যেখানে আগে কাঁচা রাস্তা পর্যন্ত ছিল না, সেখানে এখন ইউরোপ আমেরিকার আদলে পাকা সড়ক। ভাঙা-চোড়া রাস্তার বদলে কার্পেটিং রাস্তা।
চারঘাট ও বাঘা’র এই আমূল পরিবর্তনের ‘নায়ক’ হচ্ছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। সঙ্গত কারণেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন তিনিই পাচ্ছেন।
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্নেহভাজন শাহরিয়ার আলমের দলীয় মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে কোনো সংশয় না থাকলেও নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে বলে মনে করেন খোদ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।
কারণ, বাঘা-চারঘাট আসনটি বরাবরই ছিল বিএনপির দখলে। ধানের শীষের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিতি এ আসনে ২০০৮ সালে নৌকার গণজোয়ারের মধ্যে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শাহরিয়ার আলম।
আর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তো ভোটযুদ্ধেই অবতীর্ণ হতে হয়নি তাকে। এর আগে সবগুলো নির্বাচনে বাঘা-চারঘাট আসনে বিএনপিই জিতেছে।
সুতরাং আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার আনন্দে সুখনিদ্রার সুযোগ নেই শাহরিয়ার আলমের। জনপ্রিয়তার দিক থেকে চারঘাট ও বাঘায় নিজ দলের সবাইকে ছাড়িয়ে গেলেও ভোটের মাঠে বিএনপিকে অনায়াসে টপকে যাওয়ার মতো অবস্থান এখনো তৈরি করতে পারেননি শাহরিয়ার আলম-স্থানীয় ভোটারদের মূল্যায়ন এমনটিই।
অধিকন্তু এবার তাকে লড়তে হবে চারঘাট উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আবু সাঈদ চাঁদের বিরুদ্ধে। স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাবশালী নেতা চাঁদই হচ্ছেন ধানের শীষের প্রার্থী। এ আসনে আওয়ামী লীগে যেমন শাহরিয়ারের কোনো বিকল্প নেই, তেমনি বিএনপিতেও আবু সাঈদ চাঁদের কোনো বিকল্প নেই।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে সমানতালে লড়তে হলে বিএনপিকে অবশ্যই আবু সাঈদ চাঁদের কথা ভাবতে হবে। বিএনপির আরো দু’জন আগ্রহী প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট কবির হোসেন অথবা বাঘা বিএনপির সাবেক সভাপতি মানিক খানকে মনোনয়ন দেওয়া হলে শাহরিয়ারের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকতে পারবেন না।
তেমনিভাবে চারঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু সাঈদ চাঁদের সঙ্গে সমানতালে লড়তে হলে আওয়ামী লীগকেও শাহরিয়ার আলমের কথাই ভাবতে হবে। আওয়ামী লীগের আরো যে তিনজন আগ্রহী প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য রায়হানুল হক রায়হান, লায়েক উদ্দিন লাভলু বা বাঘা পৌরসভার মেয়র আক্কাস আলীকে মনোনয়ন দেওয়া হলে বিএনপির প্রার্থী আবু সাঈদ চাঁদের সঙ্গে লড়াই করে টিকে থাকতে পারবেন না।
স্থানীয় ভোটারদের মতে, এ ক্ষেত্রে যে দলটি প্রার্থী নির্বাচনে ভুল করবে, সে দলটিই একপেশে হারা হারবে। কারণ, বাঘার ৮০ ভাগ ভোট নিজের বাক্সে ভরার মতো জনপ্রিয়তা আছে শাহরিয়ারের। অন্যদিকে চারঘাটের ৮০ ভাগ ভোট নিজের বাক্সে ভরার জনপ্রিয়তা আছে আবু সাঈদ চাঁদের। অর্থাৎ এই দুইজনের মধ্যে লড়াইটা হবে শেয়ানে শেয়ানে।
তবে এত হিসাব-নিকাশের পরও ব্যাপক উন্নয়নের সিঁড়ি বেয়ে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ‘চাঁদ’-কে টপকানোর ব্যাপারে আশাবাদী শাহরিয়ার আলম। তার অনুসারীদের মধ্যেও এমন আশার ঝিলিক লক্ষ্য করা গেছে।
বাঘার আড়ানীতে শাহরিয়ার আলমের বাড়ির আঙ্গিনায় কথা হয় কবির হোসেনের সঙ্গে। প্রায় শতবর্ষী কবির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, শাহরিয়ার আলম এলাকায় যে উন্নয়ন করেছেন, তাতে উনি যদি ভোটে দাঁড়ান, কেউ উনার ধারের কাছে আসতে পারবে না।
বাঘা বাজারে কথা হয় আওয়ামী লীগ কর্মী মাহমুদুল হকের সঙ্গে। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, গত দুই টার্মে শাহরিয়ার যত কাজ করেছেন, বিগত দিনের কোনো এমপি এত কাজ করেননি। সুতরাং তিনি যদি নির্বাচন করেন, তাহলে অনায়াসে জিতে আসবেন।
অপরদিকে চারঘাটের বানেশ্বর মোড়ের বাসিন্দা বিএনপি কর্মী মোস্তাফিজুর হক মুকুল বাংলানিউজকে বলেন, আবু সাঈদ চাঁদ দাঁড়ালে শাহরিয়ার আলমের চেয়ে ৫০ হাজার ভোট বেশি পাবেন।
নিজ বাড়ির ড্রয়িংরুমে বসে আবু সাঈদ চাঁদ বাংলানিউজকে বলেন, দল আমাকে মনোনয়ন দিলে অনায়াসে জিতে আসতে পারবো। চারঘাটের ৮০ ভাগ ভোট আমার। বাঘাতেও আমার ধারের কাছে আসতে পারবেন না শাহরিয়ার আলম। আর আমি নির্বাচনে দাঁড়ালে ভোট কারচুপির সাহস কেউ দেখাবে না।
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একজন আগ্রহী প্রার্থী বাংলানিউজকে বলেন, চান চেয়ারম্যান (আবু সাঈদ চাঁদ) ভোটে দাঁড়ালে শাহরিয়ার আলমের জেতা কঠিন হয়ে যাবে। কারণ, চারঘাটের ধানের শীষের সঙ্গে নৌকার ভোটের ব্যবধান হবে অনেক।
বাংলাদেশ সময়: ০৭০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ১২, ২০১৭
এজেড/এসআই