ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বইমেলা

হাঁটি হাঁটি পা পা, বর্ণমালা ছুঁয়ে যা

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬২৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৮
হাঁটি হাঁটি পা পা, বর্ণমালা ছুঁয়ে যা মায়ের কোলে শিমিন বাবার হাতে দেখছে বই। ছবি: জিএম মুজিবুর

অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: খালি পা, কপালে বাঁধা সাদা কাপড়ে লেখা ‘অমর একুশে’। কারও আবার গালে রঙতুলির আঁচড়ে লাল-সবুজের পতাকার আল্পনা। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদনের প্রভাতফেরি শেষে বইমেলায় এসেছে তারা। এদেরই একজনের নাম শিমিন। মাত্র ২ বছরে পা বাড়িয়েছে সে। তবে বাবা-মায়ের প্রেরণায় এখনই বর্ণমালার সঙ্গে পরিচয় হয়ে গেছে ছোট্ট এ সোনামণির।

বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে বাবা-মায়ের হাত ধরে সে এসেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। এক হাতে পতাকা ধরে বাবার কোলে থেকেই অন্য হাতে নেড়ে দেখছিলো বই।

বাবাও খুব যত্নে তাকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন বাংলা বর্ণমালার সঙ্গে।

শুধু শিমিন নয়, জেসিয়া, তবারাক, ফিহির আর আদিবার মতো আরও অনেক ছোট্ট শিশু প্রভাতফেরি শেষে একটু অপেক্ষা করে বাবা-মায়ের সঙ্গে আজ হাঁটি হাঁটি পায়ে এসেছে বইমেলায়। তাদের কারও বয়স দুই ছাড়িয়েছে, কারওবা তারও নিচে। শিশুদের সঙ্গে এসেছেন তাদের অভিভাবকেরাও।  

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস উপলক্ষে এ দিন বইমেলার দুয়ার খুলে দেওয়া হয় সকাল ৮টায়। তখন থেকেই শত শত বইপ্রেমী মেলায় আসতে শুরু করেন। ভাষা আন্দোলনে আত্মত্যাগী জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শোক ও শ্রদ্ধায় প্রায় সবার গায়েই সাদাকালো পোশাক।  

মেলা প্রাঙ্গণে কথা হয় শিমিনের বাবা মোস্তাক আহমেদের সঙ্গে। স্টলে স্টলে ঘুরে মেয়েকে বই দেখাচ্ছিলেন তিনি। কিনেছেনও বেশ কয়েকটি। বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘এখনই তো বাচ্চাকে বর্ণমালার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার সময়। তার ওপর এখন ভাষার মাস। তাইতো মহান এ দিনে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ওকে নিয়ে চলে এলাম বইমেলায়। ’

ক’দিন আগে বসন্তের প্রথম দিনে মেলা যেমন বর্ণিল হয়ে উঠেছিল বাসন্তী রঙে, তেমনি একুশের দিনে মেলায় স্পষ্ট ভাষা আন্দোলনের শোকের ছায়া। তেমনই একজন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী নাদিয়া আফরিন। পরেছেন কালো পাড়ের সাদা শাড়ি। শহীদ মিনারে বন্ধুদের সঙ্গে ফুল দিয়ে সরাসরি মেলায় ঢুকেছেন। কিনেছেন হেলাল হাফিজের কবিতার বই।

তিনি বলেন, ‘একুশ তো আমাদের অহংকার। আজ বন্ধুদের সঙ্গে সকালে শহীদ মিনারে গেলাম শ্রদ্ধা জানাতে। সেখান থেকেই বইমেলায়। কিছু বই কিনেছি, এখন ঘোরাঘুরি করছি। বইমেলা থেকে বের হওয়ার আগে আরও অনেক বই কেনার ইচ্ছে আজ। ’

আজ মেলায় কেবল ঘুরতে আসা নয়, অনেকেই প্রিয় লেখকের প্রিয় বইটি কিনে উপহার দিচ্ছেন প্রিয়জনকে। মোড়কের নিচে সাদা কাগজে লিখে দিচ্ছেন একুশের প্রিয় পঙক্তিমালাও।

এমন পঙক্তিমালা যেন সুদূর শহীদ মিনার থেকে ভেসে আসে। মাইকের সে আওয়াজ শোনা যায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণেও। ‘‘মাগো, ওরা বলে সবার কথা কেড়ে নেবে/ তোমার কোলে শুয়ে গল্প শুনতে দেবে না/ বলো, মা, তাই কি হয়? তাইতো আমার দেরি হচ্ছে/ তোমার জন্য কথার ঝুড়ি নিয়ে তবেই না বাড়ি ফিরবো। ’

সেদিন মায়ের জন্য কথার ঝুড়ি নিয়ে ফেরা না হলেও মুখের ভাষাকে কেড়ে নিতে দেননি বাংলার দামাল ছেলেরা। প্রাণ বিলিয়ে দিয়ে মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষা করেন রফিক, শফিক, সালাম, বরকত, জব্বার। সেই আত্মদানেই বাংলা রাষ্ট্রভাষা, সেই অর্জনেই মুক্তির সংগ্রাম, স্বাধীনতা অর্জন এবং আজকের এই বইমেলা।

মেলার প্রকাশকরাও আশা করছেন, একুশের দিন মেলা জমজমাট হবে। দোয়েল চত্বর বা শাহবাগ দিয়ে জনস্রোত নামবে বইমেলার প্রাঙ্গণে।

বাংলাদেশ সময়: ১২২২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৮
এইচএমএস/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।