ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপন্যাস

নীল উড়াল: সপ্তম পর্ব

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৭
নীল উড়াল: সপ্তম পর্ব নীল উড়াল

নায়ক ম্যাকগিল ভার্সিটির অধ্যাপক-লেখক-অভিবাসী বাংলাদেশি। ফরাসি সুন্দরী মার্গারেট সিমোনের প্রণোদনায় দেশে মাদকচক্র নিয়ে গবেষণাকালে ঘটনা মোড় নেয় রোমাঞ্চকর বাঁকে। আসে ধুরন্ধর বন্ধু-অস‍ৎ ব্যবসায়ী এনামুল, সুন্দরী স্টাফ রোকসানা, মধুচক্রের জেনিফার-মলি-পরী, ক্লিনিকের অন্তরালের মিসেস খোন্দকার, রমনার শফি মামা ও ফুলি, ‘উড়াল যাত্রা’র সাইফুল, বিড়ালের কুতকুতে চোখের তরুণ সাংবাদিক ফরমানউল্লাহ এবং ছোটখালার রহস্যময় মেয়ে অন্তরা। প্রেম ও বেঁচে থাকার যুগল উড়ালে কাহিনী আবর্তিত হতে থাকে।

৭.
এনামুল আগ বাড়িয়ে নিজে থেকেই পরামর্শ দিল, কাজ শুরুর আগে একজন অভিজ্ঞ সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলে নিতে। তাতে প্রয়োজনীয় নানা সূত্রের সন্ধান পাওয়া যাবে।

তথ্য-উপাত্তও মিলবে। তাছাড়া কাদের সঙ্গে কথা বলতে হবে, যোগাযোগ করতে হবে, সে সম্পর্কেও একটি ধারণা পাওয়া যাবে।

নীল উড়াল: ষষ্ঠ পর্ব

শেষ বার ঢাকায় এসে দেখেছি ইত্তেফাক থেকে দৈনিক বাংলা পর্যন্ত এলাকাতেই সব পত্রিকার অফিস। এখন সে রকম নেই। ইত্তেফাকের মোড় বলে জায়গাটি আছে বটে, কিন্তু খোদ পত্রিকাটি সেখানে নেই। প্রায়-সকল পত্রিকাই চলে এসেছে কারওয়ান বাজারে। কিছু মিডিয়া হাউজ আরও পশ এলাকা বনানী, গুলশানে, বসুন্ধরায় চলে গেছে।

এনামুলের দেওয়া ঠিকানা মিলিয়ে একটি রঙিন ট্যাবলয়েড পত্রিকার অফিসে শামীমুল হককে পাওয়া গেল। তিনি পত্রিকাটির নির্বাহী সম্পাদক। রিপোর্টিং দিয়ে জীবন শুরু করে এখন শীর্ষে পৌঁছেছেন। অনেক ব্যাপারেই হাঁড়ির খবর রাখতে হয় তাকে। আমার সব কথা মনোযোগ দিয়ে শুনে বললেন:

-আপনাকে কয়েকটি সাহায্য করতে পারি। আমাদের পত্রিকার রেফারেন্স বিভাগে ইচ্ছে মতো নতুন-পুরাতন পত্রিকা ঘেঁটে তথ্য সংগ্রহের সুযোগ দিতে পারি। আর তিনজন মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলতে পারি। এতে আপনার কাজের প্রাথমিক ধাপটি সহজ হয়ে যাবে।

আমি স্বাভাবিক কারণেই জানতে চাই:
-তিনজন লোক কারা?

শামীম আঙুলে গণনা করে বললেন:
-প্রথমজন ডা. ফাহমিদ। মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ। মাদকাসক্তরা তার কাছে চিকিৎসার জন্য যায়। তিনি আপনাকে মাদক গ্রহণের কারণ, কোত্থেকে মাদক পায়, কেন মাদক গ্রহণ করছে, সেসব জানতে পারবেন।
-দ্বিতীয়জন?
-ড. ইমদাদুল হক। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। অস্ট্রেলিয়া থেকে তিনি মাদক ও উপনিবেশিক শাসন সম্পর্কে পিএইচডি করেছেন। তিনি এর রাজনীতি-অর্থনীতি সম্পর্কে বলতে পারবেন আপনাকে।
-আর তৃতীয়জন?
-ড. ভূইয়া মনোয়ার কবির। তিনি অধ্যাপনা করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। সীমান্ত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন। সেখানে চোরাকারবার, বিশেষ করে মাদক পাচার নিয়ে তিনি আপনাকে জানাতে পারবেন। এতে মাদকের উৎস ও রুট সম্পর্কে আপনার ধারণা হবে।

শামীম সত্যিই অভিজ্ঞ সাংবাদিক। আমার জ্ঞাতব্য বিষয়ে তিন দিক থেকে আলোকপাতের চমৎকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তাকে ধন্যবাদ জানাতেই বিনয়ে লজ্জিত হলেন:

-কি যে বলেন? এটা তো আমার দায়িত্ব। আরও কোনও সাহায্যের দরকার হলে আমাকে বলতে দ্বিধা করবেন না। আমি তিনজনকেই আপনার কথা বলে দিচ্ছি। তারা আশা করি যথাসাধ্য সহযোগিতা করবেন আপনাকে।

চলে আসার সময় শামীমুল হক তার লেখা সর্বশেষ বই ‘সবজান্তার দেশে’ উপহার দিলেন। এই লেখক-সাংবাদিকের সঙ্গে পরিচিত হয়ে ভালো লাগল।

আসার সময় আমি বলি:
-কাজ শুরুর আগে আপনার বই পড়ে দেশের আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়ে জেনে উপকৃত হতে পারব  আশা করি।

একই রকমের বিনয়ী হাসিতে তিনি আমার কথায় সম্মতি জানালেন এবং হাসি মুখেই অফিসের গাড়ি বারান্দা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে এলেন। করিডোরে একজনকে দেখে বললেন:

-কেমন আছো ফরমানউল্লাহ?
-জ্বি, শামীম ভাই ভালো।

কানে ফোন চেপেই জানাল ফরমানউল্লাহ নামের ছেলেটি। শামীম পরিচয় করিয়ে দিল:
-আমাদের জুনিয়র রিপোর্টার।

আমি ও শামীম কেউই জানলাম না, আমাদের আলোচনার সব খবর ফরমানউল্লাহর মাধ্যমে এনামুলের কাছে তৎক্ষণাৎ পৌঁছে গেছে।

শামীমের অফিস থেকে বের হয়েই ভাবলাম, ফ্ল্যাটে গিয়ে পুরো কাজের একটি রুটিন করে ফেলা দরকার। তাহলে ডে-বাই-ডে কাজটি এগিয়ে শেষ করা সহজ হবে। আপাতত জরুরি কোনও কাজ না থাকায় ফ্ল্যাটে চলে এলাম। লিফটে আজও তের তলার তিন তরুণীর একজনের সঙ্গে দেখা। জড়ানো চোখে আমার দিকে হাসি ছুঁড়ে দিল মেয়েটি:

-ভালো আছেন? কই এলেন না তো আমাদের ওখানে। একদিন চলে আসুন। ভালো লাগবে।

আমি যথেষ্ট ভাবলেশহীন গলায় বলি:
-সবে তো এলাম। একটু গুছিয়ে নিই। তারপর অবশ্যই আসব।

তরুণী ছাড়বার পাত্রী নয়। প্রায়-গায়ে পড়ার মতো নিকটে এসে বললো:
-গোছানোর কাজে আমাকে ডাকবেন। আমি মোটামুটি ফ্রি-ই থাকি।

আমি দশ তলায় নামতে নামতে বললাম:
-নিশ্চয়। দরকার হলে ডাকব।

গুলশান ক্লাবের কথা ইচ্ছা করেই এড়িয়ে গেলাম। আজকালকার তরুণ-তরুণীদের বেশি বোঝা যায় না। কেমন যেন আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতে রান্নাঘরে উঁকি দিলাম। বাসায় খাবার যথেষ্ট পরিমাণেই আছে। গরম করে খেলেই হবে। শামীমের বইটিতে শুয়ে শুয়ে চোখ বুলানো যেতে পারে। তারপর খেয়ে গবেষণার ছক তৈরির কাজ ধরব। আজ আর বেশি লোড নেওয়ার দরকার নেই। হাল্কা পড়াশোনার করে চালিয়ে দিলেই হবে।

বাংলাদেশে সৃজনশীল প্রবন্ধ সাহিত্যের অভাব অনেকেই লক্ষ্য করেন। বর্তমানে গল্প-কবিতার তুলনায় প্রবন্ধ-সাহিত্যে নান্দনিক ভাষা, বিশ্লেষণ, সৃজনী শক্তি, মননশীলতার বহিঃপ্রকাশ কম। পত্রিকায় যে সকল কলাম ছাপা হয়, সেগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চটুল, চিন্তাহীন এবং সাহিত্যের পদবাচ্য রূপে বিবেচনার যোগ্য হয় না। এমনই খরার মধ্যে সাম্প্রতিক বাংলাদেশে সৃজনালোকে উদ্ভাসিত কিছু প্রবন্ধ চোখ জুড়ায়; চিন্তাকে উদীপ্ত করে; মননকে ঋদ্ধ করে। সন্দেহ নেই তীব্র মতাদর্শিক মেরুকরণের ক্রান্তিকালে পক্ষপাতহীন নৈর্ব্যক্তিকতায় সত্যের প্রতিধ্বনি করা বিরাট কঠিন কাজ। শক্তি ও ক্ষমতার দাপটের মধ্যে আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিকসহ সমকালকে সামগ্রিকভাবে চিত্রিত করাটাও বড়ই বিপদ-সঙ্কুল। বিশেষত দুর্নীতি, অন্যায়, অপকর্ম, অত্যাচার ও অসঙ্গতিকে যুক্তি, ইতিহাস, উপমা, শ্লেষ ও হিউমার-স্যাটায়ারের আঙিকে উপস্থাপনের জন্য দরকার প্রচণ্ড নিরীক্ষণী ক্ষমতা, সাহস ও পারঙ্গমতা। যদি বলি এই মুহূর্তের বাংলাদেশকে, বাংলাদেশে বিরাজমান রক্ত-আন্দোলন-হট্টগোল-উদভ্রান্ত পরিস্থিতিকে এক কথায় কি নামে অভিহিত করবেন? অনেকেই ব্যর্থ হবেন। খুবই কঠিন হবে শিরোনাম দেওয়া। কিন্তু লেখক-সাংবাদিক শামীমুল হক খুবই স্বাচ্ছন্দ্যে চলমান পরিস্থিতির নামকরণ করছেন ‘সবজান্তার দেশে’। তুলে ধরেছেন সর্ব-সাম্প্রতিক বাংলাদেশের আলো ও অন্ধকারের সজীব ও বাস্তব প্রতিচিত্র।

বাহ! বেশ তো। শামীমেরই বইটির প্রতি আমার আগ্রহ বেড়ে যাচ্ছে।

দৈনিকে দীর্ঘদিন ধরে যে সাপ্তাহিক কলামগুলো শামীমুল হক লিখে থাকেন সম-সাময়িক প্রসঙ্গে, সেখান থেকে বাছাই করা কিছু নিবন্ধ তিনি সংগ্রন্থিত করেছেন ‘সবজান্তার দেশে’ গ্রন্থে। শামীমের লিখায় গদ্য-কার্টুন বা সাহিত্যে ব্যবহৃত নকশাধর্মী স্টাইলের ছায়াপাত ঘটেছে। একেকটি আলোচিত বিষয় পিন-পয়েন্টে নিয়ে সেটাকে নিজের মন্তব্যের রসে আলোচনা-সমালোচনা করেন তিনি; সঙ্গে যুৎসইভাবে ব্যবহার করেন কোনও প্রাসঙ্গিক গল্প, কৌতুক, উপমা বা লৌকিক উদাহরণ। শামীমের ভাষা স্বাদু, বিশ্লেষণ তীক্ষ্ণ, আলোচনা মেদবিহীন ও সংক্ষিপ্ত। একবিংশ শতাব্দীর দ্রুতলয় প্রযুক্তিতে পাঠকের ওপর বিরাট বোঝা চাপিয়ে তিনি তার আলোচনাকে ক্লান্তিপূর্ণ করেন না। খুবই গতিশীলভাবে এগিয়ে নিয়ে যান।

‘সবজান্তার দেশে’ গ্রন্থভুক্ত হয়েছে আটাশটি লিখা। প্রতিটি রচনাতেই লাগসই শিরোনামে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহের আলোচনা উপস্থাপিত হয়েছে শামীমের নিজস্ব শৈলীতে। শামীমের রচনা থেকে কয়েকটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি স্পষ্ট করা যেতে পারে।

ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র ক্যাডারদের হাতে বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অবিমিষ্যকামীতার কথা তিনি গ্রামের এক জনদুর্ভোগকারী মোড়লের তুলনা দিয়ে ‘সর্বনাশ ডেকে আনার ইতিহাস’ প্রবন্ধে যথার্থই ব্যক্ত করেছেন। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে ক্রমাবনতির দিকে ঠেলে দেওয়ার জন্য সে সকল সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা এখন সুস্পষ্ট। ট্র্যাজেডি ও সমস্যা কিভাবে আমাদের নিত্য আক্রান্ত করছে সেটা তিনি দেখিয়েছেন ‘বইয়ে সাঁতার শেখা আর...’ প্রবন্ধে। বাক্যবাগীশদের কারণে কেমনে সত্য অন্তর্হিত হয়, ঘোলাজলের সৃষ্টি হয়, সেটাও বলেছেন নাম প্রবন্ধ ‘সবজান্তার দেশে’।

এটা ঠিক যে, শামীম গুরুগম্ভীর তাত্ত্বিক আলোচনায় পাঠককে ভারাক্রান্ত করেন নি। যেমনটি বাংলাদেশে হর-হামেশাই হয়। যে কোনও বিষয় লিখতে গেলেই ইতিহাস ও তত্ত্বের ঝাঁপি খুলে বসেন অনেকেই। সহজ কথা সহজে বলার ক্ষমতা সকলের হয় না। শামীমের আছে। পাঠককে কিছুটা মজা, কিছুটা কৌতুক, কিছুটা উদাহরণের মধ্যে দিয়ে তিনি সত্য ও সঠিক কথাটি বলতে দ্বিধা করেন না। এই স্টাইলের জন্য তার রচনা অনন্য বৈশিষ্ট্য পেয়েছে। আর দশজনের লেখার মতো গতানুগতিক হয় নি। নিজস্বতার একটি স্বতন্ত্র ধারার জন্য শামীমের লিখাকে আলাদা করে চেনা যায়।

শামীমুল হক লেখালেখির সূচনা থেকেই নিজের স্বাতন্ত্রিক বৈশিষ্ট্যের ব্যাপারে সচেতন। ইতিপূর্বে প্রকাশিত ‘বেহুদা প্যাঁচাল’, ‘বেহুদা প্যাঁচাল-২’, ‘এবং ধাক্কা’, ‘মিস কল’, ‘আহাম্মক নাম্বার টেন’ ইত্যাদি গ্রন্থে তিনি তাঁর রম্য কলমকে একনিষ্ঠ রেখেছেন। হাস্য-কৌতুকের বাতাবরণে সামাজিক-রাজনৈতিক অসঙ্গতির প্রতি তীব্র কষাঘাত হানায় তিনি বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেন নি। বাংলা প্রবন্ধ সাহিত্যে রম্য রচনার ধারা যদিও অতি গুরুত্বপূর্ণ, তথাপি বাংলাদেশে এই ধারাটি প্রায়-শুকিয়েই যাচ্ছিল। উন্নত ও সূক্ষ্ম জ্ঞান, গভীর বোধ, সৃজনী ক্ষমতা, মননশীল দৃষ্টিভঙ্গি এবং গভীর অন্তর্দৃষ্টি না থাকলে এমন সহজ-সরলভাবে কঠিন বাস্তবকে সাধারণ পাঠকের কাছে তুলে ধরা সম্ভব হয় না। শামীম সেই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন।

বাংলাদেশের সৃজনশীল প্রবন্ধের ধারায় নিজস্ব স্বকীয়তায় প্রাণাবেগ এনেছেন, রম্যরচনার মরা গাঙে জোয়ার নিয়ে এসেছেন। তরুণ প্রাবন্ধিক-সাংবাদিক শামীমুল হক সরাইল, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সন্তান। তার কলমকে গতিশীল রাখলে একদা বাংলাদেশের প্রবন্ধ সাহিত্যের রম্য ঘরানায় নিজের জন্য একটি স্থায়ী জায়গা করে নিতে পারবেন-বইটি পড়তে পড়তে এই আশাবাদ জেগে রইল। দেখা হলে ভালো একটি বই লেখার জন্য শামীমকে ধন্যবাদ দিতে হবে। বইয়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও বিশ্লেষণ নোট করে রাখলাম পরে কাজে লাগানোর প্রয়োজনে।

বইটি পড়ে টেবিলে রেখে খাবার গরম করতে উঠব, এমন সময় ইন্টারকম বাজছে। কে হতে পারে? আমার কথা তো ঢাকায় বিশেষ কেউ জানে না। আমি তো কাউকে আসতেও বলি নি! কিছুটা অবাক হয়েই আমি কল রিসিভ করি:
_হ্যালো।

মাদকতাময় গলায় ওপাশ থেকে এক তরুণী কণ্ঠ বলে উঠল:
-হাই। আমি মলি।

আমি তো মলি নামে কাউকে চিনি না? সবিস্ময়ে জানতে চাই:
-মলি কে?

রহস্য মোচনের ঢঙে তরুণীটি বলে:
-আরে বাবা, এই তো লিফটে দেখা হলো। তের তলার।

এবার আমি সব বুঝতে পারি। ফরমাল কণ্ঠে বলি:
-ও আচ্ছা। চিনতে পেরেছি। তারপর কি ব্যাপার, বলুন?

তরুণী আমাকে চমকে দিয়ে বলে:
-আপনার কথা আন্টিকে বলেছি। নিন কথা বলুন।
আমার অনুমতির কোনও পরোয়া না করেই মলি নামের রহস্যময় তরুণীটি আরেকটি মহিলাকে ফোন ধরিয়ে দিলো:

আরও মাদকতাময়, আরও আগ্রাসী আরেকটি নারী কণ্ঠ এবার ফোনের ওপাশ থেকে ভেসে এলো:
-কেমন আছেন?

আমি নাজুক গলায় বলি:
-জ্বি ভালো।

মহিলার গলায় আমন্ত্রণের ধারা:
-আপনার কথা শুনলাম। একা থাকেন। বেশ কষ্ট। ইচ্ছে হলেই চলে আসবেন আমাদের কাছে।

আমি নিজেকে সামলে বলি:
-একটু সময় করে নিই। তারপর আসব।

বিদ্যুতের মতো ঝলক দিয়ে নারী কণ্ঠ বললো:
-অপেক্ষায় থাকব। বাই।

ফোন হাতে আমি বিমূঢ়ের মতো কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকি।

শেকসপিয়ার সাহেব বলেছেন, ‘রিড, বিটুইন দ্য লাইন্স’। ভদ্রমহিলা লৌকিক ভদ্রতাসূচক আমন্ত্রণের শব্দগুলোর মাঝখানে কী বলতে চেয়েছেন? আমি ঠিক বুঝতে না পারলেও তার ভিতরের অব্যক্ত কিছু একটা টের পাচ্ছি। আসলে কী বলতে চায় তের তলার তরুণী মেয়েটি এবং তার আন্টি? আমি যে একা থাকি এবং এখন বাসাতেই আছি, এ কথাও ওরা জানল কিভাবে?

অজানা-অচেনা নারীদের রহস্যময়তায় আমার বিমূঢ়তা বাড়তে থাকে। (চলবে)

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৭
জেডএম/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।