ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে চলছে চূড়ান্ত লবিং আর গ্রুপিং। এর মাঝেও চলছে নানাভাবে নির্বাচনী প্রচার–প্রচারণা ও শোডাউন।
খুলনার ৬টি সংসদীয় আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে এবার অনেক তরুণ নেতা মনোনয়ন পেতে পারেন। নৌকার জয় নিশ্চিত করতে বিভিন্ন আসনে বিতর্কিত, ব্যর্থ সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীর বদলে তরুণ পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নতুন মুখ আশা করছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। স্বচ্ছ ভাবমূর্তি, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে, এলাকায় সুপরিচিত, সৎ, মানুষের কল্যাণে কাজ করেন, দক্ষ সংগঠক, নিষ্ঠাবান ও শিক্ষিত তরুণদের দলীয় প্রতীক দেওয়ার দাবিও জানিয়েছেন।
আর তরুণদের কেউ কেউ দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায় থেকে চূড়ান্ত সবুজ সংকেত পেয়েছেন এমন খবরে এবং প্রায় এক ডজন নবীন সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন প্রবীণ অনেক নেতা।
খুলনা-১ আসনে (বটিয়াঘাটা-দাকোপ) আসন্ন নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতা শ্রীমন্ত অধিকারী রাহুল। তার সঙ্গে প্রচারণা চালাচ্ছেন দাকোপ উপজেলা চেয়ারম্যান শেখ আবুল হোসেন ও বটিয়াঘাটা উপজেলা চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম খান।
এছাড়া খুলনা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ এবং বর্তমান সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পঞ্চানন বিশ্বাসও মনোনয়নপ্রত্যাশী। সাবেক সংসদ সদস্য ননী গোপাল মণ্ডল মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।
পঞ্চানন বিশ্বাসের বিরোধীদের অভিযোগ, বর্তমান সংসদ সদস্য আইলা-দুর্গত এ আসনে নদী ভাঙন-রোধে তেমন কোনো কাজ করতে পারেননি। সাবেক সংসদ সদস্য ননী গোপাল মন্ডল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে প্রার্থী হওয়ায় দল তাকে বহিষ্কার করেছিল। আইলা পরবর্তী সময়ে দুর্নীতির অভিযোগসহ নানা অনিয়ম করায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন তিনি। যে কারণে নেতা-কর্মীরাও তার কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন। এছাড়া সম্প্রতি জেল হত্যা দিবসে একটি কনসার্টে যোগ দিয়ে নতুন সমালোচনার সৃষ্টি করেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য। এ আসনে সাবেক ও বর্তমান সংসদ সদস্যের নামে এসব অভিযোগের সুযোগে নতুন মুখ আসতে পারে বলে মনে করছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
শ্রীমন্ত অধিকারী রাহুল বাংলানিউজকে বলেন, নদী ভাঙন-কবলিত এলাকায় নিজ খরচে ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা করেছি। মানুষের সুখে-দুঃখে সবসময় পাশে রয়েছি। আমি শতভাগ আশাবাদী সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অধ্যুষিত এ আসনে প্রধানমন্ত্রী সভানেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে মনোনয়ন দেবেন। সেই আশায় নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমান সরকারের ১০ বছরের উন্নয়ন লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে জনগণের কাছে তুলে ধরছি।
খুলনা-২ (সদর ও সোনাডাঙ্গা মেট্রো থানা এলাকা) আসনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ সালাউদ্দিন জুয়েলকে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে খুলনা-২ আসনের প্রার্থী ঘোষণা করেছেন মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক।
২৬ অক্টোবর জাঁকালো আয়োজনের মধ্যে দিয়ে খুলনা-২ আসনে নির্বাচনের প্রচারণা শুরু করেছেন শেখ সালাহ উদ্দিন জুয়েল।
যদিও বর্তমান সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিজান আসনটিতে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শেখ জুয়েলের মনোনয়ন ঘোষণায় মিজান প্রচারণা বন্ধ করেছেন।
খুলনা-৩ আসন (দৌলতপুর-খালিশপুর-খানজাহান আলী) শিল্পাঞ্চল হিসেবে খ্যাত। এ আসনের নতুন মুখ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এসএম কামাল হোসেন মনোনয়ন দৌঁড়ে এগিয়ে আছেন বলে মনে করছেন তার সর্মথকরা। যদিও এখানকার বর্তমান সংসদ সদস্য বেগম মন্নুজান সুফিয়ানও নির্বাচনের প্রচারণা চালাচ্ছেন।
এস এম কামাল বাংলানিউজকে বলেন, আমি দলের কাছে মনোনয়ন প্রত্যাশা করবো। যাছাই-বাছাই করে দলের সভানেত্রী যে সিদ্ধান্ত নেবেন আমি মেনে নেবো। মনোনয়ন না দিলেও দলকে সুসংগঠিত রেখে কাজ করবো। আর দিলে তো নির্বাচন করবোই।
খুলনা-৪ আসনে (রূপসা-তেরখাদা-দিঘলিয়া) জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সাংগঠনিক সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান জামাল ও সদ্যপ্রয়াত এমপি এস এম মোস্তফা রশিদী সুজার ছেলে খালেদিন রশিদী সুকর্ণসহ বেশ কয়েকজন নতুন মুখ মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। যদিও সম্প্রতি উপ-নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম মুর্শেদীর মনোনয়ন পাল্লা বেশি ভারি।
কামরুজ্জামান জামাল বাংলানিউজকে বলেন, খুলনা-৪ আসনের মানুষের পাশে দীর্ঘদিন ধরে ছিলাম। এখনো আছি। দলের চরম দুর্দিনে আন্দোলন সংগ্রামে মাঠে ছিলাম, আর জনগণের সুখে দুঃখে পাশে দাঁড়িয়েছি। আসন্ন নির্বাচনে নৌকার মাঝি হতে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি।
খুলনা-৫ আসনে (ফুলতলা-ডুমুরিয়া) খুলনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক প্রবর্তন সম্পাদক ও ডুমুরিয়ার গুটুদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা সরোয়ার নতুন মুখের তালিকায় রয়েছেন সবার শীর্ষে।
এছাড়া মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন জেলা বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. এম মাহাবুব উল ইসলাম এবং বর্তমান মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ।
বর্তমান সংসদ সদস্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগকে কাজে লাগিয়ে নতুন কেউ এ আসনে আসতে পারেন বলে মনে করছেন তৃণমূলের অনেক নেতা-কর্মী। এক্ষেত্রে ক্লিন ইমেজের অধিকারী মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ও ৬ বারের দেশের শ্রেষ্ঠ চেয়ারম্যান তরুণ মোস্তফা সরোয়ার এগিয়ে রয়েছেন বলে অনেকে মনে করছেন।
গুটুদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা সরোয়ার বাংলানিউজকে বলেন, এলাকার মানুষ আমাকে ভালোবেসে গ্রহণ করেছে। যদি মনোনয়ন পাই তাহলে জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবে- এ প্রত্যাশা আমার আছে। সে আস্থা আমি অর্জন করেছি বলে আমার বিশ্বাস। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা আমাকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায়। দল যদি মনোনয়ন দেয় আমি নির্বাচন করবো।
মনোনয়ন দেওয়ার মালিক প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। আমি মনোনয়ন পাওয়ার প্রত্যাশী। যাছাই-বাছাই করে দলের সভানেত্রী যে সিদ্ধান্ত নেবেন আমি মেনে নেবো। মনোনয়ন না দিলেও যাকে দেবে তার পক্ষে কাজ করবো।
খুলনা-৬ আসনে (কয়রা-পাইকগাছা) জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আক্তারুজ্জামান বাবু তরুণ সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান ও চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালযয়ের (চুয়েট) ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি প্রেম কুমার মণ্ডল মনোনয়ন প্রত্যাশায় গণসংযোগ করছেন। বর্তমান সংসদ সদস্য নুরুল হক ও সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব আলী সানাও মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে।
সমর্থকদের বক্তব্য, বর্তমান ও সাবেক সংসদ সদস্যদের নানা কারণে ইমেজ সংকটের সুযোগ কাজে লাগিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে আকতারুজ্জামান বাবুর। তবে কেউ কেউ বলছেন, হেভিওয়েট প্রার্থী প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমানকে দলের সভানেত্রী মনোনয়ন দিলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না।
আক্তারুজ্জামান বাবু বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘ বছর ধরে এলাকার প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িত রাখার চেষ্টা করেছি। নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য সকল প্রস্তুতি আমার আছে। তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হলে দল আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে আমি শতভাগ আশাবাদী।
বাংলাদেশ সময়: ০৮০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৮
এমআরএম/এইচএ/