ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ভোটের-কথা

উন্নয়নের সঙ্গে সুশাসন চান ভোটাররা

মিজানুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৮
উন্নয়নের সঙ্গে সুশাসন চান ভোটাররা .

চট্টগ্রাম: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থী বাছাইয়ের পর বড় রাজনৈতিক দলগুলো এখন নিজেদের নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করছে। আগামীতে দেশ পরিচালনায় কোন বিষয়গুলোকে গুরুত্ব দেওয়া হবে- তা ঠিক করতেই ব্যস্ত সময় পার করছেন নীতি-নির্ধারকরা।

তবে রাজনৈতিক দলগুলোকে ইশতেহারে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, প্রশাসনিক সংস্কার, দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, কৃষির আধুনিকায়ন, দুর্নীতি প্রতিরোধ, শিল্পায়ন ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ, শিক্ষা-সংস্কৃতি ও মানবসম্পদ উন্নয়ন, জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণসহ নানা বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি চট্টগ্রামের শিক্ষাবিদ, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও শিক্ষার্থীদের।

বাংলানিউজের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেছেন, আগামী নির্বাচনের ইশতেহারে যেন দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, চট্টগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়ন করে আমদানি-রফতানি বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠাসহ ব্যবসা-বাণিজ্যে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়া, গবেষণাধর্মী উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি, তরুণদের নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জীব-বৈচিত্র্য সংরক্ষণকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, ইশতেহারে সমাজের সব শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধিদের মতামত থাকবে বলেই আশা করি। স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সরকার, গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণসহ কার্যকর সংসদ এবং জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা থেকে বৈষম্যহীন রাষ্ট্র গঠনের বিষয়ও তারা ইশতেহারে উল্লেখ করবেন- এমনটাই চাইবো আমরা।

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, বন্দরনগরী চট্টগ্রামকে সত্যিকার অর্থে বাণিজ্যিক রাজধানী হিসাবে গড়ে তুলতে ইশতেহারে সুস্পষ্ট ঘোষণা থাকতে হবে। বিশেষ করে বন্দর সম্প্রসারণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।

চট্টগ্রাম জুনিয়র চেম্বারের সাবেক সভাপতি মো. গিয়াস উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি পালন করবে বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে ঘোষণা আসবে মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবেও। আবার ওই বছরই ৫০ বিলিয়ন ডলার রফতানির লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছে বাংলাদেশ। সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কি ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা রাজনৈতিক দলগুলোর ইশতেহারে থাকা প্রয়োজন।

নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি আশিক ইমরান বাংলানিউজকে বলেন, বিশাল জনসংখ্যার কথা মাথায় রেখে ইশতেহারে ভবিষ্যতের নগর পরিকল্পনা নিয়ে ঘোষণা চাই। বড় শহরগুলোর উপরে চাপ কমানোর জন্য প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ করা এবং প্রতিটি উপজেলায় মানসম্মত স্কুল, কলেজ, স্বাস্থ্য সেবা এবং আবাসন চাই।

তিনি বলেন, বিশাল সংখ্যক কর্মক্ষম তরুণদের কর্মসংস্থান এবং মেধাবী ছাত্রদের দীর্ঘমেয়াদী শিক্ষাবৃত্তি চাই। পাশাপাশি তরুণ উদ্যোক্তা সৃষ্টির জন্য স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা, ব্যাংকিং সেক্টরে লুটপাট বন্ধসহ কঠোর শৃঙ্খলা আনতে হবে। ঋণখেলাপিদের কঠোর শাস্তির ঘোষণা দিতে হবে।

ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক- ইউসিবিএলের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম বিভাগের প্রধান আশরাফ উদ্দীন চৌধুরী সিজার বাংলানিউজকে বলেন, আগামী দিনের তরুণ সমাজকে নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো কি ভাবছে, তরুণ সমাজকে উন্নয়নের সঙ্গে, দেশ পরিচালনার সঙ্গে কিভাবে সম্পৃক্ত করা যায়, সেটা জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। সামষ্টিক অর্থনীতি, মুদ্রাস্ফীতি, ব্যাংক ব্যবস্থা, ইনস্যুরেন্স ব্যবস্থা নিয়ে কি ধরনের চিন্তাভাবনা আছে, সেটাও জানাতে হবে ইশতেহারে।

চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম বাবু বাংলানিউজকে জানান, সংস্কৃতির মানুষ হিসেবে চাইবো- জাতীয় যে উৎসবগুলো হয়, সেগুলো শুধু ঢাকাকেন্দ্রীক না করে সারাদেশে হোক। পাশাপাশি দেশের সব ইউনিয়নে বটতলার মতো মুক্তমঞ্চ তৈরি করা হোক। আমাদের লোকজ সংস্কৃতি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে ইশতেহারে আলাদা কথা উল্লেখ থাকুক।

তিনি বলেন, সরকারি বিভিন্ন সংস্থায় নানা শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি থাকে, কিন্তু সাংস্কৃতিক ব্যক্তিদের প্রতিনিধি থাকে না। সেখানে প্রতিনিধি করা হলে আমরাও সেখানে ভূমিকা রাখতে পারবো। এছাড়াও অসুস্থ এবং অসচ্ছল সংস্কৃতি কর্মীদের নিয়মিত ভাতা এবং যেকোনো সাংস্কৃতিক আয়োজনে বরাদ্দ বাড়ানোর ঘোষণা চাইবো আমরা।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী নাদিয়া বিনতে কবির বাংলানিউজকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পাঠদানকেন্দ্রীক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করার, গবেষণার জন্য আলাদা বাজেটের, সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-সংসদ নির্বাচন চালুর ঘোষণা চাই ইশতেহারে। পাশাপাশি ছাত্র-জনতার অনুমোদিত গণতান্ত্রিক বৈষম্যহীন শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের ঘোষণা চাই।

তিনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠাগুলোকে অসাম্প্রদায়িক সংস্কৃতি ও রাজনীতি চর্চার কেন্দ্রভূমিতে পরিণত করতে রাজনৈতিক দলগুলো ইশতেহারে সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দেবে। এছাড়াও পরিবেশ-বন্যপ্রাণি রক্ষায় নিজেদের প্রতিশ্রুতি এবং নারী ও শিশুবান্ধব রাষ্ট্র গঠনে তাদের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৬, ২০১৮
এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।