ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

জটিল-স্পর্শকাতর আসনে হাইভোল্টেজ ক্যাম্পেইন!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ৭, ২০১৭
জটিল-স্পর্শকাতর আসনে হাইভোল্টেজ ক্যাম্পেইন! বিভিন্ন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী বর্তমান এমপি মো. মজিবুল হক চুন্নু, ড. মিজানুল হক, ডা. মাহবুব ইকবাল, নাসিরউদ্দিন আওলাদ, শেখ কবির আহমেদ, জাহাঙ্গীর মোল্লা, অ্যাডভোকেট জালাল মোহাম্মদ গাউস ও অ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হক মাখন

করিমগঞ্জ-তাড়াইল ঘুরে: ‘ভোড কবে অইবো জানি না, তয় আমরার এইহানে ভোডাভুডির ধাক্কা শুরু অইয়া গ্যাছে’।

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার নানশ্রী গ্রামের ইয়াকুব মিয়া এভাবেই বোঝালেন যে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অনেক আগেই ভোটের সাজ সাজ রব তাদের কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনে। চলছে হাইভোল্টেজ ক্যাম্পেইন, ঝড়ের গতিতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন দলের ১৫ জনের মতো মনোনয়ন প্রত্যাশী।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রচারণায় মুখর ও জমজমাট দুই উপজেলাই ভোটের আলোচনায়ও সরগরম। পথে-ঘাটে, হাটে-বাজারে ডিজিটাল পোস্টার-ব্যানারে  ব্যাপক প্রচারণা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগ-বিএনপির হাই প্রোফাইল নেতারা।

গ্রামে গ্রামে নিজেদের কর্মী-সমর্থক গ্রুপ তৈরি করে নিয়মিতই তাদের মাধ্যমে সংযোগ রক্ষা করছেন। উপস্থিত হচ্ছেন নিজেরাও।
 
মহাজোটের হয়ে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত বর্তমান সংসদ সদস্য ও শ্রম প্রতিমন্ত্রী মো. মজিবুল হক চুন্নুকে এবার ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামী লীগ। সরকারি দলের দাবি, জোটগত সমঝোতায় সাংগঠনিক দুর্বলতা ও ভঙ্গুরদশা তৈরি হয়েছে। ক্ষমতায় থাকলেও স্থানীয় এমপি দলের না হওয়ায় সুবিধাজনক পরিস্থিতিতে নেই নেতাকর্মীরা।

মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও চান, তাদের মধ্যে থেকেই কাউকে প্রার্থী করা হোক। দল রক্ষায় আসনটিকে ফের নৌকার কব্জায় রাখতে বদ্ধপরিকর তৃণমূলও।

অন্যদিকে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. ওসমান ফারুকের মনোনয়ন প্রায় চূড়ান্তই ছিল। কিন্তু মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরুর পর রাজনীতি থেকেই সরে দেশত্যাগ করেছেন তিনি। এভাবেও আসনটি ফিরে পেতে আ’লীগের সামনে সুবর্ণ সুযোগ তৈরি হয়েছে। বিএনপির নতুনদের সামনেও প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা হাতছানি দিচ্ছে।

এদিকে বড় দু’দলেই প্রার্থী নির্বাচনে চলমান সিদ্ধান্তহীনতা ও অস্পষ্টতায় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না কেউই। একাধিকবার শেষ মুহূর্তে প্রার্থী বদল হয়েছে জোটগত ও অন্যান্য কারণে। অতীতের এ তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন দৌড়ে টিকে থাকতে ও মাঠ না ছাড়ার সঙ্কল্পে পুরো এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন প্রত্যেকেই।

ভোটার ও রাজনৈতিক বোদ্ধারা বলছেন, এসব প্রেক্ষাপটেই আগাম নির্বাচনী জ্বরে প্রবলভাবে কাঁপছে কিশোরগঞ্জ-৩। প্রচারণা ও অনিশ্চয়তায় বেশ জটিল-স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে। টান টান উত্তেজনা-উত্তাপে সকলের মনোযোগও কেড়েছে। ভোটের দিন যতোই এগিয়ে আসবে, ততোই উত্তেজনা বাড়ারও স্পষ্ট ইঙ্গিত মাঠে-ময়দানে।

আওয়ামী লীগের ৮/১০ জন মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে পাঁচজনকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন সকলেই।

জ্যেষ্ঠ নেতা সাবেক সংসদ সদস্য ড. মিজানুল হক গ্রহণযোগ্য, ভোটের মাঠেও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী।

জটিল-স্পর্শকাতর কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে হাইভোল্টেজ  ক্যাম্পেইন! ছবি: বাংলানিউজজেলা আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহবুব ইকবালের পক্ষেও সমর্থন অনেক। স্পষ্টবাদী এ নেতার পক্ষেই তরুণ কর্মী-সমর্থকদের সমর্থন বেশি- দাবি অনেকের।  

কোথাও কোথাও করিমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক নাসিরউদ্দিন আওলাদের অবস্থান বেশ ভালো। একাধিকবার সংসদ ও উপজেলায় দলীয় মনোনয়ন পেলেও শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতে পারেননি। এজন্য সাধারণ ভোটারদের মাঝে তার প্রতি সহানুভূতি তৈরি হয়েছে বলেও অনেকের ধারণা।

তরুণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোজাম্মেল হক মাখনের পক্ষেও দলের একটি অংশ বেশ সিরিয়াস। প্রচারে-জনসংযোগেও যথেষ্ট সাড়া জাগিয়েছেন এই মনোনয়ন প্রত্যাশী। নতুন প্রজন্ম তার সঙ্গে আছে বলেই দাবি সমর্থকদের।

জাসদের কর্নেল তাহেরের আত্মীয় শেখ কবির আহমেদও মাঠে আছেন।

অন্যদিকে ভোটাররা বলছেন, ড. ওসমান ফারুকের অনুপস্থিতিতে বিএনপি দুর্বল হয়েছে, যা নতুন প্রার্থীর পক্ষে সহসা কাটিয়ে ওঠা সহজ হবে না। তবে দলটির দাবি, তিনি না এলেও আসনটি পুনরুদ্ধার করতে পারবে।

ধানের শীষ পেতে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জালাল মোহাম্মদ গাউস।

অনেকের পছন্দ জাহাঙ্গীর মোল্লাকেও। ছাত্রদল-যুবদলের রাজনীতি করে আসা জাহাঙ্গীর সূচনাকাল থেকেই কিশোরগঞ্জ বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত। ড. ওসমান ফারুক পরে রাজনীতিতে এসেও তাকে কোণঠাসা করে ফেলেন। দলের দুর্দিনে এখন মোল্লাকেই ভরসা বলে মনে করেন বিএনপির সমর্থকরা।
 
তবে ঘনিষ্ঠ সূত্রের দাবি, মামলার কারণে ড. ওসমান ফারুক নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে তার স্ত্রী রানা ফারুক প্রার্থী হতে পারেন। তিনিও নিয়মিতই ফোনে দলের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

আওয়ামী লীগের জন্য এ খোলা মাঠ ও একতরফা সুযোগে শুধু প্রকাশ্য প্রচার-প্রচারণাই বাড়েনি, নেপথ্যের রাজনীতিতেও নানা পালাবদল ঘটছে।

অনেকের মতে, ‘বর্তমান এমপি মজিবুল হক চুন্নু জাতীয় পার্টি ছেড়ে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ারও চেষ্টা করতে পারেন। তবে বিএনপির শক্ত প্রার্থী না থাকলে সে সুযোগ তিনি পাবেন না। সরকারি দল তখনও পুরনো নিজস্ব প্রার্থী দিয়ে আসন ছিনিয়ে নিতে চাইবে। সে অবস্থায় তার পক্ষে নিজস্ব সংগঠন ও কর্মী নিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ি দেওয়া প্রায় অসম্ভব’।

‘আবার আওয়ামী লীগ-বিএনপির মুখোমুখি অবস্থান দাড়ালেও এ আসনের শক্ত রাজনৈতিক মেরুকরণে হালে পানি পাবে না জাতীয় পার্টি। তখনও চুন্নুর ব্যক্তিগত ইমেজ ও জনপ্রিয়তাকে ভরসা করে এগোতে হবে দলটিকে। ফলে তার আ’লীগে যোগদানের সম্ভাবনাকে মোটেও নাকচ করা যায় না’।

‘তবে খুব সহজেও সেটি হবে না। বিএনপি ভোটে আসে কি-না ও জাপা-আ’লীগ কেমন সম্পর্ক থাকে- সেসব বিষয়ও বিবেচনায় আসবে। কেবল দল বদলিয়েই আগামী ভোটে জেতা যাবে বলে মনে করেন না ভোটাররা’- বলছিলেন স্কুল শিক্ষক শ্যামল সরকার।

করিমগঞ্জের কিরাটন বাজারের হোটেলে বসে সবজি ব্যবসায়ী নূরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলছিলেন, ‘এ আসনে কপাল খুলেছে আ’লীগের। বিএনপি ঝামেলায় আছে, সুযোগ ভালো নৌকার। এবার নেতৃত্ব ও তৃণমূলের সর্বত্র দলীয় প্রার্থী দেওয়ার দাবি উঠেছে। সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের এমপি পেতে মরিয়া নেতাকর্মীরাও। তৃণমূলের মনোভাব না বুঝে কেন্দ্র থেকে প্রার্থী চাপিয়ে দেওয়া হলে ফল ভালো হবে না’।

তাড়াইলের তালজাঙ্গা বাজারের ব্যবসায়ী সিরাজ মিয়া বলেন, ‘শুক্র-শনিবারসহ প্রতিদিনই কোনো না কোনো দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী আসছেন। মসজিদ-মাদ্রাসায় দান, স্কুলের খেলা ও বিয়ে-শাদিসহ সামাজিক আয়োজনে থাকছেন। এমনটি আগে কখনোই দেখা যায়নি’।

বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৭
এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।