আপন দ্যুতিতে উদ্ভাসিত প্রয়াত লেখক হুমায়ূন আহমেদ স্মরণে এবং দেশের নবীন-প্রবীণ কথাসাহিত্যিকদের শিল্প সৃষ্টিতে প্রেরণা যোগাতে দেওয়া হয় হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার। এবছর টানা পঞ্চমবারের মতো দেওয়া হয়েছে ২০১৫ সাল থেকে প্রবর্তিত এই পুরস্কার।
হুমায়ূন আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার-২০১৯ এ ভূষিত হয়েছেন কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন ও সাদাত হোসাইন। প্রবীণ সাহিত্য শ্রেণীতে সাহিত্যে সামগ্রিক অবদানের জন্য রাবেয়া খাতুন এবং নবীন সাহিত্য শ্রেণীতে (অনূর্ধ্ব চল্লিশ বছর) ‘নিঃসঙ্গ নক্ষত্র’ উপন্যাসের জন্য সাদাত হোসাইন এ পুরস্কার পান।
মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে তাদের হাতে আনুষ্ঠানিক পুরস্কার, ক্রেস্ট, সনদপত্র তুলে দেওয়া হয়।
পুরস্কার বিতরণের পুরো সময়টা ছিল হুমায়ূনময়। গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় প্রিয় সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদকে স্মরণ করছেন তার অগণিত ভক্ত আর বন্ধুরা। আলোচনায় শোভা পায় তার সাহিত্যকর্ম, বাংলা সাহিত্যে তার অবদান নিয়ে।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, বর্তমানে হুমায়ূন আহমেদের উপস্থিতি না থাকলেও তিনি আছেন স্মৃতিতে। তিনি এখনও সর্বত্র বিরাজিত। তিনি বাংলা সাহিত্যে ‘গ্রেট কমিউনিকেটর’। ‘সমাজে আজ অবক্ষয়। মা-বাবাকে সন্তানরা নির্যাতন করছে। সমাজে এসব অবক্ষয়ের মূল কারণ সৃজনশীল চিত্ত-বিনোদনের জোরালো প্রকাশ না হওয়া। সমাজে অট্টালিকা-অর্থ নিয়ে নানা হিসাব, কিন্তু বাস্তবে এসব অর্থহীন। গান-বাজনা, শিল্প-সাহিত্যের প্রসার হলে সমাজের অবক্ষয় কমে আসবে,’ যোগ করেন তিনি।
সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী ও হুমায়ূন আহমেদের বিখ্যাত নাটক ‘কোথাও কেউ নেই’র প্রধান চরিত্র (বাকের ভাই) আসাদুজ্জামান নূর বলেন, এখনও অনেকেই আছেন যারা হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে বিতর্ক তৈরি করেন। বলা হয় তিনি (হুমায়ূন) উচ্চমানের লেখক না, জনপ্রিয় লেখক। এসব বলে কেনো বিতর্ক হবে? তিনি উচ্চমানের লেখক বলেই জনপ্রিয় হয়েছেন। আসলে যারা সমালোচনা করেন তারা হুমায়ূন আহমেদের লেখা ভালোভাবে পড়েননি। তবে সব লেখার মান সমমানের হয় না। নোবেলজয়ীদের ক্ষেত্রেও এমনটা হয়।
সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, হুমায়ূন আহমেদের সাহচর্য যারা পেয়েছিলেন, তাদের স্মৃতিতে তিনি আছেন। যারা তার সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পাননি, তারা তার সাহিত্যকর্মকে ভালোবেসে তার মাঝে আছেন। তিনি এখনও সর্বত্র বিরাজিত। আজ যারা পুরস্কার গ্রহণ করলেন, বিশেষ করে রাবেয়া খাতুন, এর মাধ্যমে আমাদের পুরস্কারকে আপনারা সম্মানিত করেছেন। হুমায়ূন নিয়ে আমরা আরও দূরে যেতে চাই।
লেখক-শিক্ষক ও হুমায়ূন আহমেদের ছোট ভাই মোহম্মাদ জাফর ইকবাল বলেন, হুমায়ূন আহমেদের থিউরি ছিল- কে কী বলে তাতে কিছুই আসে-যায় না। তিনি আপন দ্যুতিতে উদ্ভাসিত। তিনি আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছেন। যখন রাজাকার শব্দটি বলা যেতো না, তখন তিনি টিয়া পাখির মুখ থেকে ‘তুই রাজাকার’ শব্দটি বলিয়েছিলেন।
হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন বলেন, আমি হুমায়ূন আহমেদের একজন পাঠক হিসেবে গর্ববোধ করি যে, তাকে স্মরণ করে টানা পাঁচ বছর সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। এ আয়োজন যেনো চলতে থাকে এ প্রত্যাশা থাকবে। পাশাপাশি এক্সিম ব্যাংক ও অন্যদিনকে ধন্যবাদ জানাই। একদিন পরই (১৩ নভেম্বর) হুমায়ূন আহমেদের ৭১তম জন্মদিন। এ পুরস্কার এবং তার জন্মদিন অনেক আনন্দের।
আয়োজনে রাবেয়া খাতুনের শংসাবচন পাঠ করেন কথাসাহিত্যিক আবুল হাসনাত এবং সাদাত হোসাইনের শংসাবচন পাঠ করেন কথাসাহিত্যিক মইনুল আহসান সাবের।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন- কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ড. হায়দার আলী মিয়া, কথাসাহিত্যিক আবুল হাসনাত, মইনুল আহসান সাবের, জুরিবোর্ডের সদস্যসহ সাহিত্যিক, লেখক, সংস্কৃতিকর্মীসহ এক্সিম ব্যাংক ও পাক্ষিক অন্যদিনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৯
ইএআর/এসএ