এদিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে দলের উপজেলা শাখার সভাপতি এমএ হান্নানও মাঠে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। নিজেদের ঘাঁটি হিসেবে খ্যাত এ আসনটিতে আওয়ামী লীগ এবার ডাবল হ্যাট্রিক করার প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।
এ আসনে তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বর্তমানে অর্থ বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি গত জাতীয় সম্মেলনে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হয়ে দলীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছেন। মূলত তিনিই আওয়ামী লীগের এ আসনের একাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী। তার প্রার্থিতার প্রশ্নে দলের নেতাকর্মীরা একাট্টা।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক জেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফকির মাহবুব আনাম স্বপনের প্রার্থিতা নিয়ে মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলা বিএনপি’র নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে মধুপুর বিএনপিতে সভাপতি-সম্পাদক গ্রুপিং চলছে প্রকাশ্যে। দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে মাঠে কাজ করে যাচ্ছেন দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী ফোরামের যুগ্ম-সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী।
এই তিন ধারার বিভেদ স্পষ্ট হয়ে উঠছে গত ১ সেপ্টেম্বর দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে। ওই দিন দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সরকার শহীদ গণজমায়েত আহ্বান করেন তার মালিকানাধীন দলীয় কার্যালয়ে। একইদিন উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি জাকির হোসেন সরকার গ্রুপ ফকির মাহবুব আনাম স্বপনের পক্ষে চারালজানি অস্থায়ী দলীয় কার্যালয়ে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি পালন করেছে।
অপরদিকে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী তার স্থানীয় চেম্বারে একই কর্মসূচি পালন করেন। তবে এই দুই উপজেলার বিএনপি’র “মূল ধারার” অধিকাংশ নেতাকর্মী এক বাক্যে স্বপন ফকিরকেই একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপি’র প্রার্থী হিসেবে এমপি করতে ইচ্ছুক।
ইতোমধ্যে বিএনপি’র এই তিন ধারার স্রোতের বাইরে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বর্তমান উপজেলা বিএনপি’র উপদেষ্টা ক্লিন ইমেজের মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ। তিনিও দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে তার প্রার্থিতা বিষয়ে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন।
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য স্বপন ফকির গত দেড় যুগে স্থানীয় সমাজ সেবামূলক নানা কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন। এমপি না হয়েও তিনি দুই উপজেলার নানা উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, রাজনীতি করতে এসে এমপি না হয়েও নিজের টাকা খরচ করে মধুপুর ধনবাড়ীর অনেক উন্নয়ন করেছি। ধনবাড়ীকে উপজেলায় উন্নীত করার পেছনে বিএনপি সরকার তথা তার অবদান রয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, সবকিছু ছেড়ে এসে এ অঞ্চলের মানুষ হিসেবে আমি সবার পাশে থাকতে চাই, সবার সহযোগিতা চাই।
তবে বিএনপি ও সাধারণ জনগণের মধ্যে অনেকে মনে করেন স্থানীয় যেকোন নেতাকে মনোনয়ন দিলে বিএনপির ভোটের ক্ষেত্রে নতুন একটা সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। তাদের আলোচনায় স্থানীয় উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও মধুপুর পৌরসভার ৩ বারের সাবেক মেয়র এবং সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রদল নেতা, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদের নাম উঠে এসেছে। তারা তিনজনেই কেন্দ্রে ও মাঠে-ময়দানে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।
মোহাম্মদ আলী, আব্দুস সামাদ এবং সরকার শহীদ বিষয়টি স্বীকার করে দলীয় মনোনয়ন পেতে তারা আশাবাদী বলে জানিয়েছেন।
অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী জানিয়েছেন, দলের চেয়ারপারসনকে (খালেদা জিয়া) কারাবন্দি রেখে বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। তাকে যদি কারাগার থেকে মুক্ত করে ভোটের পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়, তাহলে ভোটাররা নির্ভয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে। তবে দলীয় মনোনয়ন পেলে এলাকার সন্তান হিসেবে নির্বাচিত হয়ে বিএনপি’র ভাবমূর্তি উন্নত করে এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যাব।
অপরদিকে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য স্বপন ফকির লন্ডনে অবস্থান করায় তার পক্ষে উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি জাকির হোসেন সরকার জানান, প্রথমে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং কারাগার থেকে মুক্ত করে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আর কেন্দ্র থেকে অন্য কোনো নির্দেশ না আসা পর্যন্ত এই আসনে একক প্রার্থী কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ফকির মাহবুব আনাম স্বপন। তবে বিএনপির মত বড় দলে যে কেউ দলীয় মনোনয়ন চাইতে পারেন। সেক্ষেত্রে দলীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।
এছাড়া জাতীয় পার্টিতে যোগদানকারী চলচ্চিত্রকার নুরুল ইসলাম রাজকে মৌখিক মনোনয়ন দিয়ে নির্বাচনী কাজে মাঠে নামতে সাবেক রাষ্ট্রপতি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মো. এরশাদ নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি গত ২৩ জানুয়ারি মৃত্যুবরণ করায় দলে শূন্যতা সৃষ্টি হয়। শোক কাটিয়ে উপজেলা জাতীয় পার্টি আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের উপজেলা সভাপতি এম এ হান্নানকে দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচিতে প্রার্থী হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। মূলত তাকেই প্রার্থী করা হবে এই ভাবনা নিয়েই তারা মাঠ গোছানো শুরু করেছেন।
টাঙ্গাইল-১ আসনে দুইটি পৌরসভা এবং ১৮টি ইউনিয়নের ভোটারগণ এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
মধুপুর উপজেলায় ২ লাখ ১৫ হাজার ৮৫৩ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। ধনবাড়ী উপজেলায় মোট ভোটার ১ লাখ ৪০ হাজার ৭৬৫ জন। দুই উপজেলা মিলে এ আসনে মোট ভোটার ৩ লাখ ৬৬ হাজার ৬০৮ জন।
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০১৮
আরএ