তাই আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে জিততে হলে কোনো দলের সামনেই জোটের বিকল্প নেই বলে মনে করেন সাধারণ কর্মীরা। আর আওয়ামী লীগ জোটে জাতীয় পার্টিকে ভেড়াতে পারলে জেতার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে তাদের।
‘গাইবান্ধায় জামায়াত আর সংগঠিত হতে পারবে না’
আসনটিতে আওয়ামী লীগ-বিএনপির রিজার্ভ ভোট প্রায় সমান। এরপরই রয়েছে জামায়াতের অবস্থান। তার পরে রয়েছে বর্তমান এমপির দল ওয়ার্কার্স পার্টি। আর বিশাল একটি অংশ কোনো দলের সাপোর্টার নন, কিন্তু আওয়ামী লীগ বিরোধী।
অন্যান্য এলাকার তুলনায় আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোটের সংখ্যা রাজশাহীতে একটু বেশি বলে দাবি করেছেন অনেকে। বিশেষ করে যারা ভারত ছেড়ে এসে বাংলাদেশে বাসিন্দা হয়েছেন তারা বেশিরভাগই আওয়ামী লীগকে পছন্দ করেন না।
আর ভারত থেকে চলে আসা ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৬০ শতাংশ। যে কারণে স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচনেও (১৯৭৩ সালে) আওয়ামী লীগ প্রার্থী এইচএম কামরুজ্জামান অপেক্ষাকৃত অখ্যাত প্রাথীর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন এখানে। ওই নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন জাসদের প্রার্থী মইনউদ্দিন আহমেদ মানিক।
শুধু আওয়ামী বিরোধী মানসিকতায় কারণে এখানে সংসদ নির্বাচনে বারবার মার খেয়েছে নৌকা। তবে ২০০৮ সালে জোটগতভাবে নির্বাচন হলে ওয়ার্কার্স পার্টির মাধ্যমে আসনটি পুনরুদ্ধার করে আওয়ামী লীগ। এবারও তারই প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা উজ্জল। কেন্দ্র নাকি সে রকমই সিগন্যাল দিয়ে রেখেছে।
সদর আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হওয়ার সবচেয়ে বড় দাবিদার ছিলেন সাবেক মেয়র এইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। কিন্তু তাকে সিটি করপোরেশনে প্রার্থী করার গ্রিন সিগন্যাল দিয়ে রাখা হয়েছে। স্থানীয় নেতারাও তাকে ফের মেয়র প্রার্থী হিসেবেই ভাবছেন। কাজেই সদর আসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থিতা নিয়ে জটিলতা নেই বললেই চলে।
কিন্তু তারপরও জয়ের বিষয়ে ২০০৮ সালের মতো নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না কেউই। এর কারণ হচ্ছে, এবারের নির্বাচনে একাট্টা হয়ে মাঠে নামার বিষয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। ব্যবধান বেড়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে। একটি গ্রুপ নানা কারণে নাখোশ বর্তমান এমপি ফজলে হোসেন বাদশার প্রতি। তাদের অভিযোগ, ফজলে হোসেন বাদশা তাদের কোন কথাই রাখেননি। মূল্যায়ন করেননি আওয়ামী লীগের লোকজনকে। তাই তারা এবার বাদশার পক্ষে কাজ করতে চান না।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার তো ঘোষণা দিয়েই রেখেছেন, যদি ফজলে হোসেন বাদশাকে আসনটি ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে তিনি প্রয়োজনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন।
অন্যদিকে ওয়ার্কার্স পার্টির কর্মীদের কারো কারো মধ্যে এক ধরনের হতাশা দেখা গেছে। তারা আশা করেছিলেন, তাদের দলের লোক এমপি হয়েছে, তাদের ভাগ্যেরও কিছুটা পরিবর্তন হবে। বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাবেন, কিন্তু সে আশায় গুঁড়েবালি।
ওয়ার্কার্স পার্টির এই এমপি সততা রক্ষা করতে গিয়ে নিজ দলের মধ্যেই এক ধরনের হতাশা তৈরি করেছেন। যে কর্মীরা রাত-বিরাত খেটে তাকে নির্বাচিত করেছিলেন তারা অনেকে এবার যদি মাঠে না নামেন তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
ওয়ার্কার্স পার্টির ওয়ার্ড পর্যায়ের এক নেতা বলেন, বাদশা ভাই এমপি হয়েছেন, দশ তলা ভবন করেছেন। ঢাকায় বাড়ি করেছেন, আমাদের কি হয়েছে। আমরা আগেও ফুটপাতে দোকান চালাতাম, এখনও তাই। কোনো রকম সুযোগ সুবিধা পাইনি, কেনো তার জন্য ঝুঁকি নেবো।
তবে টানা সাড়ে আট বছর সংসদ সদস্য হিসেবে অনেকটাই ইমেজ ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন বাম ঘরানার এই সংসদ সদস্য। নগরীর সাহেববাজার, বিনোদপুর, কাজলা, তালাইমারিসহ বিভিন্ন এলাকায় জনগণের সঙ্গে কথা বলে এমন অভিমত পাওয়া গেছে। তারা এমপি সম্পর্কে ভালো না বললেও কেউ বাজে কোন মন্তব্য করেন নি।
ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী মহানগর সভাপতি লিয়াকত আলী লিপু বাংলানিউজকে বলেন, বাদশা ভাইয়ের সম্পর্কে কেউ বাজে মন্তব্য করতে পারবে না। তিনি যা করেছেন স্বচ্ছতার সঙ্গে। তার আমলেই প্রথম রাজশাহীবাসী টিআর, কাবিখা নামে কিছু আছে বলে জানতে পেরেছে। আগে তো সব লুটপাট হতো।
এমন কোনো মসজিদ, মাদ্রাসা কিংবা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে তার উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এ ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতিও হয়নি তার দ্বারা। আমাদের নেতার স্কুল বলে বেশি সুবিধা পেয়েছে এমন নজির নেই।
তবে তিনি স্বীকার করেন, যত ভালোই করুক এখানে এককভাবে জেতার মতো অবস্থা নেই ওয়ার্কার্স পার্টির। আবার ওয়ার্কার্স পার্টিকে বাদ দিয়ে এককভাবে জিততে পারবে না আওয়ামী লীগও। ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী একটু বেশি সুবিধা পাবেন। কারণ আওয়ামী লীগ বিরোধী ভোট পক্ষে টানতে পারবেন। কিন্তু সরাসরি আওয়ামী লীগের প্রার্থী এসব ভোট টানতে পারবেন না। এতে পরাজয়ের শঙ্কা বেড়ে যাবে।
লিয়াকত আলী লিপু দাবি করেন, এ আসনে আওয়ামী লীগের ৩১ শতাংশ, বিএনপির ৩০ শতাংশ, জামায়াতের ১৮ শতাংশ, আর ওয়ার্কার্স পার্টির ১৪ শতাংশ সমর্থন রয়েছে। জামায়াত-বিএনপি ভার্সাস আওয়ামী লীগ-ওয়ার্কার্স পার্টি হলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে।
কিন্তু রাজশাহী সদর আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু বিজয় নিশ্চিত বলে দাবি করেছেন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে জোট প্রার্থী হিসেবে বাদশা এখানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০৮ সালে কারচুপি করে আমাদের বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। আরেকটি তো (২০১৪) আমরা বর্জন করেছি। এখানে ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে ১ লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়েছিলাম। যেই প্রার্থী হোক, এবার নির্বাচনে ২০০১ সালের মতো ফল হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০১৭
এসআই/জেডএম