ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

শিল্প-সাহিত্য

এখনও প্রাসঙ্গিক কাজী নজরুল

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর, ফিচার রিপোর্টার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৯
এখনও প্রাসঙ্গিক কাজী নজরুল

ঢাকা: বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির-উন্নত শির! তিনি বিদ্রোহী কবি। যার এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আরেক হাতে রণ-তূর্য! আজ সেই দ্রোহ ও প্রেমের কবি, বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৩তম প্রয়াণ দিবস।

মঙ্গলবার (১২ ভাদ্র) ধূমকেতুর সঙ্গে তুলনীয় এই মহান কবির মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ১৯৭৬ সালের ১২ ভাদ্র ঢাকায় অসুস্থ অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের গতিপথ পাল্টে বিদ্রোহ-প্রতিবাদ-প্রতিরোধের ধারা তৈরি করেন। উন্নত কণ্ঠে উচ্চারণ করেন সাম্য আর মানবতার কথা। ধ্যান-জ্ঞান, নিঃশ্বাস-বিশ্বাস, চিন্তা-চেতনায় তিনি সম্প্রীতির কবি, অসাম্প্রদায়িক মেরুদণ্ড।

পড়ুন>>জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রয়াণ

নজরুলের সাহিত্যকর্মে প্রাধান্য পেয়েছে প্রেম, মুক্তি ও বিদ্রোহ। ধর্মীয় ভেদাভেদের প্রাচীর ভাঙার ঘোষণা দেন তিনি। ছোটগল্প, উপন্যাস, নাটক লিখলেও তিনি কবি হিসেবেই বেশি পরিচিত। তবে বাংলা কাব্যে এক নতুন ধারার জন্ম দেন তিনি- ইসলামী সঙ্গীত তথা গজলের। নজরুল প্রায় তিন হাজার গান রচনা ও সুর করেছেন, যা নজরুল সঙ্গীত হিসেবে পরিচিত। আর সেই সঙ্গীত যেন সব সময়ই আধুনিক।

নজরুল সময়ের প্রয়োজনে এখনও সমান প্রাসঙ্গিক। বৈষম্যের দেয়ালে বিভক্ত বিশ্ব সম্প্রদায়ের মুক্তির বার্তা রয়েছে তার সৃষ্টিকর্মে।  

এ ব্যাপারে নজরুল গবেষক ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, অনুবাদের মাধ্যমে নজরুলের সৃষ্টিসম্ভার বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হবে।  

তিনি বলেন, এরই মধ্যে নজরুল ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে স্প্যানিশ, ফরাসি ও জার্মান ভাষায় নজরুলের সাহিত্য ভাণ্ডার অনুবাদের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আরবি বিভাগ থাকলেও এখন পর্যন্ত আরবি ভাষায় নজরুল সাহিত্যের কোনো অনুবাদ হয়নি। ঢাকায় আরব দেশের দূতাবাসগুলোও এ বিষয়ে নির্বিকার।

নজরুলের সৃষ্টির যথার্থতা রক্ষার তাগিদ দিয়ে এই নজরুল গবেষক বলেন, অনেকেই নজরুলের গানে বিকৃত সুরারোপ করছে। নজরুলের জীবনী নিয়েও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে কেউ কেউ। নজরুলকে সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করতে না পারলে কেউ যেন নজরুল চর্চা না করে।

কাজী নজরুল ইসলাম ১৩০৬ বঙ্গাব্দের ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৮৯৯ সালের ২৫ মে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার জামুরিয়া থানার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ডাক নাম ছিল 'দুখু মিয়া'। ছোটবেলায় পিতৃহারা হন। এরপর বাধার দুর্লঙ্ঘ্য পর্বত পাড়ি দিতে হয় তাকে। তবে বাংলার সাহিত্যাকাশে দোর্দণ্ড প্রতাপে আত্মপ্রকাশ করেন কবি নজরুল।

তার রচিত 'চল চল চল' বাংলাদেশের রণসঙ্গীত। তার কিছু গান জীবদ্দশায় গ্রন্থাকারে সংকলিত হয়, যার মধ্যে রয়েছে গানের মালা, গুলবাগিচা, গীতি শতদল, বুলবুল ইত্যাদি।  

পরে আরও গান গ্রন্থিত হয়েছে। তবে তিনি প্রায়ই তাৎক্ষণিক লিখতেন। এ কারণে অনুমান করা হয়, প্রয়োজনীয় সংরক্ষণের অভাবে বহু গান হারিয়ে গেছে। এ ছাড়া কাজী নজরুল গান রচনাকালে ১৯টি রাগের সৃষ্টি করেন, যা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল।

নজরুল জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। বাংলাদেশে নজরুলের স্মৃতিধন্য ময়মনসিংহের ত্রিশাল, ঢাকা, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে সরকারিভাবে অনুষ্ঠান করা হচ্ছে।  

এছাড়াও শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ নজরুল সমাধিসৌধে জাতীয় কবির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে আজ। কবিকে স্মরণ করা হবে তার নামে ত্রিশালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়েও।  

বাংলাদেশ সময়: ০৫৫২ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৯
এইচএমএস/এমএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।