা যায় সেখানে ৫-৭টি চেয়ার এলোমেলো করে রাখা দেখে।
ওই কক্ষে একটি দেয়ালে শোভা পাচ্ছে পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সঙ্গে তার ছেলের স্মৃতিবন্দি করা ছবি। কিন্তু এ ছবিটিও পড়ে আছে অযত্নে। পাশেই জাতীয় পার্টির প্রতীক ‘লাঙল’ পড়ে আছে ‘হাল ছাড়া’ অবস্থায়। যেন দেখার কেউ নেই।
অথচ মাত্র আড়াই মাস আগে মে মাসে দলীয় কাউন্সিলে এসে স্বয়ং এরশাদই ঘুরে গেছেন মহানগর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এ অফিস। নিজ চোখে দেখেছেন অফিসের করুণ দশা।
গত ২০ বছর ধরে এই অফিসের পিয়নের দায়িত্ব পালন করছেন আবুল কালাম আজাদ। অফিসের প্রতি তার মায়া বোঝা যায়। কিন্তু তার সঙ্গে আলাপে জানা যায়, প্রথম থেকে এটি জাতীয় পার্টির অফিস হলে অবস্থা খুব নাজুক। দেয়াল ও ছাদ থকে পলেস্তার খুলে খুলে পড়ছে। হয়ে পড়ছে ব্যবহার অনুপযোগী।
দলের প্রতি ভালোবাসা থেকেই ২০ বছর ধরে কাজ করে যাওয়া আবুল কালাম এ সময় নিজের দুরাবস্থার কথাও অকপটে জানান।
কথা হয় অফিসে থাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান ডালিমের সঙ্গে। সবকিছুর পেছনে কমিটি না থাকাই উঠে এলো তার কথায়। তিনি বলেন, ‘আমরা ১১১ সদস্যের কমিটির একটি তালিকা কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। কিন্তু কেন্দ্র থেকে এ বিষয়ে কেনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এটি নিয়ে সবার মধ্যে হতাশা কাজ করছে। ’
এ সময় উপস্থিত অন্যরা বলেন, ‘দলের সভাপতি শাহাবুদ্দিন বাচ্চুও ১১১ সদস্যের একটি কমিটি দিয়েছেন। যেখানে অনেকেরই কোনো অস্তিত্ব নেই। আর তিনিওতো দেশে নেই। তাহলে কিভাবে চলবে?
তবে এ সময় শাহাবুদ্দিন বাচ্চুর পক্ষের কোনো নেতাকর্মীকে অফিসে পাওয়া যায়নি।
তাদের দাবি, নেতাকর্মীরা নিয়মিত কার্যালয়ে আসা-যাওয়া করেন। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কার্যালয় খোলা থাকে। আলোচনার শুরুতে দু’তিন জন থাকলেও কথা গড়াতেই মহানগর শাখার জনাদশেক নেতার সরব উপস্থিতি জানান দেয়, দেশের রাজনীতিতে আবার চাঙ্গা হতে চায় জাতীয় পার্টি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১৭
জেডএস/এইচএ/