ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপন্যাস

নীল উড়াল: পঞ্চম পর্ব

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৪২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৭
নীল উড়াল: পঞ্চম পর্ব নীল উড়াল

নায়ক ম্যাকগিল ভার্সিটির অধ্যাপক-লেখক-অভিবাসী বাংলাদেশি। ফরাসি সুন্দরী মার্গারেট সিমোনের প্রণোদনায় দেশে মাদকচক্র নিয়ে গবেষণাকালে ঘটনা মোড় নেয় রোমাঞ্চকর বাঁকে। আসে ধুরন্ধর বন্ধু-অস‍ৎ ব্যবসায়ী এনামুল, সুন্দরী স্টাফ রোকসানা, মধুচক্রের জেনিফার-মলি-পরী, ক্লিনিকের অন্তরালের মিসেস খোন্দকার, রমনার শফি মামা ও ফুলি, ‘উড়াল যাত্রা’র সাইফুল, বিড়ালের কুতকুতে চোখের তরুণ সাংবাদিক ফরমানউল্লাহ এবং ছোটখালার রহস্যময় মেয়ে অন্তরা। প্রেম ও বেঁচে থাকার যুগল উড়ালে কাহিনী আবর্তিত হতে থাকে।

৫.
ঢাকার বিমানবন্দর আগের মতোই আছে। শুধু নাম বদল হয়েছে মাত্র।

অবহেলা, অযত্ন, অব্যবস্থাপনা, অনিয়মের ছাপ চারদিকে সুস্পষ্ট। আমাকে রিসিভ করার জন্য এনামুল যে মেয়েটিতে পাঠিয়েছে, তারই নাম রোকসানা, মাঝে মাঝে ফোনে কথা হয়েছে। শরীরে, চেহারায় ও কাজে-কর্মে অত্যন্ত স্মার্ট মেয়ে। এনামুলের রুচি আছে মানতেই হবে।

-আপনি দশ মিনিট এখানে বসে অপেক্ষা করুন স্যার। আমি সব ঝামেলা মিটিয়ে ফেলছি।

লাউঞ্জের সোফায় বসিয়ে মেয়েটি আমার মাল-পত্র ক্লিয়ার করতে চলে গেলে। বোঝা যাচ্ছে, এ তল্লাটে তার নিয়মিত যাতায়াত আছে। বিমানবন্দরের লোকজন এবং কায়দা-কানুন সম্পর্কে বেশ ওয়াকিবহাল মেয়েটি। অতি স্বাচ্ছন্দ্যে নানা কাউন্টারে ঘুরে নিজের কাজটি করে নিচ্ছে। রোকসানা কথা রেখেছে। ঠিক দশ মিনিটের মধ্যে আমার সব মাল-পত্র নিয়ে সামনে হাজির।

-চলুন স্যার। এবার বের হওয়া যাক।
-থ্যাঙ্কু রোকসানা। তুমি থাকায় সব কিছু বেশ সহজেই সেরে ফেলা গেল।

নীল উড়াল: চতুর্থ পর্ব

বেশ বোঝা যায়, ধন্যবাদ পেতে মেয়েটি অভ্যস্থ। অতএব সে বিশেষ আপ্লুত হলো না।
স্বাভাবিকভাবেই বললো:

-এটা কোনও ব্যাপারই না। স্যারের পিএস. কাম প্রটোকল অফিসার হিসাবে এর চেয়ে জটিল ও বিপজ্জনক কাজ আমাকে সামলাতে হয়। আপনার ‘যে’ কোনও সমস্যায় আমাকে বলবেন, সমাধান করে দেবো।

‘যে’ শব্দটির প্রতি মেয়েটি যেভাবে জোর দিল, তাতে বেশ অবাক লাগল। এই ‘যে’-এর মধ্যে সম্ভবত সে পৃথিবীর ভালো-মন্দ সকল কাজই ধরে নিয়েছে। বাছ-বিচার করে নি।
কানাডা থেকে এনামুলের সঙ্গে কথা বলার সময় রোকসানার সঙ্গে মাঝে মধ্যে আলাপ হয়েছে। কখনও এনামুল ব্যস্ত থাকলে সে-ই ফোন এটেন্ড করেছে। গাড়িতে যেতে যেতে মেয়েটিকে ভালো করে দেখলাম। জিম করা শার্প চেহারার মেয়ে। বয়স পঁচিশের বেশি হবে না। সুঢৌল শরীর। কুড়ি বলেও চালিয়ে দেওয়া যাবে।

-রোকসানা, কত দিন আছ তুমি এনামুলের অফিসে?
-বছর দেড়েক হবে স্যার।
-কত দূর পড়াশোনা করেছ?
-বিএ পাসের পর আর এগুতে পারি নি। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় সংসার। অবসরকালে চাকরিজীবী বাবা আর টানতে পারেন নি। কয়েক জায়গা ঘুরে শেষ পর্যন্ত এনামুল স্যারের এখানে এসে একটা স্থিরতা পেয়েছি। নিশ্চিন্তে কাজ করে যাচ্ছি। ফিনান্সিয়াল ক্রাইসিস কেটে গেছে। অফিসের গাড়ি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার কারণে পরিবার ও সমাজে শক্ত স্ট্যাটাস তৈরি হয়ে গেছে আমার।

চাকরিতে মেয়েটি বেশ তৃপ্ত বলেই মনে হলো। কিন্তু এসব প্রাইভেট চাকরির ভবিষ্যত কি? আমি তাকে বলি:

-কিন্তু এই পদে তো তোমার প্রমোশন নেই। কেরিয়ার তো ব্লক হয়ে যাবে?
-হোক। কোনও অসুবিধা নেই। এনামুল স্যার যেসব সুবিধা দিচ্ছেন, সেগুলো ধরে রাখতে পারলেই চলবে। আমি একটি ফ্ল্যাট বুকিং দিয়েছি। বছরে কয়েক বার বিদেশ যাচ্ছি। দেশের মধ্যেও পাখির মতো বেড়াই। এনজয়ও করি খুব। দায়িত্ব ও টেনশন একদম কম। শুধু ভিআইপিদের প্রটোকল ও সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা। এমন চাকরি ভাগ্যে মিলে স্যার। আপনার ফ্ল্যাট গুছানো থেকে সব কাজ আমিই করেছি। ইনফ্যাক্ট, সব কিছু দেখা-শোনার দায়িত্ব স্যার আমাকে দিয়ে রেখেছেন।

আমি ধন্যবাদসূচক হেসে মৃদু মাথা নেড়ে জিজ্ঞাসু সুরে জানতে চাই:
-তা কি কি ব্যবস্থা করেছ আমার জন্য?

পাকা মার্কেটিং অফিসারের মতো সে আমাকে বিবরণ দিচ্ছে:
-ওয়েল ফার্নিশড ফ্ল্যাট। বাইরের কারও কোনও সাহায্য ছাড়া আপনি সেখানে দিব্যি একা থাকতে পারবেন। রান্নাঘরে মাইক্রোওয়েভ থেকে রাইস কুকার, ওয়াটার ফিল্টার ইত্যাদি সব কিছু ইনস্টল করা আছে। স্যার বলেছেন, আপনাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে দিতে। আপনি একা কাজ করবেন, কারও ডিস্টার্ব বা সাহায্য ছাড়াই। কিন্তু....
রোকসানা থেমে গেল। আমার দিকে তাকিয়ে স্টাডি করছে মনে হলো। ওর গোলাপী ঠোট দুটি এখন অনেক বেশি রিলাক্স হয়ে আছে। রাঙা জিবের ডগাটা আস্তে ঠোটের কোণে ঠেকিয়ে সে একটা তীর্যক হাসির রেখা আঁকল। পুরো মুখে একটি রুদ্ধবাক মোহিনী ভঙ্গি। কি বলতে চাইছে সে। আমি জানতে চেষ্টা করি:

-বলো রোকসানা, থামলে কেন? কি বলতে চাও তুমি?

আমার সাপোর্ট পেয়ে সে আরও ফ্রি বোধ করছে বোঝা গেল। অফিসিয়াল আড়ষ্টতা একদমই আর নেই ওর মধ্যে। সে বেশ ‘মাই ডিয়ার’ কণ্ঠে বললো:

-আমি ভাবছি, এত বড় বাড়িতে আপনি লোনলি ফিল করবেন না তো? অ্যাই মিন কোনও কম্পানি ছাড়া থাকাটা কষ্টকর হবে আপনার। বাড়ি দেখে আমার অবশ্য নিজেরই থাকতে লোভ হয়েছিল। স্যারের ভয়ে চেপে গেছি।

একটা রহস্যময় হাসিতে রোকসানা ভাসিয়ে দিল। তারপর চোখ নাচিয়ে বললো:

-প্রটোকল করি বলে আমাকে সব দেখতে হয়। আপনার পারসোন্যাল সেটিসফেকশনের জন্য কিছু দরকার হলে আমাকে বলবেন। আপনি চাইলে আপনাকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য কাউকে পাঠিয়ে দেবো। কথাটা হয়ত স্যারই আপনাকে বলবেন। আমি আগেই বলে ফেললাম। আপনি এটাকে অফিসিয়ালি বা পারসোন্যালি, যেভাবে ইচ্ছা নিতে পারেন।  

আমার কান দুটি হাল্কা গরম হয়ে উঠেছে। তাপের আঁচ পাচ্ছি। যে ব্যাপারে গবেষণা করতে এসেছি, সেখানে ড্রাগসের পার্টনার হিসাবে আছে সেক্স। অতএব এই মেয়েকে সরিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না। অতি অভিজ্ঞ মেয়ে। হয়ত ভালো তথ্য ও লিঙ্ক দিতে পারবে। খুব কষ্টে নিজেকে সামলে বললাম:

-ঠিক আছে রোকসানা। আমার যে কোনও প্রয়োজনে আমি তোমার সঙ্গে শেয়ার করবো। ইনফ্যাক্ট তোমার সাহায্য আমার লাগবে। তুমি খুব স্ট্রেইট কথা বলো। রাখঢাক, প্যাঁচ নেই। এটা ভালো গুণ। ধন্যবাদ।

রোকসানা একটি মেকি ভয়ের চিহ্ণ মুখ থেকে মুছে বললো:

-বাঁচালেন স্যার। আমি টেনশনে পড়ে গিয়েছিলাম। অনেকে আবার বাস্তবতাকে লুকিয়ে রেখে বক ধার্মিক সাজে। এ রকম মিনমিনে  মিনসেদের আমি একদম সহ্য করতে পারি না। যেটা বাস্তব ও প্রয়োজনীয়, সেটা খোলাখুলি বল বাবা। এত নাটঙ্কী কেন!

সব কথার উত্তর দিতে নেই। কিছু না বলে আমি ওর কথায় তাল দেওয়ার জন্য হাল্কা হাসিতে সম্মতি জানালাম। আমার সম্মতি ওকে আরও ফ্রি করে দিল। সে অবলীলায় বলে চলেছে:

-আপনি অনেক দিন পর এসেছেন স্যার। ঢাকা আগের মতো নেই। কত হঠাৎ ধনী হওয়া লোক বৌ, সমাজকে লুকিয়ে আলাদা ফ্ল্যাট ভাড়া করে মেয়ে মানুষ পুষছে, সেটার কোনওই ইয়াত্তা নেই। কিন্তু বাইরে দেখাচ্ছে মহা ভক্তের ভাব। গা জ্বলে যায় স্যার।

কথা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমিও সায় দিয়ে বলি:

-হিপোক্রেসি করার দরকার কি! যা করবে প্রকাশ্যে ও সাহসের সঙ্গে করলেই হয়।

খুব পছন্দ করলো আমার কথা রোকসানা। কথা বলতে বলতে আমার আরও পাশে ঘেঁসে এলো সে:

-আপনি একদম ঠিক বলেছেন স্যার। কিন্তু সেটা করবে না। সব ব্যাটাই একস্ট্রা চান্স মারতে চায়। নিষিদ্ধ মজা লোটার আরামই নাকি আলাদা। সাহস থাকে তো পুরুষের কাজ কর। না, সব গুপ্ত-পুরুষ। আসলে কাপুরুষ।

কথা আর এগুতে পারলো না। নতুন নতুন উড়াল সেতুর কারণে যানজট এড়িয়ে লালমাটিয়ায় চলে এসেছে গাড়ি। একটা চৌদ্দ তলা ভবনের পার্কিং লটে এসে নামলাম আমরা।

বিদেশে যেমন পরিকল্পনা করে এপার্টমেন্ট তৈরি হয়, এটা তেমন নয়। মনে হচ্ছে আস্ত একটি গ্রামকে এনে জবরদস্তি করে তোলা হয়েছে। প্রতি ফ্লোরে দশটি করে মোট ১৪০টি ফ্ল্যাট। মাটির নীচে পার্কিং। আমার থাকার জায়গা দশ তলায়। বাইরে খানিকটা সোরগোল থাকলেও ভিতরটা একেবারেই সুনশান। ঘরে ঢুকে গেলেই অখণ্ড প্রাইভেসি। কার ঘরে কি হচ্ছে কিচ্ছু জানবার-বুঝবার উপায় নেই।

ড্রাইভারকে মাল নিয়ে আসার অর্ডার দিয়ে রোকসানা আমাকে নিয়ে লিফটের কাছে আসতে আসতে এপার্টমেন্টের গুণগান করলো। পথে কেয়ারটেকার ও সিকিউরিটিকে ডেকে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল:

-আমাদের নতুন স্যার। এখন থেকে এখানেই থাকবেন। লক্ষ্য রাখবে, কোনও অসুবিধা যেন না হয়।

বিশাল লিফটের দরজা খুলতেই আমরা ঢুকে গেলাম। লিফটে আরও তিনটি মেয়ে রয়েছে। রোকসানার বয়সী হবে। অতি আধুনিক পোশাক গায়ে। টাইট জিন্স, টি-শার্ট। যৌবন মনে হচ্ছে ফেটে বেরিয়ে আসতে চাইছে। বেসমেন্ট থেকে ওরা উঠেছে। রোকসানাকে দেখেই হৈ হৈ করে প্রায়-ঝাঁপিয়ে পড়ল:

-হাই জানি! অনেক দিন পর দেখা। আর তো ঢাকো-টাকো না। তোমাকে খুব মিস করি।

রোকসানা ওদের দিকে কটমট করে তাকানো। ইঙ্গিতে জানালো, দেখছো না সঙ্গে একজন ভদ্রলোক আছেন! মেয়েগুলো সম্ভবত ইঙ্গিত বুঝতে পারলো। কিন্তু বিশেষ পাত্তা দিল না। ঢঙ্গে শরীর দুলিয়ে বললো:      

-সরি রুক। সঙ্গে উনি কে? নতুন লাগছে?
-স্যারের বন্ধু। কানাডা থেকে এসেছেন। এখানে থাকবেন কিছুদিন।

রোকসানার কথায় তিন মেয়েই টর্চের মতো চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো:

-বেশ, ভালোই হলো। নতুন প্রতিবেশী।

তারপর রোকসানার দিকে চেয়ে ইঙ্গিতপূর্ণভাবে বললো:

-একদিন নিয়ে এসো আমাদের কাছে। কিংবা আমাদেরকেই না হয় ইনভাইট করো।

লিফট দশ তলায় চলে এসেছে। নামতে নামতে রোকসানা বলল:

-সে দেখা যাবে। ওকে, বাই।

রোকসানা নামলেও আমি নামতে পারছি না। মেয়েগুলো দরজা ঢেকে দাঁড়ানো। আমার দিকে ঢুলুঢুলু চোখে তাকিয়েই আছে। আমি বেশ বিব্রত বোধ করছি। ওরা আমার অবস্থা দেখে আমাকে পথ ছেড়ে দিল। লিফট ছাড়ায় আগে একজন একজন করে অবলীলায় হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করলো। তাদের করতলে আলাদা টান।

-নাইস টু মিট য়্যু। আবার দেখা হবে।
-নিশ্চয়। নিশ্চয়। আবার দেখা হবে।

বলে আর কাল বিলম্ব করলাম না। মেয়েগুলোকে কোনও মতে পাশ কাটিয়ে নেমে এলাম।

-কিছু মনে করবেন না স্যার। আজকালকের মেয়ে। বড়ই ক্রেজি।
ফ্ল্যাটের দরজায় চাবি লাগাতে লাগাতে বলল রোকসানা। আমিও কিছু হয় নি এমন ভাব করে বললাম:

-না না ঠিক আছে। আমি কিছু মনে করি নি।

ফ্ল্যাট দেখে অবশ্য মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে। একজনের জন্য দুই হাজার স্কয়ার ফুটের ফ্ল্যাট বাড়াবাড়ি রকমের বড়। আমি কপট বিরক্তি নিয়ে বলি:

-এটা ঠিক করো নি রোকসানা। এই খেলার মাঠে আমি একা কি করবো? সামলাবো কিভাবে?

রোকসানা হাসলো:

-ওসব আপনাকে ভাবতে হবে না। অফিস থেকে কোম্পানি ঠিক করা আছে। ওদের কাছে চাবিও দেওয়া আছে। মেইনটেনেন্স ওরাই করবে। আপনি শুধু আনন্দে বসবাস করে যান।

খিল খিল করে কিশোরীর মতো হেসে উঠল রোকসানা। মেয়েটিকে যতটা সুন্দরী ও লাস্যময়ী ভেবেছিলাম, তারচেয়ে  সে অনেক বেশি কিউট ও আবেদনময়ী। ঘরের নিজস্বতার মধ্যে এসে সে যেন  নিজেকে আরও উন্মুক্তভাবে খুলে দিয়েছে। সে শরীর নাচিয়ে বললো:

-এটা স্যারের একটা রিক্রিয়েশন সেন্টারের মতো। আধুনিকভাবে সাজানো। বিদেশি পার্টি, দেশি আমলা-হোমরা-চোমরারা মৌজ-মাস্তি করতে আসে। ব্যবসা পেতে হলে এসবের ব্যবস্থা এদেশে করতে হয়।

আমি মাথা ঝাঁকাই:
-তা ঠিক। কিন্তু...

রোকসান সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল:
-এনিথিং রং স্যার! থামলেন কেন, বলুন?

আমি আমার অসমাপ্ত বাক্য শেষ করি:
-কিন্তু...আমি ওঠায় তোমাদের কোম্পানির তো ক্ষতি হবে?

রোকসানা আমার কথা গায়েই মাখলো না:
-কি যে বলেন স্যার। আমাদের এমন পাঁচটা ফ্ল্যাট আছে ঢাকা শহরে। কোনও অসুবিধা হবে না।

কথা বলতে বলতেই চট করে এক কাপ কফি বানিয়ে ফেলেছে রোকসানা। আমার হাতে কফির পেয়ালা ধরিয়ে দিয়ে বলল:

-এনামুল স্যার আপনার জন্য একটি মোবাইল সেট দিয়েছেন। এই নিন। স্যার ও আমার নম্বর সেভ করা আছে। অফিসের ড্রাইভারের নম্বরও আছে। যাকে যখন দরকার নির্দ্বিধায় ফোন করবেন। বিল অফিস পে করবে।

হাতে নিয়ে দেখি মোবাইল সেটটা বেশ সুন্দর। লেটেস্ট এন্ড্রয়েড। গান, ক্যামেরা সবই আছে।

‘দিল তো প্যাগল হ্যায়...’। হাতে নিতে না নিতেই মোবাইল বেজে উঠল। হিন্দি হিট সঙ কলটোনে বুদ্ধি করে কে লাগিয়েছে? রোকসানা না এনামুল? আমি ফোন রিসিভ করি:

-হ্যালো!
-এসে গেছিস তাহলে? বিরাট জার্নি করেছিস, আরাম কর। রাতে আমি আসব। এক সাথে খেতে খেতে তোর সব প্রোগ্রাম শুনব। ওকে দোস্ত।

এনামুলটা কিছুটা বেয়াড়া হলেও বেশ কেয়ারিং।

ময়ুরাক্ষী নদীর মতো ছলাৎ ছলাৎ ঢেউ তুলে রোকসানা চলে গেল। লিফটের মেয়েগুলো সম্পর্কে সে কিছু বলবে ভেবেছিলাম। ফ্ল্যাটের একান্ত আবহে যেভাবে উন্মোচিত হয়েছিল মেয়েটি, এনামুলের ফোনের পর সেভাবেই মিইয়ে গেল। রোকসানার অকস্মাৎ চলে যাওয়া দেখতে দেখতে আমার মনে হলো, ‘নদী একা সন্ধ্যা বেলা দূরে চলে যায়...’। (চলবে)

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৪, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।