ফরিদা পারভীনরে সংগীত জীবনের ৫০বছর পূর্তি উপলক্ষে সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হলো এক বর্ণিল সংবর্ধনা ও সংগীতানুষ্ঠান। একইসঙ্গে শিল্পীর ৬৫ বছরে পদার্পনের জন্মদিন (৩১ ডিসেম্বর) উপলক্ষে কাটা হয় কেক।
দুই পর্বে বিভক্ত আয়োজনের প্রথম পর্বে ছিল ফরিদা পারভীন’কে নিয়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ও আলোচনা এবং দ্বিতীয় পর্বে ছিল লালন সম্রাজ্ঞী ফরিদা পারভীনের একক সঙ্গীত সন্ধ্যা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন সঙ্গীতজ্ঞ আজাদ রহমান ও লালন গবেষক অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল করিম, বিশিষ্ট বংশীবাদক গাজী আব্দুল হাকিম, শিল্পী সেলিনা আজাদ, কর্ণফুলি ইন্সুরেন্স লিমিটেডের ভাইস প্রেসিডেন্ট নাসির উদ্দিন আহমেদ, লীজান হারবালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হক। প্রধান আলোচক ছিলেন সংগঠনের সভাপতি ও লালন গবেষক ড. আবু ইসহাক হোসেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার অধ্যাপক মুচকুন্দ দুবে।
আয়োজনে ফরিদা পারভীনের সঙ্গীতজীবনের ৫০বছর পূর্তিতে তার হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দিয়ে শিল্পীকে সংবর্ধনা জানানো হয়। সম্মিলিতভাবে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন অনুষ্ঠানের অতিথিরা। এসময় অনূভুতি প্রকাশ করে ফরিদা পারভীন বলেন, এরকম একটি আয়োজনের মাধ্যমে আমাকে সম্মান জানানোতে আমি অভিভূত এবং কৃতজ্ঞ। ভেতরে ভেতরে একটু আবেগাপ্লুতও। সঙ্গীতজীবনের ৫০বছর পূর্তি হয়ে গেল। আমার মনে হচ্ছে, আর বোধ হয় বেশি দিন নয়। আমি ‘সত্য বল সুপথে চল ওরে আমার মন’ গান দিয়ে আমার যাত্রা শুরু করেছিলাম। চেষ্টা সুপথে থাকার, সত্য বলার। আমার কাছে লালনের সুর ঐশ্বরিক, সত্য আক্ষরিক।
আলোচনা পর্বে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, এই ৫০ বছরে যারা ফরিদা পারভীনকে চিনতে বা বুঝতে পারেননি, তারা আগামী ৫০ বছরে তাকে চিনবেন। ঠিক যেভাবে লালনকে আমরা দীর্ঘদিন পর চিনছি এবং চিনতে শুরু করেছি।
আজাদ রহমান বলেন, সারাবিশ্বজুড়ে আজ ধর্ম যুদ্ধ চলছে। আমরা যদি লালনের দর্শনটা ঠিকমতো বুঝি, সেটার প্রয়োগ ঘটায়, তবে এর আর প্রয়োজন থাকবে না।
অধ্যাপকে ড. আনোয়ারুল করিম বলেন, ১৯৫৫ সালে যখন আমি লালনের আখড়া আবিস্কার করি, সে সময় আমি কুষ্টিয়া কলেজের ছাত্র। তারপর থেকে লালনকে জানতে শুরু করেছি। তখন থেকেই আমি লালন নিয়ে কাজ শুরু করি এবং লালন একাডেমি গড়ে তুলি। পরবর্তীতে লালনের গানের উপর পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেছি। এ নিয়ে আমি গর্ব করিনা। কিন্তু আমি ফরিদা পারভীনকে নিয়ে গর্ব করি। কেননা, ফরিদা পারভীনই লালনের গানকে বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে দিয়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে মুচকুন্দ দুবে বলেন, সাগরের টানে যেমন নদী ছুটে আসে, আজকের ফরিদা পারভীনের সংগীতের ৫০বছর পূর্তির এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তার গানের জন্যও আমি সেভাবেই ছুটে এসেছি। তার প্রতিভা আমাকে বারবার মুগ্ধ করেছে। তিনি লালনের গানকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছেন।
সংবর্ধনা ও আলোচনা শেষে শুরু হয় দ্বিতীয় পর্বের আয়োজন। সেখানে একক কণ্ঠে শিল্পী ফরিদা পারভীন লালনের গানের পাশাপাশি গেয়ে শোনালেন বেশ কয়েকটি আধুনিক ও দেশাত্মবোধক গানও। একইসঙ্গে তিনি লালনের হিন্দি ভাষায় অনুদিত গানও পরিবেশন করেন। এসময় সাঁইজির দর্শনের বাণীতে সিক্ত হয়ে দর্শক-শ্রোতারাও মজেছিলেন সুরের মায়াজালে।
এসময় শিল্পী ‘এই পদ্মা এই মেঘনা এই যমুনা’ গানটির পরিবেশনার মধ্য দিয়েই সুরের ঝাঁপি খোলেন। লালনসঙ্গীতের জীবন্ত এই কিংবদন্তী এরপর একে একে গেয়ে শোনান ‘তোমরা ভুলেই গেছো মল্লিকাদের নাম’, ‘নিন্দার কাঁটা যদি না বিন্দিলো গায়ে’, ‘পারে লয়ে যাও আমায়’, ‘পারে কে যাবি নবীর নৌকাতে আয়’, ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’, ‘যেখানে সাঁইয়ের বারামখানা’, ‘বাড়ির পাশে আরশিনগর’সহ বিভিন্ন গান।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৯
এইচএমএস/এইচএডি/