ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

প্রাণচঞ্চলতার ‘অশীতিপর’ জ্যোতিপ্রকাশ দত্তকে সংবর্ধনা

ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৯
প্রাণচঞ্চলতার ‘অশীতিপর’ জ্যোতিপ্রকাশ দত্তকে সংবর্ধনা জ্যোতিপ্রকাশ দত্তকে সংবর্ধনা

ঢাকা: ষাটের দশকে গল্প দিয়ে তার সাহিত্যিক জীবন শুরু। সেসব গল্পে উঠে এসেছে সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা, জীবনদর্শন, ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, এমনকি আধুনিক জীবনযাত্রা। তিনি সৃষ্টি করেছেন সাহিত্যে নতুন ধারা ‘ছোট উপন্যাস’। গল্পকার হিসেবে ১৯৭১ সালে লাভ করেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার। ২০১৬ সালে ভূষিত হন একুশে পদকে। তিনি জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত।

আসছে ১ সেপ্টেম্বর আশিতম জন্মবার্ষিকী গুণী এ কথা সাহিত্যিকের। বাংলায় যাকে বলা হয় ‘অশীতিপর’।

আর এ শুভক্ষণকে সামনে তাকে সংবর্ধিত করে তার শতায়ু কামনা করলেন তার জীবনঘনিষ্টজনেরা। জানালেন অভিনন্দন।

রোববার (১০ মার্চ) জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে প্রকাশনা সংস্থা অন্যপ্রকাশ, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স ও পুথিনিলয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন জ্যোতিপ্রকাশ দত্তের বন্ধু অধ্যাপক ড. হায়াৎ মামুদ। অনুষ্ঠানে জ্যোতিপ্রকাশ দত্তকে উত্তরীয় পরিয়ে অভিনন্দন জানান অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

মঞ্চে উঠে প্রথমেই সবার ভালোবাসার জবাবে একটু রসিকতা করেন জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত। বলেন, এখন আমার আশিতম জন্মবার্ষিকী আসেনি। আগামী ১ সেপ্টেম্বর আসবে। সুতরাং এখনই আমাকে ‘অশীতিপর’ বলা যাবে না। আর এ কারণেই এখনও আমার মধ্যে প্রাণচঞ্চলতা রয়েছে।

নিজের সাহিত্যিক জীবনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ১৯৬৫ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিন বছরে তিনটি গল্পের বই প্রকাশিত হয়েছিলো। এরপর দীর্ঘ ১৮ বছর লেখালেখি করিনি। লেখালেখির জন্য সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে বন্ধু হায়াৎ মামুদ ও স্ত্রী পূরবী বসু। এরপর আবার যখন গল্প লিখতে শুরু করলাম, তখন তা প্রকাশ করে প্রকাশকরাও আমাকে উৎসাহ দিয়েছেন বললে ভুল কিছু বলা হবে না।

লেখকের সঙ্গে একসঙ্গে, এক ঘরে, এক ছাদের নিচে দীর্ঘ ৫১টি বছর পার করেছেন লেখক স্ত্রী পূরবী বসু। তিনি বলেন, জীবনে অনেকেই পরিচিত থাকে; কিন্তু একজন থাকে যিনি নির্ভয়ে হৃদয়ের সবচেয়ে কাছে আশ্রয় দেন। আমার মাত্র ১৮ বছর বয়সে বিয়ে হয়েছিল। ফলে এটা বলা যায়, আমি ওর সঙ্গেই বড় হয়েছি। ওর কাছ থেকে লেখা শিখেছি। জ্যোতি যত বড় লেখকই হোক, ওকে কখনো অনুকরণ করার চেষ্টা করিনি। ওকে অনুকরণ করা যায় না। দীর্ঘ সময়ে যতটা বুঝেছি, জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত লেখক হিসেবে যেমনই হোক, একজন মানুষ হিসেবে অত্যন্ত সৎ, সত্যবাদী এবং ভদ্রলোক। আর যতদিন বেঁচে থাকবো, ততদিন একসঙ্গে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে পারার জন্য সবার কাছে আর্শিবাদ চাই।

নিজের ছাত্র জ্যোতিপ্রকাশ দত্তকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, শিক্ষকরা ছাত্রের কাছ থেকে মাঝে মাঝে শেখে, প্রায়ই শেখে। আমি যাদের কাছে শিখেছি, তাদের মধ্যে জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত একজন। জ্যোতি প্রকাশ তার গল্পের বই আমাকে উৎস্বর্গ করে লিখেছে- ‘যার কাছে ছোটগল্পের প্রথম পাঠ নিয়েছি’। আমি তো মনে করি আমার শিক্ষক জীবনের সেরা পুরস্কার এ উৎস্বর্গ পত্র। তার কথাসাহিত্য জীবনঘনিষ্ট, প্রকাশ ভঙ্গির সংযম খুবই উল্লেখযোগ্য। তার ভাষার ব্যবহারে নিজস্ব রীতির প্রকাশ পায়। কাজেই তিনি বেশি লিখেছেন, কী কম লিখেছেন সেটি বিচারের তুলনায় তার সাহিত্যের যে গুণ, সেটি বিচারই আসল। সাহিত্যের যেকোন মানদণ্ডে জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত একজন বড় কথাসাহিত্যিক এবং বাংলা সাহিত্যে তার অবস্থান স্থায়ী হয়ে থাকবে।

কথাসাহিত্যিক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, তার গল্প মেদহীন, সুঠাম। তার গল্পে জীবনের শক্তি পাওয়া যায়। যেখানে দুর্বলতা হারিয়ে যায়।

অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বলেন, জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত তথাকথিত জনপ্রিয় লেখক নন। তবে তার লেখা একটি নির্দিষ্ট পরিসরের পাঠকদের কাছে সমাদৃত হয়েছে।

হায়াৎ মামুদ বলেন, আমার বড় সৌভাগ্য ডাক্তার বলেছে আমার একটা অসুখ হয়েছে। সব ভুলে যায়। তো সব ভুলে গেলে বলবো কি করে? বলার কথা না তো! এখনো ঠিক সেই অসুখের কারণেই কিছু মনে আসছে না। আর আমি ভেবে দেখলাম ভুলে যাওয়া একটি মহৎ গুণ। মানে আমরা তো ভুলে যেতে যেতে বেঁচে থাকি। নাহলে বাঁচা খুব মুশকিল। সবই যদি মনে রাখি, মনে থেকে যায়, তাহলে বাঁচার মতো দুঃসহ যন্ত্রণা আর হয় না।  

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, ১৯৬৭ সাল থেকে তার লেখার একজন অন্ধ পাঠক আমি। তার লেখা পড়ে মনে হয়েছে, বাংলার জল-মাটিতে তাকে খুঁজে ফিরতে হবে।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ব্যক্তিগত ঘনিষ্টতা না থাকলেও, তার লেখার মধ্য দিয়ে তাকে আবিষ্কার করা সম্ভব।

অনুষ্ঠানের শুরুতে মহাদেব ঘোষের কণ্ঠে ‘আগুনের পরশমনি ছোঁয়াও প্রাণে’ ও ‘তুমি যে সুরের আগুন লাগিয়ে দিলে এ প্রাণে’ গানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ অনুষ্ঠান। নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্য সংগঠন কাঁদামাটি’র নৃত্যশিল্পীরা।

অনুষ্ঠানে জ্যোতিপ্রকাশ দত্তকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন জানান প্রাবন্ধিক মফিদুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু চেয়ারের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, শিশু সাহিত্যিক সুজন বড়ুয়া, নাট্যকার-ভ্রমণ লেখক শাকুর মজিদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শফি আহমেদ, পারিবারিক বন্ধু দ্বিজেন শর্মার স্ত্রী দেবী শর্মা, জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহম্মদ প্রমুখ।

অনুষ্ঠানে জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত রচিত পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত ‘সাম্প্রতিক সেরা গল্প’ এবং পুথিনিলয় থেকে প্রকাশিত ‘গদ্য সমগ্র ১’র মোড়ক উন্মোচন করেন অতিথিরা। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম, পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান শায়ক ও পুথিনিলয়ের প্রধান নির্বাহী শ্যামল পাল।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৭ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৯
এইচএমএস/এসএইচ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।