প্রতি গল্পেই রয়েছে আমাদের সমাজে ‘এক্সিস্ট’ করা সব চরিত্র। রয়েছে আমাদের নিত্যদেখা চারপাশ।
অনুপ আইচের প্রথম গল্পগ্রন্থ প্রসঙ্গে শক্তিমান কবি, ঔপন্যাসিক ও গল্পকার মলয় রায়চৌধুরী লিখেছেন— “অনুপ আইচ দুইটি উত্তরঔপনিবেশিক সংঘর্ষময় সমাজকে, তার দ্বন্দ্বময় তাড়নাগুলিকে, এতাবৎ তাঁর কবিতায় ধরে রাখার অবিরাম প্রয়াস করে গেছেন। তাঁর অভিজ্ঞতার প্রেক্ষাজনিত উদ্বেগ থেকে এবার জারিত হয়েছে সাতটি গদ্য। বাংলাদেশের বাঙালিকে যেভাবে প্রথমে ব্রিটিশ ও পরবর্তীকালে পাকিস্তানি সাম্রাজ্যবাদের চাপ এড়িয়ে তার ভাষাকে আগলে রাখতে হয়েছে, তা বাংলাদেশের বাইরে বসবাসকারী বাঙালিদের ভুগতে হয়নি। অনুপ আইচ তাঁর গদ্যগুলোয় সেই ভোগান্তি, বিভিন্ন চরিত্রের মাধ্যমে, মানুষ হোক বা মানবেতর প্রাণী, বাকমাধ্যমের রক্তমাংসে ধরে রেখেছেন এই বইটির গল্পগুলিতে। মর্মার্থ দিয়ে ঠাশা ব্যক্তি-মানুষের ও মানবগোষ্ঠীর তাবৎ অভিব্যক্তি, সামাজিক ক্ষমতাকে প্রতিবিম্বিত করে, এবং যুগপৎ তার, অর্থাৎ ওই ক্ষমতার, পুনঃসৃজন ঘটায়।
অনুপ আইচ তাঁর এই ছোটোগল্পের বইটিতে সেই পুনঃসৃজনের ছক তৈরি করেছেন। ব্যক্তি অথবা জীবন-সম্পর্কের মাঝে যে ক্ষমতাপ্রণালী অবিরাম কাজ করে চলে, অনুপ আইচ সেই প্রক্রিয়াকে বিশ্লেষণ করেছেন ঘটনাপ্রবাহের দ্বারা। ঘটনার প্রবাহকে তিনি ভেঙেছেন, সময় ও কাল-পরিসরকে তাদের পরিবর্তনশীলতা দিয়ে পরিমাপ করেছেন সাতরকম ভাবকল্পের দ্বারা। ফলত গল্পগুলির ভাবনাবিন্দু ভিন্ন-ভিন্ন। গল্পগুলিকে অনুধাবন করতে হলে অনুপ আইচের গঠনকরা মর্মার্থের স্ফূরণগুলোকে বুঝতে হবে এবং তা পাল্পফিকশান পড়ার মতো করে পড়লে চলবে না। বাংলাদেশের সাংস্কৃতির জটিলতায় গড়ে ওঠা সংকেতগুলিকে গুরুত্ব দিতে হবে অনুপ আইচের গল্পগুলি পাঠ করার সময়ে। মনে রাখতে হবে যে ভাষার বাইরের আর তার ভিতরের প্রসঙ্গগুলিকে পৃথক করা যায় না। আমি মনে করি গল্পগুলি যথেষ্ট সম্ভাবনাময়। ”
গল্পগ্রন্থটি প্রকাশ করছে দেশ পাবলিকেশন্স। এর প্রচ্ছদ করেছেন জনপ্রিয় কার্টুনিস্ট, প্রচ্ছদশিল্পী ফরিদুর রহমান রাজিব। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি মেলায় আসবে বইটি।
২০০০ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত নিয়মিত বিভিন্ন লিটলম্যাগে কবিতা লিখে ও কালনেত্র পত্রিকার সম্পাদনা করে আসছেন অনুপ আইচ। ২০০৮ সালে তার প্রথম কবিতার বই ‘ত্রিশঙ্কুর কররেখা’ তৎকালীন সময়ে বেশ সাড়া ফেলে। ২০১৪ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশ পায় অনুপ আইচের দ্বিতীয় কবিতার বই ‘না মরিয়া প্রমাণ করিল সে’।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৭, ২০১৯
এমজেএফ