অনেকে তো সরাসরি গিনির সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে বলছেন, তাকে প্রার্থী করা হলে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হবে। এ আসন ধরে রাখতে হলে নতুন প্রার্থী দিতে হবে।
প্রতিশ্রুত উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড না হওয়া, এলাকায় অবস্থান না করা, আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে স্বজনদের নিয়ে ও নিজের মতো করে বলয় তৈরির কারণেই এ শঙ্কা তৈরি হয়েছে বলেও দাবি করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
গাইবান্ধা জেলা সদর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরের রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামটি যেন প্রদীপের নিচেই অন্ধকার! শহরের সঙ্গে যোগাযোগের প্রধান সড়কটি মাটির। বর্ষা শুরু হলে যানবাহন দূরের কথা, হেঁটে চলাচলও কঠিন হয়ে পড়ে।
গ্রামটিতে যাত্রী নিয়ে যেতে রাজি হন না শহরের ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা ও ইঞ্জিন চালিত ভ্যান চালকরাও। তাদের দাবি, ‘যে কাদা, ওখানে যতো টাকাই দেন, কেউ যাবে না। একদিন বৃষ্টি হলেই যাওয়া যায় না, সেখানে টানা কয়েকদিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। ওখানে যাওয়া মানে বিপদ ডেকে আনা’।
শহর থেকে তিন গাছতলা এলাকা পর্যন্ত পাকা রাস্তাটি আগে থেকেই ছিল। এরপর বামে টার্ন নিতেই শুরু হওয়া কাঁচা রাস্তায় কাদা-পানি মাড়িয়ে যেতে হয় রাধাকৃষ্ণপুর গ্রামে। সরেজমিনে গিয়ে কয়েকজন বাইসাইকেল চালককে এখানে এসে সাইকেল থেকে নেমে কষ্টে পার করতে দেখা গেছে।
রাধাকৃষ্ণপুর পূর্বপাড়ায় গিয়ে দেখা গেছে, মারাত্মক ঝূঁকিপূর্ণভাবে বাঁশের খুঁটি ও গাছের ডাল ব্যবহার করে নিজেদের বাড়িতে বিদ্যুতের তার টেনেছেন লোকজন।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে এ গ্রামে এসে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও রাস্তা পাকা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মাহাবুব আরা গিনি। কিন্তু এমপি হওয়ার পরে গত সাড়ে আট বছরেও সে প্রতিশ্রুতি পূরণ করেননি। ফলে তার প্রতি ক্ষোভ নিয়ে বসে আছেন স্থানীয়রা।
বাসিন্দাদের নানা রকম প্রশ্নবানে জর্জরিত হচ্ছেন গ্রামের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। কিন্তু কোনো জবাব নেই তাদের কাছে।
গ্রামের বাসিন্দা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা মধু মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘গিনি আপার ভোট করে এখন বিপদে আছি। গ্রামের মানুষ কয়, তোমরা না বিদ্যুৎ দিতে চাচনেন। কোনটে সে বিদ্যুৎ, রাস্তাওতো হলো না’।
আওয়ামী লীগের কর্মী ইব্রাহিম খলিল ও সৈয়দ সামছুল আলমও বলেন, ‘গিনিকে মনোনয়ন দিলে আওয়ামী লীগের পাস করা কঠিন হবে’।
সৈয়দ শামসুল আলমের দাবি, এবারও আওয়ামী লীগ মাহাবুব আরা বেগম গিনিকে মনোনয়ন দিলে অনেকে নিজের ভোট দেবেন, কিন্তু তার পক্ষে কাজ করবেন না। কারণ, তাদের মুখ রাখেননি বর্তমান এমপি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গিনির ছেলেবেলার খেলার সাথী বলেন, ‘একদিন গিয়েছিলাম এমপির বাসায়। আমাকে দেখেই টিপ্পনি কেটে বলেছিলেন, কিরে, তোরাতো অন্য লাইনের লোক। আমার বাসায় কেন এসেছিস? লজ্জা-ক্ষোভ নিয়ে ফিরে এসেছি। যে কাজের জন্য গিয়েছিলাম, সে প্রসঙ্গই আর তুলিনি। আমার মতোই অনেকের এ ধরনের তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে’।
ওই খেলার সাথীর প্রশ্ন, ‘এমপির কাছে কি অন্যদের যেতে নেই? তিনি যখন এমপি নির্বাচিত হন, তখনতো সবার নেতা হয়ে যান’।
গিনির বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হচ্ছে- এমপি হওয়ার আগে তিনি কখনোই রাজনীতি করেননি, এখনো রাজনীতি বোঝেন না। প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা লুৎফর রহমানের মৃত্যুর পর ২০০৮ সালে হঠাৎ করেই তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাদ দিয়ে পছন্দের লোক ও আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে নিজস্ব বলয় তৈরি করেন, জুটে যান হাইব্রিডরাও। এতে ক্ষুব্ধ ত্যাগী নেতাকর্মীরা তার পেছন থেকে সরে গেছেন। দূরত্ব তৈরি হয়েছে জেলা আওয়ামী লীগসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের সঙ্গেও।
মাহাবুব আরা গিনি অবশ্য সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, ‘এবারও আমি বিপুল ভোটে নির্বাচিত এমপি। যারা আমার বিরুদ্ধে এসব কথা বলেন, তারা মিথ্যা বলেন। এসব কথার কোনো ভিত্তি নেই। আমি দলের লোকদের নিয়েই চলছি। কারো কারো অন্যায় আবদার পূরণ করিনি বলে ক্ষেপে গেছেন। আমি কি কাউকে অনিয়মে সহায়তা করতে পারি?’
রাধাকৃষ্ণপুর গ্রাম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ওখানে বিদ্যুতের দুই সংস্থার মধ্যে রশি টানাটানি চলায় কাজ হয়নি। এতে আমার দোষ কোথায়? রাস্তা হয়নি, হবে’।
‘দুই কিলোমিটার রাস্তার জন্য সাড়ে আট বছর কি যথেষ্ট নয়?’- প্রশ্নের জবাব অবশ্য না দিয়ে এড়িয়ে যান এমপি গিনি।
নিজের উন্নয়নমূলক কাজের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘আমি যদি কাজ না করে থাকি, তাহলে ফান্ড আনল কে? লোকজন আমাকে এখনও ভালোবাসেন’।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৫
এসআই/এএসআর