মির্জা গালিবের গজল বইটি মেলায় এনেছে প্রথমা প্রকাশন। এর প্রচ্ছদ করেছেন সব্যসাচী মিস্ত্রী।
মির্জা গালিবের গজল বইটি গালিবের কবিতার নির্বাচিত সাড়ে পাঁচশ পঙক্তি বা শেরের বাংলা অনুবাদ। এতে প্রধানত গালিবের প্রতিনিধিত্বশীল উর্দু ও ফারসি কবিতা রাখা হয়েছে। এ বইটির মধ্য দিয়ে এই প্রথম গালিবের ফারসি কবিতার প্রতিনিধিত্বশীল ভাষান্তর পাবেন বাংলা পাঠকেরা। সঙ্গে কবি আর কবিতার ইতিহাস ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের আলোচনাও আছে। এখন পর্যন্ত বাংলা ভাষান্তরে গালিবকে আন্দাজ করতে পেরেছেন আবু সয়ীদ আইয়ুব। এই বইটি তাকে উৎসর্গ করা হয়েছে।
মির্জা গালিব নিয়ে কাজ করার আগ্রহের কারণ জানতে চাইলে জাভেদ হুসেন বলেন, মির্জা গালিব দক্ষিণ এশিয়ার কাব্য জগতের ইতিহাসে এক বিচিত্র আর বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব। খোদ কবিতার পণ্ডিত মানুষেরা তাঁকে ‘দুরুহপ্রিয়’ বলে ঠাট্টা-তামাশা করেছেন। আবার সেই কবিই তার ভাষার সবচেয়ে প্রিয় কবি। কোলকাতার মানুষ আধুনিকতার মধ্যে দিয়েই বেড়ে উঠেছে ইংরেজদের হাত ধরে। গালিব ছিলেন দিল্লির বাসিন্দা। হারানো মোগল গৌরবের শহর। কোলকাতায় এসে তিনি চমকে উঠেছিলেন। নতুন যুগের আগমন দেখে চিনতে পেরেছিলেন। সাবেকি শিক্ষাকে মনে হয়েছিল ‘মৃতকে প্রতিপালন’। ভারতবর্ষের প্রথম আধুনিক মানুষদের মধ্যে অন্যতম তিনি। মির্জা গালিব ভারতবর্ষের জনপ্রিয়তম কবিদের অন্যতম। একাই তিনি যেন প্রতিনিধিত্ব করেন ভারতবর্ষের একটি কালপর্বের, একটি ভাষার সমগ্র সাহিত্যের। সার্বিক কারণেই এ কবির জীবন ও সাহিত্যকর্ম গুরুত্বপূর্ণ।
‘গালিবের প্রতি বাংলা পাঠকদের আগ্রহ সবসময়ই বেড়ে চলেছে। উর্দু ভাষার যে কোনো কবিতা ভালো লেগে গেলে পাঠক নিশ্চিত হয়ে যান, এটি গালিবের কবিতা। গালিবের কবিতার অনুবাদ বাংলায় হচ্ছে। ইন্টারনেটের সুলভ সহায়তার যুগে গালিবের মতো কবিকে অনুবাদের তৃপ্তি নেওয়ার লোভ সামলানো কঠিন। তবে এই ‘ইন্সট্যান্ট কফি’ কায়দায় গালিবের প্রতি আদব রক্ষা করা যায় না। তাই এখানে সময় নিয়ে অনুবাদের চেষ্টা চালানো হয়েছে। ’
মির্জা গালিব প্রসঙ্গে জাভেদ হুসেন আরও বলেন, নিজেকে ফারসির বড় কবি মনে করতেন গালিব। উর্দু কবিতা যা লিখেছেন তার বড় অংশ বিশ বছর বয়সের মধ্যে। পরে আবার পঞ্চাশ বছরের পরে শেষ মোগল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের সভাকবি হয়ে কিছু উর্দু কবিতা লিখেছেন। আশ্চর্য ব্যাপার শেষ আর শুরুতে একই মান অক্ষুণ্ণ রেখেছেন গালিব। মাত্র ২৩৫টি কবিতা লিখে কোনো ভাষার কাব্যেশ্বর হওয়া কবিকে ভাষান্তর করে বয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা সম্ভব খুব দুঃসাহসী অথবা খুব বোকা কোন অনুবাদকের পক্ষে।
ভিন্ন ভাষার সাহিত্য পর্যালোচনা প্রসঙ্গে জাভেদ হুসেন বলেন, আরেকটা ব্যাপার, কোনো ভাষায় অনুবাদের আগে-পরে অনেক কাজ করে জমিন তৈরি করতে হয়। অন্য ভাষার কবিতার আলোচনা নিজ ভাষার প্রয়োজনে চালু রাখবার দূরদর্শীতা খুব জরুরি। দুঃখের বিষয় আমাদের এখানে অন্য ভাষার কাব্য পর্যালোচনা প্রায় অনুপস্থিত।
১৯৭৬ সালের ১ আগস্ট কুমিল্লায় জন্ম হাভেদ হুসেনের। সোভিয়েত পরবর্তী সক্রিয় মার্কসীয় রাজনীতির মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে হাতেখড়ি তার। মার্ক্সের আর্লি রাইটিংস ও মার্ক্সীয় দর্শন বিষয়ে উল্লেখযোগ্য বেশ কয়েকটি বই রয়েছে এ লেখকের। উর্দু-ফার্সি সাহিত্য বিষয়েও রয়েছে উল্লেখযোগ্য জানাশোনা।
জাভেদ হুসেনের মার্কসীয় দর্শন বিষয়ক প্রকাশিত অনুবাদের বইগুলো হলো- ইহুদী প্রশ্নে - কার্ল মার্কস, ডক্টরাল থিসিস - কার্ল মার্কস, ইকোনমিক এন্ড ফিলোজফিক ম্যানুসক্রিপ্ট - কার্ল মার্কস, জার্মান ভাবাদর্শ - কার্ল মার্কস, মার্কস ও মুক্তি - টেরি ইগলটন, মার্কসের সমাজ তত্ত্ব ও সমাজ দর্শন বিষয়ক রচনা - টম বটোমর, মার্কস আসলে যা বলেছিলেন - আর্নস্ট ফিশার, হাউ টু রিড মার্কস - পিটার অসবর্ন, মার্কসের মানুষ - এরিক ফ্রম, সোহতে মার্কস - হাওয়ার্ড জিন।
উর্দু ও ফার্সি সাহিত্য বিষয়ক প্রকাশিত বইগুলো হলো- ধ্রুপদী উর্দু কবিতা, ফয়েজ আহমদ ফয়েজের কবিতা, মনসুর হাল্লাজের কবিতা, বধ্য ভূমির উৎসব (আহমদ ফারাজের কবিতা), জান-এ-গালিব, মীর তকি মীর গজল থেকে, সারমাদ শহীদের রুবাইয়াত, কালো সীমানা - সাদাত হাসান মান্টো, মির্জা গালিবের গজল।
এছাড়া ব্লেইজ পাসকালের পঁসে বা ভাবনা নামে তার আরও একটি বই রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১২, ২০২০
এইচজে