পাখির মতো ওড়লেও আকৃতির কারণে বাদুড়ের কদর নেই। নানা কল্প-কাহিনীর আতঙ্ক সৃষ্টিকারী প্রাণী হিসেবে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও তাই সৈয়দপুর নিভৃত পল্লীতে নির্ভয়ে আবাস গড়ে তুলেছে হাজার হাজার বাদুড়।
জানা যায়, প্রায় দেড়শ বছর আগে ওই এলাকার প্রায় ৩ একর জমির বাঁশঝাড় ও দু’টি প্রাচীন বটগাছে বাদুড়ের বসবাস শুরু হয়। কয়েক যুগে লাখে দাঁড়িয়েছে এখানকার বাদুড়ের সংখ্যা। এলাকাবাসীর সহায়তায় পরিণত হয়ছে বাদুড়ের অভয়ারণ্যে। বছরজুড়ে বাঁশঝাড় আর দুটো বটগাছে নিরবে বসবাস করছে এ বাদুড়। এসব বাদুড়ের কিচির-মিচির শব্দে সারাক্ষণ কোলাহলপূর্ণ থাকে এলাকাটি। তবে রাতে খাবারের সন্ধানে আবাস ছাড়ে বাদুড়গুলো। দূর-দূরান্ত থেকে ভোরের আলো ওঠার আগেই ফেরতি শুরু করে দল বেধে।
সরেজমিনে সৈয়দপুর উপজলোর বাঙালিপুর ইউনয়িনরে ভগতপাড়ায় দেখা যায়, এলাকার জনশ্রুতি অনুযায়ী স্বামী-স্ত্রী খ্যাত মিলিত বট-পাকুর গাছের শাখা-প্রশাখায় হুকের মতো পা দু'টো আটকিয়ে নিস্তব্ধতায় ঝুলছে অসংখ্য বাদুড়। রাতের অক্লান্ত শ্রমে যেন তারা শুধু একটু প্রশান্তির ঘুম খুঁজছে।
এলাকাবাসী জানান, কখন, কীভাবে এখানে বাদুড় বসবাস শুরু হয়েছে। বংশানুক্রমে প্রায় দেড়শ বছর ধরে আবাস গড়ায় বাদুড় বাড়ি হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে গ্রামটি। তবে কুসংস্কারে আচ্ছন্ন অনেকে বাদুড়কে সৌভাগ্যের প্রতীক মনে করলেও অনেকেই আবার প্রাণনাশে ব্যস্ত থাকেন। তবে বাদুড় বাড়ির মানুষেরা তাদের স্বজনে পরিণত হয়েছে।
ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক ড. আশরাফুল কবির বাংলানিউজকে জানান, এদের প্রচলিত নাম ভারতীয় উড়ুক্কু (indian flying bat)। বৈজ্ঞানিক নাম Pteropus giganticus। frugivorus স্বভাবের। এরা পাকা আম, কলা, লিচু, ফুলের মধুসহ অন্যান্য ফলমূল খেয়ে থাকে। দল বেঁধে বট, ডুমুর এবং তেঁতুল জাতীয় গাছে একসঙ্গে বসবাস করে। পানির উৎসর পাশাপাশি আবাসস্থলে তারা বেশি থাকে। এরা রাতে সক্রিয় থাকে। প্রায় ১১০০ প্রজাতির বাদুড় রয়েছে। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে বাদুড়ের সংখ্যাই ২০ ভাগ। এর মধ্যে ৭০ ভাগ বাদুড় পতঙ্গ-ভুক। বাকিরা ফলমূল খায়। এরা নিশাচর প্রাণী। দিনের বেলায় অন্ধকার স্থানে উল্টো হয়ে ঝুলে থাকে। শ্রবণশক্তির ওপর নির্ভর করে এরা চলাচল করে।
পাখি ও পরিবেশ সুরক্ষা জনসচেতনতা বাড়াতে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেতুবন্ধন যুব উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি আলমগীর হোসেন জানান, ২০১৩ সাল থেকে আমরা পাখি ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করছি। সৈয়দপুর ছাড়াও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, চিরিরবন্দর, তারাগঞ্জ, নীলফামারী সদর, কিশোরগঞ্জ এলাকায় পাখি নিরাপদ বাসস্থানের জন্য গাছে গাছে কলস বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ওইসব এলাকায় সচেতনতায় কাজ করছে সংগঠনটি। তিনি বলেন, সৈয়দপুরে পাঁচটি পাখির অভয়াশ্রম রয়েছে। এরমধ্যে ভগতপাড়ায় বাদুড়ের অভয়াশ্রমটি সংগঠনের সদস্যরা দেখভাল করছেন।
সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম গোলাম কিবরিয়া জানান, সৈয়দপুর উপজেলা পরিষদ চত্বরে বণ্যপ্রাণী উদ্ধার ও সাময়িক পরিচর্যা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। বেশ কয়েকটি জায়গা পাখির অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৯
ওএইচ/