ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

উপকূল থেকে উপকূল

১২ নভেম্বর

সেদিনের স্মৃতি এখনো কাঁদায় উপকূলবাসীকে

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৭
সেদিনের স্মৃতি এখনো কাঁদায় উপকূলবাসীকে ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষতচিহ্ন দেখাচ্ছিলেন উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় শতবর্ষী বৃদ্ধ। । ছবি: বাংলানিউজ

উপকুলীয় অঞ্চল ঘুরে: ‘চারদিকে মরদেহ, বাতাসে পচা গন্ধ। সেদিনের বীভৎস চিত্র মনে হলে এখনো আঁতকে উঠি। গণহারে মারা গিয়েছিলেন মানুষ, নিশ্চিহ্ন হয়েছিল বিস্তীর্ণ উপকূলের জীববৈচিত্র্যও’।

১৯৭০ সালের ১২ নভেম্বরের ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ের কথা স্মরণ করে কথাগুলো বলছিলেন দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ও রেডক্রসের তৎকালীন নোয়াখালী অঞ্চল প্রধান মো. রফিকুল আলম।  

তিনি বাংলানিউজকে জানান, সেদিন হাতিয়া, চরআবদুল্লাহ, রামগতি, সন্দ্বীপ, ঢালচর, চরজব্বার, তজুমদ্দিন, চরকচ্ছপিয়া, চরপাতিলা, কুকড়ি মুকড়ি, মনপুরা, চরফ্যাশন, সোনাগাজী ও দৌলতখানসহ ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, চট্টগ্রাম ও ফেনীর পুরো উপকূলে প্রায় ১০ লাখ মানুষ প্রাণ হারান।

এর মধ্যে নোয়াখালীর উপকূলে নিহত হন প্রায় দশ হাজার মানুষ, নিখোঁজ ছিলেন আরও প্রায় ২০ হাজার জন। জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়েছিল লাখ লাখ গৃহপালিত পশুসহ জমির ফসল।  ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে বাংলানিউজের প্রতিবেদককে বলছেন সোনাগাজী উপকূলীয় এলাকার বাসিন্দা রস রাজ ও তার স্ত্রী কানন বালা দাস।  ছবি: বাংলানিউজ

স্বজন হারানোর দুঃসহ সেই স্মৃতি বয়ে আজও যারা বেঁচে আছেন, সেদিনের ভয়াবহতা মনে করে আঁতকে ওঠেন তারাও।

হাতিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুব মোর্শেদ বলেন, ‘এখনো স্পষ্ট মনে পড়ে সেদিনের ভয়াবহতার চিত্র। ওই একদিনের দুর্যোগে প্রাণ হারান হাতিয়ার মোট জনসংখ্যার চার ভাগের একভাগ। এর মধ্যে নিঝুম দ্বীপের সব মানুষকেই ভাসিয়ে নিয়ে যায় জলোচ্ছ্বাস। শুধু বেঁচেছিলেন কেরফা বুড়ি’।
  
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার এ বি এম সিদ্দিকুর রহমান জানান, ১৯৭০ সালের ১১ নভেম্বর বুধবার থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ছিল। ১২ নভেম্বর বৃহস্পতিবার আবহাওয়া আরও খারাপ হয়। মধ্যরাত থেকেই ফুঁসে ওঠে সমুদ্রও। তীব্র বেগে লোকালয়ের দিকে ধেয়ে আসে পাহাড় সমান উঁচু ঢেউ। মুহূর্তে পুরো সন্দ্বীপ তছনছ হয়ে যায়। বাড়িছাড়া হয় হাজারো পরিবার।
  
সন্দ্বীপ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস কামাল বাবু জানান, সে সময় তাদের বাড়ি ছিল মেঘনার মোহনার প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে। তারপরও বাড়িতে পানি ছিল প্রায় পাঁচ ফুট। এ থেকে রক্ষা পেতে অনেকে আশ্রয় নিয়েছিলেন কাচারিঘরের ছাউনিতেও। তিনিও জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যেতে দেখেছেন মানুষ ও পশুকে। নোখালীর হাতিয়া উপকূলের এক সংগ্রামী নারী।  ছবি: বাংলানিউজফেনীর সোনাগাজী উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেপাড়ার রসরাজ দাস জানান, সেদিন নদীতে ভাসতে দেখা গেছে হাজার হাজার মরদেহ। এতে নদীর পানিও খারাপ হয়ে গিয়েছিল।  

নোয়াখালী দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মো. রফিকুল আলম মনে করেন, ১৯৭০ সালের মতো ঘূর্ণিঝড় ফের হলে দেশের প্রতিটি উপকূলীয় এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে। এ থেকে রক্ষা পেতে বেড়িবাঁধ ও আউটার বেড়িবাঁধগুলোকে আরও মজবুত করতে হবে।  

অক্টোবর-নভেম্বরে আঘাত হানে প্রকৃতি। এ সময়টাতে প্রতিটি উপকূলীয় এলাকায় দক্ষ প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবকদের আধুনিক যন্ত্রপাতি নিয়ে তৈরি থাকতে হবে। ঘরে ঘরে রেডিও রাখতে হবে। হাতিয়া উপকূলের একটি ভাঙন কবলিত এলাকা।  ছবি: বাংলানিউজ

দ্রুত তথ্য পৌঁছানো, উপকূলের মানুষকে সিগন্যাল দিতে আরও আপডেট হওয়া এবং সমুদ্রবন্দরের পাশাপাশি প্রতিটি উপকূলীয় এলাকায় কখন কি অবস্থা- তা জানানো গেলে এ ধরনের দুর্যোগের ক্ষতি অনেক কমানো সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০১৭ 
এসএইচডি/আরআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।