ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য

পরিচিতি পাওয়ার আগেই বিলুপ্ত ওষুধি ‘চাকুলি’  

বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বাপন, ডিভিশনাল সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৯
পরিচিতি পাওয়ার আগেই বিলুপ্ত ওষুধি ‘চাকুলি’   প্রাকৃতিক বনের বিরল ফুল ‘চাকুলি’। ছবি: ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন

মৌলভীবাজার: পরিচিতি পাওয়ার আগেই পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে ওষুধি গুণসম্পন্ন উদ্ভিদ ‘চাকুলি’। এর ফুলটি অপূর্ব সুন্দর। গোলাপী রঙের সঙ্গে হালকা সাদার সংমিশ্রণ।

একে অন্য নামেও ডাকা হয়। নামগুলো যথাক্রমে শংকরজটা, চালপানি, চাকালি ও বান্দরঝুটি।

এর বৈজ্ঞানিক নাম Uraria picta। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেন থেকে সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে ছবিটি তোলা।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ও উদ্ভিদ গবেষক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, চাকুলি বিরল প্রজাতির প্রাকৃতিক বনের ফুল।  ফুলটি বিড়াল বা বাঁদরের লেজের মতো খাঁড়া থাকে। এর সৌন্দর্যগুণ সবচেয়ে আকর্ষণীয়। এ উদ্ভিদটিকে যদি টবে লাগানো যায় তবে ফুল ফুটলে দেখা যাবে এর সৌন্দর্য অন্য ফুলগুলো থেকে কোনো অংশ কম নয়।

তিনি বলেন, এই ‘চাকুলি’ উদ্ভিদটি পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে যাচ্ছে। এটা কোথায় আছে, কীভাবে আছে, এটার কী কী উপকারিতা- এগুলো আমরা কেউই গুরুত্ব সহকারে নজর দিচ্ছি না। এসব জানার আগেই সমূলে এমন উদ্ভিদগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক বনভূমির এ ফুলটিকে এখন আর সব সময় পাওয়া যায় না। জঙ্গল পরিষ্কার হলে এ উদ্ভিদটিও পরিষ্কার হয়ে যায়। প্রাকৃতিক বনের বিরল ফুল ‘চাকুলি’।  ছবি: ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিনআক্ষেপের সুরে ড. জসীম উদ্দিন বলেন, একটা জিনিস মনে রাখতে হবে- সৃষ্টিকর্তা যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তার সবকিছুই কিন্তু মানুষের মঙ্গল ও কল্যাণের জন্য। পৃথিবীতে প্রচুর প্রচুর গাছাপাতা, লতাগুল্ম আছে কিন্তু আমরা বুঝি না তাদের গুরুত্ব এবং সুস্পষ্ট উপকারিতাগুলো। এখন আমাদের বুঝে ওঠার আগেই কোনো উদ্ভিদ পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়ে নিচ্ছে। আজ আমরা যেটাকে আগাছা বলছি তা হয়তো আসলেই মানুষের উপকারী এক উদ্ভিদ। আমরা যদি নয়নতারার কথাই বলি এটাও কিন্তু আগাছা। কিন্তু কী দেখা গেলো? এই আগাছা নয়নতারা থেকে ক্যানসারের ওষুধ তৈরি হলো। এমন শত শত আগাছাগুলো আমরা কিন্তু আগাছা হিসেবে চিহ্নিত করে নষ্ট করে ফেলছি।

এর ওষুধিগুণ সম্পর্কে এ গবেষক বলেন, জীবাণু বা ছত্রাকনাশক, ব্যথানাশক, ব্যাটেরিয়ানাশক, জীবনীশক্তি বৃদ্ধিকারক, হাড়ভাঙা স্থান জোড়া লাগতে সাহায্য করে। অ্যালকারয়েস, ফবোনয়েস, এছাড়াও এ উদ্ভিদে কয়েকটি কেমিক্যালজাতীয় উপাদানের সংমিশ্রণ রয়েছে।

ফুলের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ড. জসীম উদ্দিন বলেন, ফুলগুলো ছোট ছোট এবং গোলাপি রঙের। একটি লম্বা স্টিকের সঙ্গে যুক্ত থাকে। এ ফুলগুলো ‘রেসিমস’ জাতীয়। অর্থাৎ এর বড় ফুলগুলো নিচের দিকে থাকে এবং ছোট ফুলগুলো উপরের দিকে। নিচ থেকে ফুল ফোটা শুরু হয়ে উপরে গিয়ে শেষ হয়। স্টিকটা লম্বা হয় না, একই থাকে। পাতাগুলো যৌগিক, চিকন ও লম্বা। প্রতিটা পাতায় ৫ থেকে ৯টা পত্রক থাকে। সর্বোচ্চ ২ মিটারের মতো লম্বা হয় গাছটি। এটি বহুবর্ষজীবী ‘সিম’ জাতীয় উদ্ভিদ। ফুলের স্টিকটি ৫৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা।

আমরা যে সৌন্দর্যের জন্য ফুল চাষ করি- জবা, ডালিয়া, গাঁদা, গোলাপ ইত্যাদি ইত্যাদি এই ফুলটিও কম কীসের? এর যে বাহারিগঠন শৈলী ও তার সঙ্গে যে বিভিন্ন রঙের সমাহার সবকিছু মিলিয়ে দারুণ সুন্দর ফুল এটি। ‘চাকুলি’ উদ্ভিদটি ওষুধিগুণসম্পন্ন। এছাড়াও এটিকে শোভাবর্ধনের কাজে ব্যবহার করা যেতে পরে বলে জানান প্রফেসর ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪৮ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৯
বিবিবি/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।