ঢাকা, শনিবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

জলবায়ু ও পরিবেশ

ভোরের স্নিগ্ধ শিশিরে ভর করে শীত নামছে উত্তরে

শরীফ সুমন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৯
ভোরের স্নিগ্ধ শিশিরে ভর করে শীত নামছে উত্তরে ধানের শিষে শিশিরবিন্দু। ছবি: বাংলানিউজ

রাজশাহী: সুশোভিত শিউলি ঝরা সকাল দিয়ে একমাস আগেই বিদায় নিয়েছে শরৎ। হেমন্তের শিশিরবিন্দুতে নুইয়ে পড়া শুভ্র-সফেদ কাশফুলের রঙও এখন ধূসর। গাছের কচি পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে মিষ্টি রোদ। 

মেঘমুক্ত সুনীল আকাশটাও যেন ডাকছে হাতছানি দিয়ে। বিকেল পাঁচটা গড়ালেই পশ্চিমে ঢলে পড়ছে সূর্য।

গোধূলি লগ্নের রক্তিম সূর্য সবাইকে রোমাঞ্চিত করে জল দিয়েই নামিয়ে দিচ্ছে সন্ধ্যা।  

রাতের আকাশে চলছে ফালি ফালি জোৎস্নার খেলা। ভোরের আলো ফুটতেই মাঠের সবুজ ধানের পাতাগুলো ভিজে উঠছে স্নিগ্ধ নীহারে। সূর্যের বর্ণচ্ছটায় ধানের শিষের ডগায় নুয়ে পড়া কাঁচের মতো শিশিরবিন্দুগুলো যেন প্রতিবিম্ব হয়ে উঠছে সবুজ প্রকৃতির। আর মায়াবী প্রকৃতির এই অবয়ব যেন বিমুগ্ধ করতে শুরু করেছে সবাইকে।   

ঘন কুয়াশা।  ছবি: বাংলানিউজ

মাঠে পাকা ধানের সোঁদাগন্ধ আর সাতসকালে উত্তর থেকে বয়ে আসা হিমেল হাওয়া জানান দিচ্ছে হামাগুড়ি দিয়ে শীত আসছে। বাংলার অপরূপা এই প্রকৃতিতে শুরু হতে যাচ্ছে নবান্ন উৎসব। নতুন ধানের চাল, পায়েস আর পিঠাপুলিতে মেতে উঠতে যাচ্ছে কৃষকের উঠোন। কালের চাকায় ভর করে আবারও সমাগত কুয়াশাচ্ছন্ন শীত।

রাজশাহীর পদ্মাপাড়ে এবার ভিন্ন আবহে কেটেছে কার্তিক। মধ্য নভেম্বরেও শীতের দেখা মেলেনি। কিন্তু অগ্রহায়ণের প্রথম সপ্তাহ পার না হতেই আঁচর কেটেছে শীত। এখনো সোয়েটার, চাদর, মাফলার বা লেপ-কম্বল নামাতে পারলেও রাতে ঘরের সিলিং ফ্যানটি বন্ধ হয়েছে। কেউ আবার ফ্যানের রেগুলেটর ঘুরিয়ে কমিয়েও রাখছেন।

খরাপ্রবণ রাজশাহীতে গরম যেমন ভয়াবহ শীতও পড়ে তেমন। তাই শহরতলীতে যখন এমন শীতের আমেজ তখন গ্রামগঞ্জে হেমন্তেই যেন এসে গেছে শীত।  

মাকড়সা জালের ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে সূর্য ।  ছবি: বাংলানিউজ

সকাল হলেই কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে সেখানে পদধ্বনি পাওয়া যাচ্ছে শীতের। পাখিদের ডানা ঝাঁপটানো শব্দ আর কিচিরমিচির ডাকে ঘুম ভাঙাছে কৃষকদের। ভোরের হালকা কুয়াশা ভেদ করে মাঠে নামছেন তারা। নতুন আলু, শিম, টমেটো ও মুলা উঠতে শুরু করেছে। বড় আকারের ফুল ও বাঁধাকপিতে ভরে উঠছে কাঁচা বাজার।  

কোমরে রশি বেঁধে গাছিরা উঠে পড়ছেন খেজুর গাছে। মিষ্টি-মধুর খেজুরের রস নামিয়ে আগুনে পুড়িয়ে তৈরি করছেন গুড়। ঘরে-ঘরে শুরু হয়ে গেছে নবান্নের প্রস্তুতি। আর গত সপ্তাহ থেকে দিনের তাপমাত্রাও কমতে শুরু করেছে। তাহলে এবছর কাঁপন ধরানো শীত নামবে কবে? 

আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, মধ্য ডিসেম্বরের আগে নয়। অর্থাৎ এ বছর অগ্রহায়ণ পেরিয়ে পৌষ মাস এলেই নামবে হাড় কাঁপানো শীত। বিভিন্ন সময় ঘনীভূত হওয়া নিম্নচাপ এবং অসময়ের ঝড়-বৃষ্টির কারণে শীতের পথে বাদ সেধেছে জলীয়বাষ্প। সাধারণত নভেম্বরের শুরুতেই রাজশাহীসহ উত্তরের বিভিন্ন জেলায় আগে শীতের অনুভব হয়। তবে, এবছর মৌসুমি বায়ু দেরি করে আসায় গেছেও দেরিতে। তাই এবছর শীতও আসছে দেরি করেই। রাজশাহীসহ গোটা উত্তরাঞ্চলে জেঁকে বসবে শীত। তবে, এজন্য অপেক্ষা করতে হবে মধ্য ডিসেম্বর পর্যন্তই।  

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ আবহাওয়া কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন বাংলানিউজকে জানান, এক সপ্তাহ থেকে আবহাওয়ার ধারাবাহিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এ সময় থেকে রাজশাহীর গড় তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে।

মাকড়সা জালে জড়িয়ে আছে শিশিরবিন্দু।  ছবি: বাংলানিউজ তিনি জানান, দিনের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৬ থেকে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে  এসেছে। আর সর্বোচ্চ তামপামাত্রা ২৮ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে গত ১৭ নভম্বর রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৬ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ১৮ নভেম্বর ছিল ১৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ১৯ নভেম্বর ছিল ১৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২০ নভেম্বর ছিল ১৪ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২১ নভেম্বর ছিল ১৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২২ নভেম্বর ছিল ১৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ২৩ নভেম্বর ছিল ১৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ২৪ নভেম্বর (রোববার) ভোরে রাজশাহীর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।  

দেরিতে এলেও এবার শীতের প্রকোপ বেশি থাকবে বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন ঢাকা আবহাওয়া অধিদফতরের পূর্বাভাস কর্মকর্তা মো. আবদুল হামিদ।  

তিনি বলেন, এরই মধ্যে শীতের অনুভূতি মিলছে। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে রাতের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমতে থাকবে। তবে, এখনই শীত জেঁকে বসবে না। দেশে শীতের প্রকোপ শুরু হবে মধ্য ডিসেম্বরে। তাই আপাতত হালকা শীতে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।  

আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বভাসে বলা হয়েছে, নভেম্বর শেষদিকে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকবে। তবে, গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকতে পারে। এ সময় দেশের নদী অববাহিকায় ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। ডিসেম্বরে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। তাই চলতি মাসে রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে কমতে থাকবে। এ মাসের শেষার্ধে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে এক থেকে দুটি মৃদু (৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ও মাঝারি (৬-০৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। শেষ রাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চল ও নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে।  

মাকড়সা জালের ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে সূর্য ।  ছবি: বাংলানিউজজানুয়ারিতে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এ মাসে দেশে দুই থেকে তিনটি মৃদু (৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে মাঝারি (৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে দুটি তীব্র (৪-৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) শৈতপ্রবাহে রূপ নিতে পারে। এ মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চল এবং নদ-নদী অববাহিকায় মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে।  
   
বাংলাদেশ সময়: ০৮১২ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৫, ২০১৯
এসএস/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।