‘রবো না কৈলাশপুরে আই এম Calcutta গোয়িং’ দিয়েই শুরু করলেন। একে একে ভেসে আসছে ‘চুড়ির তালে নুড়িরমালা, ‘কুঁচবরণ কন্যারে তার মেঘ বরণ কেশ, আপনার চেয়ে আপন যে জন, নহে নহে প্রিয় এ নয় আঁখিজল, কূল রাখো না রাখো সে তুমি জানো, আমি বিদেশিনী নহি সহ নজরুল সঙ্গীতের জনপ্রিয় ‘তেপান্তরের মাঠে, আমি পূরব দেশের পুরনারী, বাঁকা ছুরির মতো, চাঁদ হেরিছে, চিরতরে দূরে চলে যাবো।
দর্শক-শ্রোতারা সব গান উপভোগ করছেন আর করতালিতে শিল্পীকে বারবার অভিনন্দন জানাচ্ছেন।
এ এক অনন্য মুগ্ধতা ছড়ানো পরিবেশ। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা থেকে রাত জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে নজরুল সঙ্গীতের সুরের মূর্ছনায় সবাইকে মোহিত করে দিলেন সোমঋতা মল্লিক।
স্থানীয় দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ আয়োজিত ‘বর্ষ বিদায় আয়োজন, নজরুল সঙ্গীত সন্ধ্যা’ অনুষ্ঠানে এভাবেই নিজেকে হাজির করলেন গুণী এ নজরুল সঙ্গীতশিল্পী।
শুধু কী গান? দুই বাংলার দূরত্ব কীভাবে ঘুচতে পারে, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে কীভাবে চর্চা করতে হবে সবই যেন উঠে এলো তার কথামালায়।
‘আমি একটি কথাই বলতে চাই, কাজী নজরুল ইসলামকে নিয়ে যদি সঠিকভাবে এবং সামগ্রিকভাবে চর্চা করার যে প্রয়োজন রয়েছে, সেটা যদি সত্যি সত্যি করতে হয় তাহলে আমার মনে হয় এই শুধুমাত্র বাংলাদেশ বা শুধুমাত্র ভারতে বসে কাজ করলে হবে না। সেক্ষেত্রে কাঁটাতারের যে বেড়া সেটা সত্যি সত্যি ভেঙে ফেলতে হবে এবং আদান-প্রদানটা অনেক বাড়াতে হবে। তাহলে সামগ্রিক চর্চার জায়গাটা অনেক সুন্দরভাবে হতে পারে। সেজন্য বারবার ছুটে আসা এই বাংলাদেশ’, বলছিলেন সোমঋতা।
সঙ্গীতের সঙ্গে যার মায়ার বাঁধন,যিনি অপূর্ব দক্ষতায় সুর তুলতে পারেন আবার বলতেও পারেন দারুণভাবে। ফলে তার কন্ঠে নজরুল সঙ্গীত যেন নতুন জীবন লাভ করতে পারে। আন্দোলিত করতে পারে হৃদয়কে।
সোমঋতা মল্লিক বলছিলেন, ‘প্রতিবার বাড়ি ফেরার আগে মনটা এমন যে, আবার ফিরে যেতে হবে। অনেকেই জিজ্ঞাসা করে আপা কবে ফিরে যাবেন?
তখন আমি বলি না ফিরে গেলেই কি নয়? এ ধরনের বড্ড মনে হয় বেশি। তারপর আবারও ফিরে আসা অন্য কোন কাজের জন্য। তো এভাবেই চলছে আর আপনারা যারা আজকে এখানে এসেছেন, এতো ব্যস্ততার মাঝেও এতোটা সময় দিচ্ছেন সবার জন্যই আন্তরিক কৃতজ্ঞতা রইলো। ’
টানা চার ঘন্টা গান আর কথায় মুখর হয়ে উঠে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তন। ‘তেপান্তরের মাঠে, অভয়া শংখ, আখিরে বাঁকা চুলের গড়ন, চাঁদ হেরেছে, চিরতরে দূরে চলে যাবো’ গাইতে থাকেন সোমঋতা। তার শেষ গানটি যেন ধুমড়ে-মুচড়ে দেয় হৃদয়কে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য মনিরা সুলতানা মনি।
প্রতিদিনের কাগজের উপদেষ্টা সম্পাদক কবি স্বাধীন চৌধুরীর সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) এএইচএম লোকমান (যুগ্ম সচিব), জেলা শিল্পকলা একাডেমির জেলা কালচারাল অফিসার আরজু পারভেজ।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৩৫ ঘন্টা, জানুয়ারি ০১,২০২০
একে/ইউবি