কুসুমকুমারী দাসের বিখ্যাত কবিতা ‘আদর্শ ছেলে’র মূল লাইন ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে’র শব্দ উল্টে দিয়ে এই বিভ্রান্তির ধাক্কা দিয়েছেন ‘পণ্ডিত’ পাঠ্য রচয়িতারা।
কুসুমকুমারী দাসের রচনায় ‘আমাদের দেশে’র পর ‘হবে’ লেখা হলেও বিকৃত লাইনটিতে এসেছে ‘সেই’।
বিকৃতি কেবল এটুকুই নয়, কবিতার চতুর্থ লাইনে কুসুমকুমারী লিখেছেন, ‘মানুষ হইতে হবে’- এই তার পণ। বিকৃত কবিতায় ‘হইতে’ শব্দটিকে ‘পাণ্ডিত্য’ দেখিয়ে ‘সম্পাদনা’ করে ‘হতেই’ লিখেছেন পাঠ্য রচয়িতারা।
নবম লাইনে মূল কবিতায় লেখা আছে, ‘সে ছেলে কে চায় বল কথায়-কথায়’। এই লাইনের ‘চায়’ শব্দটিকে বিকৃত করে অথবা উচ্চারণ অজ্ঞতায় পাঠ্য রচয়িতারা লিখেছেন ‘চাই’, অর্থাৎ ‘সে ছেলে কে চাই বল কথায় কথায়’!
এরপর ‘আমার বই’য়ে দেখাই গেলো না একাদশ থেকে চতুর্দশ লাইন পর্যন্ত। সে চারটি লাইন হলো, ‘সাদা প্রাণে হাসি মুখে কর এই পণ—/‘মানুষ’ হইতে হবে মানুষ যখন। /কৃষকের শিশু কিংবা রাজার কুমার/সবারি রয়েছে কাজ এ বিশ্ব মাঝার,/’
মূল কবিতার পঞ্চদশ লাইনে লেখা ‘হাতে প্রাণে খাট সবে শক্তি কর দান’। এই লাইনের ‘খাট’ শব্দটিকে বিকৃত করে লেখা হয়েছে ‘খাটো’।
এভাবে শব্দ-লাইন বিকৃতির পাশাপাশি বালাই দেখা গেলো না যতি চিহ্নের ব্যবহারেও। ড্যাশ-কমা-ঊর্ধ্বকমা ইচ্ছেমতো ব্যবহার বা বর্জন করা হয়েছে।
কবি জীবনানন্দ দাশের মা কুসুমকুমারী দাসের প্রসিদ্ধ এই কবিতার এমন বিকৃতিতে সমালোচনার ঝড় চলছে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। পাঠ্য রচয়িতাদের তুলোধুনো করছেন তারা ন্যূনতম দায়বদ্ধতা না দেখানোয়।
এ বিষয়ে শর্মা লুনা নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী মন্তব্য করেন, “৪র্থ লাইনেও ভুল, সঠিক হবে: মানুষ হইতে হবে এই যার পণ; নবম লাইনেও ভুল, সঠিক হবে: সে ছেলে কে চায় বল কথায় কথায়। দাড়ি কমার ফালতু ব্যবহার। লেখকের হুবহু লেখা দেয়নি। তৃতীয় ব্যক্তির পাণ্ডিত্যে কবিতাটি ধর্ষিত হয়েছে। ”
নাজমুল হক নামে আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী বলেন, “চাই আর চায়- এর পার্থক্য তফাত বোঝে না। ...”
বাংলাদেশ সময়: ২২০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১৭
এইচএ/