তবে এ পরিষ্কারাভিযান সাম্প্রতিক ডেঙ্গু আতংকের জন্য নয়। চা বাগানের কোনো কোনো সেকশন এমনিতেই স্বাভাবিকভাবে পরিষ্কারের প্রয়োজন পড়ে।
অপ্রয়োজনীয় আগাছা পরিষ্কারের সময় শ্রমিকরা দেখতে পান একটি বিষধর সাপ তার লেজের উপর ভর করে ফণা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। শ্রমিকদের কেউ কেউ দারুণভাবে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। এদের মধ্যে একজন লাঠি দিয়ে সজোরে সাপটিকে আঘাত করলে সেই আঘাতটি গিয়ে পড়ে সাপে লেজে।
দৃশ্যটি অদূরে দাঁড়িয়ে দেখেন চা বাগানের এক সাহেব (বাগান কর্মকর্তা)। তিনি সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করে শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলতে থাকেন- ‘এই সাপটারে তোমরা মেরো না, এই সাপটারে তোমরা মেরো না। ...’
সাহেবের এই কথা শুনে শ্রমিকরা নিরাপদ দূরত্বে সরে আসে। লেজে আঘাটপ্রাপ্ত সাপ কিছুটা দুর্বল হয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়। মিনিট পাঁচেক পর আপনি থেকেই এঁকেবেঁকে ফিরে যায় বনের গহিনে।
ঘটনাটি ঘটে বুধবার (২১ জুলাই ২০১৯) সকালে কমলগঞ্জ উপজেলার চাম্পারায় চা বাগানে। সাপটিকে নিরাপদে প্রকৃতিতে ফিরিয়ে দিতে পারায় ওই বাগান কর্মকর্তা তার শ্রমিকদের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
চাম্পারায় চা বাগানের সিনিয়র সহকারী ব্যবস্থাপক রাশেদুল হাসান রনি বাংলানিউজকে বলেন, সকালে সেকশনের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করার সময় চার ফুট লম্বা বিষধর গোখরা সাপ ফণা তুলে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। স্থানীয়ভাবে শ্রমিকরা তাকে ‘কালো খরিস’ বলে। শ্রমিকরা ভয় পেয়ে তাকে একবার আঘাত করে বসে। আমি সঙ্গে সঙ্গে বাধা দিই এবং সাপটিকে প্রাকৃতিক পরিবেশে ফিরে যেতে সাহায্য করি।
সাপ আমাদের প্রকৃতির উপকারী প্রাণী। বিষধর হলেও সে আঘাত এবং ভয় না পেলে কাউকে ছোবল বা কামড় দেয় না। আমাদের উচিত প্রকৃতির উপকারী এসব প্রাণীদের বাঁচতে সাহায্য করা। জানান রাশেদুল হাসান রনি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে বন্যপ্রাণী গবেষক ও আলোকচিত্রী আদনান আজাদ আসিফ বাংলানিউজকে বলেন, এই সাপটি গোখরা। এর ইংরেজি নাম Monocled Cobra এবং বৈজ্ঞানিক নাম Naja kaouthia। এর প্রধান খাবার ইঁদুর। এমনকী ইঁদুরের গর্তে ডিম দেয়। ইঁদুরের সম্ভাবনা আছে এমন জায়গায় থাকতে পছন্দ করে।
তিনি আরও বলেন, এদের সারা দেশেই দেখা যায়। ইঁদুরের লোভে মানুষের বাসা, ধানের গোলা, ফসলি জমি এসব জায়গায় বেশি পাওয়া যায়। প্রধান খাদ্য ইঁদুর ছাড়াও ব্যাং, পাখি, কাঠবিড়ালি, ছোট সাপ এবং অন্যান্য ছোট প্রাণী খায়। আমি এই সাপকে সুন্দরবনে আস্ত একটি গুইসাপও গিলতে দেখেছি।
গোখরা সম্পর্কে এ গবেষক বলেন, এরা ডাঙায় ও পানিতে সমানতালে চলতে পারে। এমনকী মাঝ নদীতেও পানির মধ্যে ফণা তুলে কামড়াতে পারে। রেগে গেলে বা ভয় পেলে ফণা তুলে ফস ফস করে। ওকে আঘাত করলে, লেজে পা দিলে বা মারতে না গেলে সচারাচর কামড়ায় না। নিউরোটক্সিন বিষ বা নার্ভ বিষের অধিকারী। নিজেরা বাসা বা গর্ত করে না, ইঁদুরের গর্তেই ডিম দেয়।
বাসায় হঠাৎ এমন মেহমান না চাইলে বাড়ি ইঁদুরমুক্ত রাখতে হবে বলে পরামর্শ দেন বন্যপ্রাণী গবেষক আদনান আজাদ আসিফ।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২১, ২০১৯
বিবিবি/এএ