গত ৮ মার্চ দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয় শিল্পকলা একাডেমি। সে সঙ্গে জাতীয় জাদুঘর, বাংলা একাডেমি, মহিলা সমিতি, পাবলিক লাইব্রেরিসহ সংস্কৃতিচর্চার সব স্থানই বন্ধ হয়ে যায় করোনা সংক্রমণের ভয়ে।
২৬ মার্চ থেকে ২৯ মে- এ ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটির মধ্যেই দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনে আসে তিনটি বড় দিবস; পহেলা বৈশাখ, রবীন্দ্র জয়ন্তী ও নজরুল জয়ন্তী। সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকায় তিনটি আয়োজনই ডিজিটালি উদযাপন করেন সংস্কৃতিকর্মীরা। সে সঙ্গে এ সময়ে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন, নাটকের দল নিজেদের ফেসবুক ও ইউটিউবের মাধ্যমে ব্যতিক্রমী নানা আয়োজন নিয়ে দর্শকদের পাশে ছিল।
৬৬ দিনের সাধারণ ছুটি শেষে আবারও কর্মচঞ্চল হয়ে উঠছে রাজধানী ঢাকাসহ সমগ্র দেশ। সে সঙ্গে খুলে গেছে দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনের কেন্দ্রবিন্দু শিল্পকলা একাডেমি। ৩১ মে থেকে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড শুরু হলেও, এখনো কোনো অনুষ্ঠান হয়নি সেখানে। আর করোনা পরিস্থিতি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত শিল্পকলা একাডেমির মিলনায়তনগুলো বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বাংলানিউজকে বলেন, এটা আসলে এককভাবে শিল্পকলা একাডেমির সিদ্ধান্ত না। রাষ্ট্রীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। যখন মনে হবে পরিস্থিতি ঠিক হয়েছে, তখন আমরা মিলনায়তন ভাড়া দেবো। সেখানেও শারীরিক দূরত্ব মেনেই দেওয়া হবে। তবে সে সময়টি এখনও এসেছে বলে আমি মনে করি না। আসলে এখন কোনো অনুষ্ঠান করে লাভও নেই। কারণ, আমরা নাটক বা কোনো অনুষ্ঠান তো করবো দর্শকদের জন্য। তারাই যদি না থাকেন তাহলে সে আয়োজন করে তো কোনো লাভ নেই।
মিলনায়তন বন্ধ থাকলেও শিল্পকলা একাডেমির ফেসবুক পেজ জমজমাট নানা আয়োজনে। এখানে প্রতিদিনই ‘আর্ট অ্যাগেনস্ট করোনা’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হচ্ছে দিনের বিভিন্ন সময়ে। সেখানে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের শিল্পীদের ঘরে ধারণ করা গান, নৃত্য ও আবৃত্তি পরিবেশিত হচ্ছে।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সারাদেশে নাট্য প্রদর্শনীসহ নাট্যদলগুলোর আয়োজনে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মহড়া বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশান।
সংগঠনটির সেক্রেটারি জেনারেল কামাল বায়েজীদ বলেন, সারাদেশে নাট্যশিল্পীদের আমরা আহ্বান জানিয়েছি, এই পরিস্থিতিতে নাট্য প্রদর্শনী, মহড়া এবং অন্যান্য অনুষ্ঠান আয়োজন না করতে। সবার আগে তো মানুষের জীবন।
একই অবস্থা বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের। সাধারণ ছুটি শেষে খুলেছে জাদুঘর। প্রশাসনিক কাজ শুরু হলেও জাদুঘরের গ্যালারি এখনো উন্মুক্ত নয় সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য। মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের পরই রাজধানীর জাদুঘর খুলবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক মো. শওকত আলী।
তিনি বলেন, এই মুহূর্তে সঠিক বলা যাচ্ছে না জাদুঘর সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য কবে খুলে দেওয়া হবে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে মিটিং করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে এবং সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই পরবর্তীতে জাদুঘর সাধারণ দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।
এছাড়া জনসমাগম তৈরি হয় এমন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন না করার আহ্বান জানিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট। সারাদেশে সদস্যভুক্ত বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সারাদেশে জনসমাগম তৈরি হয় এমন সব ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন থেকে বিরত থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট সাংস্কৃতিক সংগঠনকে অনুরোধ জানাই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কোনো আয়োজন করা ঠিক হবে না।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩২ ঘণ্টা, জুন ১২, ২০২০
ডিএন/এইচএডি/