রায়পুর (লক্ষ্মীপুর): লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চরমোহনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে এক ঘণ্টার মধ্যে অজ্ঞাতরোগে অসুস্থ হয়ে পড়েছে ৪০ ছাত্রী। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ২ সদস্যবিশিষ্ট মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে।
এ ঘটনায় এলাকার লোকজনের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। ওই বিদ্যালয়ে গত একমাসে দেড় শতাধিক ছাত্রী অসুস্থ হয়।
শিক্ষক ও অভিভাবকদের ধারণা ছাত্রীদের ওপর ‘জ্বীন-পরী’ আছর করেছে।
কথিত ‘জ্বীন-পরী’ তাড়াতে বৃহস্পতিবার বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অভিভাবকদের সহযোগিতায় ‘শেফা’ খতমের আয়োজন করে বিদ্যায়লয় কর্তৃপক্ষ। এ সময় খতমে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে তাবারক হিসেবে এক মণ মিষ্টি বিতরণ করা হয়।
এদিকে, গত এক সপ্তাহ ধরে শিক্ষক ও অভিভাবকরা স্থানীয় ইমাম ও কবিরাজের পরামর্শে বিদ্যালয় মাঠে প্রতিদিন ১৫০টি করে তাবিজ আগুনে পোড়াচ্ছেন।
অন্যদিকে, অসুস্থ ১০ ছাত্রীকে সোমবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে হাজির করে শিক্ষকরা ‘কথিত জ্বীন’ তাড়াতে উপজেলা পরিষদ মসজিদের ইমামকে ডেকে আনেন। সেখানে তিনি ঝাড়ফুঁক দিয়ে ছাত্রীদের জ্বীন তাড়ানোর চেষ্টা করেন বলে প্রত্যক্ষদর্শী উপজেলা প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান।
চরমোহনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ হারুনুর রশিদ জানান, জুনের মাঝামাঝি থেকে প্রতিদিন ক্লাস চলাকালে ১৫ থেকে ২০ জন ছাত্রী দৃশ্যমান কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎ করে বেঞ্চ থেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
জবা, জোনাকি, সূর্যমুখী, কৃষ্ণদাস, কৃতদাস, মানিক, লালপরী ও সাদাপরী নাম নিয়ে ছাত্রীরা নিজেদের জ্বীন-পরী পরিচয় দিয়ে অস্বাভাবিক আচরণ করে ও অসংলগ্ন কথাবার্তা বলে। অসুস্থ ছাত্রী লিমা তার পিতাকে বলে, ‘তুই এখানে কী করছ’ ? অন্যরাও শিক্ষক ও তাদের অভিভাবকদের অসংলগ্ন কথাবার্তা বলে।
৫ থেকে ৭ ঘণ্টার মধ্যে অধিকাংশ ছাত্রীই ফের সুস্থ হয়ে ওঠে বলে জানান প্রধান শিক্ষক।
তিনি জানান, কোনো কোনো ছাত্রী ১০-১২ বার এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। তবে বাড়িতে থাকলে ছাত্রীরা স্বাভাবিক থাকে। এ কারণে শিক্ষক ও অভিভাবকদের ধারণা, শত বছরের পুরোনো বিদ্যালয় অঙ্গনে থাকা জ্বীন-পরীই ছাত্রীদের ওপর আছর করেছে। তাই তারা মসজিদের ইমাম ও কবিরাজের শরণাপন্ন হয়েছেন।
অবশ্য কয়েক ছাত্রী হাসপাতালে গিয়েও চিকিৎসা নিয়েছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক।
রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ডা. মোরশেদ আলম হিরু জানান, ডা. ইফতেখার-উল-হক ও তাকে দিয়ে বিদ্যালয়ের ছাত্রীরা অসুস্থ হওয়ার ঘটনায় মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। তারা বিদ্যালয়ে গিয়ে অসুস্থ ছাত্রীদের দেখেছেন।
তিনি জানান, ভয়-ভীতিজনিত মানসিক চাপের কারণে (মাস সাইকোজেনিক ইলনেস) এ রোগ দেখা দেয়। একজনের মধ্যে এরোগ দেখা দিলে তা দেখে অন্যরাও ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।
এ বিষয় নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান মোরশেদ আলম হিরু।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১৪ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১১