দুই ঘণ্টার জার্নি শেষে ধামাখালিতে পৌঁছানো। সেখানে কিছুক্ষণ বিএসএফ সদস্যদের হৃদ্যতাপূর্ণ আতিথেয়তা নিয়ে যাত্রা বিএসএফ এর ভাসমান বিওপি টি জংশন।
ডাবল ইঞ্জিনের ৩২ ডিগ্রি তাপমাত্রার কাঠফাটা রোদে বোঁ…বোঁ শব্দে ছুটে চললো সুন্দরবনের অন্যতম বড় নদী রায়মঙ্গলের বুক চিরে। এই নদীই সাতক্ষীরার শ্যামনগরের কৈখালী দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। জংশনেই বিএসএফ এর বিওপি। এখানে টি এর মতো রায়মঙ্গল পূর্বে বাঁক নিয়ে ঢুকেছে বাংলাদেশে। পশ্চিমে কলকাতা চলে গেছে হাড়িয়াভাঙ্গা নদী। ভাসমান বিওপিতেই দুপুরের খাবার-দাবার। এই বিওপি সুন্দরবন সংলগ্ন সীমান্ত সুরক্ষায় কাজ করে। এছাড়া ভারতের হলদিয়া থেকে বাংলাদেশের মোংলা বন্দরে যে পণ্যবাহী কার্গো বা জাহাজ চলাচল করে সেগুলোর চেকিংয়ের দায়িত্বও এ বিওপির।
দুই দেশের পতাকা ওড়ানো কয়েকটি কার্গো দেখা গেলো টি জংশনের কিছু দূরে দাঁড়িয়ে।
এর আগে বিএসএফ সাউথ বেঙ্গল ফ্রন্টিয়ারের কলকাতা সেক্টরের কমান্ডার ছিত্তার পালের নেতৃত্বে এগিয়ে চলে ছয়টি স্পিডবোট। গতি কখনও ৪০ কখনও ৪৫ এর বেশি। সিদ্ধান্ত একটু বদলানো হলো পথিমধ্যে। টি জংশনের আগে সুন্দরবনের ভারত অংশ শুরু। বসিরহাট রেঞ্জের ঝিনগাখালি বিটে গড়ে তোলা হয়েছে একটি পর্যটন কেন্দ্র। ‘এখান থেকে বাঘ দেখা যায়, বন্যপ্রাণীর আনাগোনাও বেশি। ’ তাই পর্যটকদের আগ্রহে গড়ে তোলা হয়েছে পর্যটন কেন্দ্র। ঝিনখালি ঘাট থেকে উঠে একটু এগিয়ে ডানপাশে বসার গোলঘর। সোজা তাকালে বিটের সংরক্ষিত এলাকায় প্রবেশের গেট। গেটের কাছে যেতেই এগিয়ে এলো তিনটি বানর। যেন বুনো গন্ধ-হাওয়ায় প্রতিবেশি অতিথিদের বরণের দায়িত্ব পড়লো তাদের। বন্য হলেও ছাড়া বানরগুলো যে পোষ মেনে গেছে কিংবা মানুষে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে তা তাদের চলফেরার ভাবগতিই বলে দিচ্ছিলো। এরইমধ্যে একদল পর্যটকও ট্রলার নিয়ে ঘাটে ভিড়লো। সাত ফুট উঁচু নেট দিয়ে ঘিরে পাকা চলাচলের পথ করে দেওয়া হয়েছে পর্যটকদের জন্য। সোজা এগোলেই একটি চারতলা সমান উঁচু টাউয়ার। এই টাউয়ার থেকেই নাকি ভাগ্য প্রসন্ন থাকলে বাঘ দেখা যায়। পুরো দলটি উঠলো টাউয়ারে বাঘ দেখার আশায়। কিন্তু সুন্দরবনের রাজামশাই কি বলে কয়ে যখন তখন আসেন!
টাউয়ার থেকে পূর্বে তাকিয়ে দেখা গেলো ছোট দু’তিনটি পুকুর কাটা রয়েছে বনের প্রাণীদের পানিপানের জন্য। জলাধারগুলোর আশপাশে কিংবা নেট দিয়ে ঘেরা কয়েকশো মিটার এলাকা ঘিরে প্রাণীদের নাকি যতো আনাগোনা। রয়েল বেঙ্গল টাইগার এখনও বনের ভারত অংশে বেশি। মাঝেমধ্যে দেখা মেলে এখানে। পর্যটকদের থাকার জন্য একটি ভিআইপি মানের কটেজও করে দিয়েছে বনবিভাগ। অনুমতি নিয়ে বুনো জংলিগন্ধমাখা পরিবেশে যে কেউ রাত্রিযাপন করতে পারেন। কান পেতে শুনতে পারেন হরিণ, শিয়াল কিংবা বাঘের হুংকার!কমান্ডার ছিত্তার টাউয়ারে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, আমি বাঘ দেখেছি বনে। তবে এখান থেকে দেখার সৌভাগ্য এখনও হয়নি। পূর্বে আমাদের এই একটি বিটে সাধারণ মানুষ ঢুকতে পারে।
তিনি আরও জানান, এখান থেকে মাত্র ২০ মিনিটের পথ সাতক্ষীরার শ্যামনগরে সুন্দরবন বাংলাদেশ অংশের নীলডুমুর বিট।
তার কাছে এতো কাছে নিজের দেশ ভাবতেই যেন একরাশ সুন্দর নির্মল দেশের বাতাস শরীর-মন জুড়িয়ে দিলো!
গোছালো পরিবেশে নির্দিষ্ট রুট ধরে হাঁটতে হাঁটতে দেখা মৃত্যুঞ্জয় মন্ডলের সঙ্গে। পেশায় রংমিস্ত্রি। এই বিটে কাজ করছেন এখন। কাজ আগেও করেছেন। বাংলাদেশ থেকে এসেছি পরিচয় দিতেই বললেন, এখান থেকে বাঘ, হরিণ, শুকরসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী দেখা যায়। তবে শীতকালে বেশি। এসময়টা দেখা যায় না। শীতকালে টাউয়ারে কাজ করার সময় একবার বাঘও দেখেছি। আর প্রাণীরা বিকেলের পর বেশি বের হয়। এখান থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার মোল্লার হাট থেকে এসে কাজ করছেন। মৃত্যুঞ্জয়ের কাছে গল্প শুনতে শুনতেই সময় হয়ে এলো টি জংশন যাওয়ার। তার আগে আবার বনে ঘোরাঘুরি কিছুক্ষণ। অনেকটা আমাদের নীলডুমুরের মতো করে সাজানো ঝিনগাখালি থেকে বিদায়ের সময় কাছের কেওড়া গাছে নাম না জানা বুনো পাখিটা উচ্চৈঃস্বরে ডেকেই চললো।
সীমান্তে ‘নন-লিথাল’ অস্ত্রের ব্যবহারও কমেছে: বিএসএফ
বাংলাদেশ সময়: ২২০১ ঘণ্টা, মার্চ ২৯, ২০১৮
এএ