ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নির্বাচন ও ইসি

সেনাবাহিনীর কাছ থেকে স্মার্টকার্ড প্রস্তুত করবে ইসি

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৭, ২০১৮
সেনাবাহিনীর কাছ থেকে স্মার্টকার্ড প্রস্তুত করবে ইসি

ঢাকা: ফরাসি কোম্পানি অবার্থার টেকনোলজিসকে বিদায় করার পর এবার উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা স্মার্টকার্ড দেশেই প্রস্তুত করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত দেশীয় প্রযুক্তি পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি-বিএমটিএফকেই পছন্দ করছে সংস্থাটি।
 

সূত্রগুলো জানিয়েছে, বিএমটিএফ’র কাছে স্মার্টকার্ড প্রস্তুত করে নিতে নির্বাচন কমিশন এরইমধ্যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্তমানে আলোচনার পর্যায়ে রয়েছে পুরো প্রক্রিয়াটি।


 
২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি ৯ কোটি নাগরিকের স্মার্টকার্ড সরবরাহে ফরাসি কোম্পানি অবার্থার টেকনোলজিসের সঙ্গে ৭৯৬ কোটি ২৬ লাখ টাকার চুক্তি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। শর্ত অনুসারে ১৮ মাসের মধ্যে সবগুলো স্মার্টকার্ড তৈরি করে দেওয়ার কথা থাকলেও ৩০ মাসেও পারেনি কোম্পানিটি।
 
কয়েক দফা সময় বাড়িয়ে অবার্থারের সঙ্গে চুক্তির মেয়াদ করা হয় ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত। সে সময় পর্যন্ত তারা ঢাকায় ফাঁকা কার্ড পাঠায় ছয় কোটি ৬৩ লাখ ৬ হাজার। এর মধ্যে পারসোনালাইজেশন (নাগরিকের তথ্য ইনপুট) করে দেয় এক কোটি ২৪ লাখ কার্ডে। ব্ল্যাংক কার্ড দিতে পারেনি দুই কোটি ৩৬ লাখ ৪ হাজার। কয়েক দফা চিঠি দিয়েও নির্দিষ্ট সময়ে কার্ড দিতে না পারার কারণ জানাতে বলা হয় প্রতিষ্ঠানটিকে। কিন্তু এতে সন্তোষজনক সাড়া না দেওয়ায় চুক্তি ভঙের দায়ে অবার্থারকে জরিমানা করা হয়।
 
ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বাংলানিউজকে জানান, ফরাসি প্রতিষ্ঠান চুক্তির শর্ত ভাঙায় ৩৫০ কোটি টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।
 
ফরাসি প্রতিষ্ঠানকে বিদায় করার পর ইসি তার নিজস্ব লোকবল দিয়েই অবার্থারের তৈরি করে দেওয়া ব্ল্যাংক কার্ডগুলোতে নাগরিকের তথ্য ইনপুট করে বিতরণের জন্য প্রস্তুত করে আসছে। কিন্তু এখনো দুই কোটি ৩৬ লাখ ৪ হাজার নাগরিকের ব্ল্যাংক কার্ড তৈরি করা হয়নি। তার ওপর গত কয়েক বছরে ভোটার বেড়েছে ১ কোটি ৪০ লাখ।
 
নতুন এবং পুরনো মিলিয়ে ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৪ হাজার নাগরিকের ব্ল্যাংক স্মার্টকার্ড তৈরি করা, ৬ কোটির বেশি কার্ডে নাগরিকদের তথ্য ইনপুট দেওয়া এবং পুরো বিষয়টি ব্যবস্থাপনার জন্য সেনাবাহিনীর সহায়তা নেবে নির্বাচন কমিশন। এজন্য সোমবার (০৮ জানুয়ারি) বিএমটিএফ এর সঙ্গে বৈঠকেও বসবে সংস্থাটি।
 
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের যোগাযোগ কর্মকর্তা আশিকুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, আর বিদেশি নয়, এবার দেশীয় প্রতিষ্ঠানের দিকেই যাচ্ছি আমরা। এক্ষেত্রে বিএমটিএফ এর কাছ থেকে ব্ল্যাংক কার্ড প্রস্তুত, নাগরিকের তথ্য ইনপুট এবং ব্যবস্থাপনা বিষয়ক সহায়তা নেওয়ার আলোচনা চলছে।
 
সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করেছে সংস্থাটি। যে কমিটিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ এনামুল কবীর কাজ করেছেন। মূলত ওই টেকনিক্যাল কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই নির্বাচন কমিশন বিএমটিএফ’র সহায়তা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
 
কমিটির দেওয়া সুপারিশে বলা হয়েছে- ‘স্মার্টকার্ডের গুরুত্ব ও প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে কমিটি মনে করে এই কার্ড বাংলাদেশ থেকে ক্রয় করা যেতে পারে। যেহেতু এনআইডি দেশের নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং এই তথ্য যথেষ্ট সংবেদনশীল, তাই তথ্যের সুরক্ষা ও বিশুদ্ধতা বজায় রাখতে দেশের প্রস্তুতকৃত কার্ড ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে করে দেশীয় প্রতিষ্ঠনকে সম্পৃক্ত করা হবে এবং বিদেশ নির্ভরতা কমবে। বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) যেহেতু বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান, তাই বিএমটিএফ এর বর্তমান অবকাঠামো নিশ্চিত সুবিধা ও আগের কাজের সফলতা বিবেচনা করে দেখা যায়, বিএমটিএফ এ কার্ড প্রস্তুত করতে সক্ষম। ’
 
এছাড়া বিএমটিএফ আগে আরো সরকারি কাজ যেমন- ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন, ভেহিক্যাল রেজিস্ট্রেশন প্লেট, ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট, কারা কর্তৃপক্ষের জন্য ওয়েব বেইজড প্রিজনার ভ্যান ইত্যাদি প্রস্তুত করে এবং দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে আসছে।
 
এদিকে অবার্থারের সঙ্গে চুক্তি বিশ্লেষণ করে কমিটি দেখতে পায়, তারা প্রতি কার্ড তৈরিতে ব্যয় করছে ১ দশমিক ৫০১৫ ডলার। আর বিএমটিএফ যা ১ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলারে দিতে পারবে বলে জানিয়েছে।
 
তাই জাতীয় পরিচয়পত্রের মতো একটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কাজে সার্বিক নিরাপত্তার স্বার্থে স্মার্টকার্ড বিদেশ থেকে আমদানি না করে, কার্ডের গুণগতমান অক্ষুন্ন রেখে যৌক্তিক হারে মূল্য নির্ধারণপূর্বক বিএমটিএফ-এর মতো স্বনামধন্য দেশীয় সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে কার্ড ক্রয় করার ব্যাপারে কমিটি সুপরিশ করে।
 
২০১১ সালে ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর অ্যানহেন্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিস’ (আইডিইএ) প্রকল্পের মাধ্যমে নাগরিকদের স্মার্টকার্ড দিতে প্রকল্প হাতে নিয়েছিল এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। এতে বিশ্বব্যাংক ১৭০ মিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দেয়। আইডিইএ প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। বর্তমানে নির্বাচন কমিশন সরকারি তহবিল থেকে নতুন একটি প্রকল্প দাঁড় করানোর প্রক্রিয়া হাতে নিয়েছে।
 
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৭, ২০১৮
ইইউডি/জেডএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।