সোনারগাঁওয়ে অবস্থিত বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন চত্বরে মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া মেলা চলবে আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ উপলক্ষে ইতোমধ্যে ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।
লোকজ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
ফাউন্ডেশনের পরিচালক কবি রবীন্দ্র গোপের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির যুগ্ম মহাসচিব লিয়াকত হোসেন খোকা, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক রাব্বী মিয়া, সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট সামসুল ইসলাম ভূঁইয়া, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান কালাম, সোনারগাঁও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদসের সাবেক কমান্ডার সোহেল রানা প্রমুখ।
রোববার (১৩ জানুয়ারি) দুপুরে ফাউন্ডেশনের লাইব্রেরি মিলনায়তনে সাংবাদ সম্মেলনে ফাউন্ডেশনের পরিচালক কবি রবীন্দ্র গোপ এসব কথা সাংবাদিকদের জানান।
এবারের মেলার আকর্ষণ গ্রামীণ লোকজ সংস্কৃতির অন্যতম মাধ্যম ‘ভালবাসার তামা- কাঁসা-পিতল শিল্পের’ বিশেষ প্রদর্শনী। প্রদর্শনী উপলক্ষে গবেষণামূলক একটি ক্যাটালগ প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ। এবারের এ উৎসবের বাজেট ধরা হয়েছে ৭০ লাখ টাকা। গত বছরের মতো এবারও মেলা নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, মঙ্গলবার সকাল ১১টায় ফাউন্ডেশন চত্বরে সোনারতরী লোকজ মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধান অতিথি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। চত্বর প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশের পল্লী অ ল থেকে ৬০ জন কারুশিল্পী মেলায় প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছেন। তাদের জন্য ৩০টি স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ঝিনাইদহ ও মাগুরার শোলা শিল্প, রাজশাহীর শখের হাড়ি, চট্টগ্রামের নকশি পাখা, রংপুরের শতরঞ্জি, সোনারগাঁওয়ের হাতি ঘোড়া পুতুল ও কাঠের কারুশিল্প, নকশিকাঁথা, নকশি হাতপাখা, মুন্সিগঞ্জের শীতলপাটি, মানিকগঞ্জের তামা-কাঁসা পিতলের কারুশিল্প, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলার ক্ষুদ্র-নৃ-গোষ্ঠীর কারু পণ্য, কিশোরগঞ্জের টেরা কোটা শিল্প, সোনারগাঁওয়ের পাটের কারুশিল্প, নাটোরের শোলার মুখোশ শিল্প, মুন্সিগঞ্জের পট চিত্র, ঢাকার কাগজের হস্তশিল্পসহ মোট ১৭০টি স্টল থাকছে।
এছাড়াও লোক কারুশিল্প মেলা ও লোকজ উৎসবে বাউলগান, পালাগান, কবিগান, ভাওয়াইয়া ও ভাটিয়ালী গান, জারি-সারি ও হাছন রাজার গান,লালন সংগীত, মাইজভান্ডারী, মুর্শিদী, আলকাপ গান, গাঁয়ে হলুদের গান, বান্দরবান, বিরিশিরি, কমলগঞ্জের-মণিপুরী ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, শরিয়তি-মারফতি গান, ছড়া পাঠের আসর, পুঁথি পাঠ, গ্রামীণ খেলা, লাঠি খেলা, দোক খেলা, ঘুড়ি ওড়ানো, লোকজ জীবন প্রদর্শনী, লোকজ গল্প বলা, পিঠা প্রদর্শনী ইত্যাদি থাকবে।
সরেজমিনে রোববার দুপুরে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের মেলার মাঠে গিয়ে দেখা যায়, ইতোমধ্যে মেলার বিভিন্ন স্টলের দোকানিরা তাদের পণ্য সাজাতে শুরু করেছেন। এছাড়া মেলার মুড়ি, মুরকির দোকান সাজিয়ে বসেছেন।
যারা এখনও স্টল সাজাতে পারেননি তারা দোকান সাজানোর জন্য ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। রোববার বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের দর্শনার্থীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ফাউন্ডেশনে আগত দর্শনার্থীরা মেলা উদ্বোধনের আগেই তাদের কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন।
বাংলাদেশ লোক ও কারু শিল্প ফাউন্ডেশনের উপ-পরিচালক রবিউল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে মেলার প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। বাংলাদেশের লোক ও কারুশিল্পের ঐতিহ্য, দেশের প্রত্যন্ত অ লের বিলুপ্তপ্রায় লোকজ ঐতিহ্যকে পুনরুদ্ধার, সংগ্রহ, সংরক্ষণ, গবেষণা, প্রদর্শন এবং পুনরুজ্জীবন এ মেলার মূল উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৩, ২০১৯
এএটি