গত ২৬ মার্চ থেকে পহেলা বৈশাখে ফুল বিক্রির টার্গেট নিয়ে চাষিরা প্রস্তুতি নিলেও করোনার কারণে ক্ষেতগুলো থেকে ফুল তুলতে পারেননি। ফলে ক্ষেতের বড় বড় লাল গোলাপগুলো গাছেই পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
সাভার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার বিরুলিয়াসহ সাভারের কয়েকটি জায়গায় প্রায় ৩০০ একর জমিতে গোলাপসহ অন্যান্য ফুলের চাষ করেছেন চাষিরা। এ বছর লাভের প্রত্যাশা ছিল কয়েক কোটি টাকা। করোনার আগে কয়েকটি দিবসে এ পর্যন্ত ৩০ শতাংশ ফুল বিক্রি হয়েছে, বাকি ফুলগুলো ক্ষেতেই রয়ে গেছে। সোমবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে সরেজমিনে বিরুলিয়ার গোলাপ গ্রাম শ্যামপুর, মোস্তারাপাড়া ও বাগনীবাড়ী গিয়ে দেখা গেছে, চিরচেনা সেই গোলাপ গ্রাম পুরোপুরি পাল্টে গেছে। ক্ষেতে কোনো চাষি নেই। গাছে বড় বড় গোলাপ ফুল পচে শুকিয়ে রয়েছে। সড়কে এখন আর চাষিরা গোলাপ ভর্তি খাঁচা নিয়ে বাজারে যায় না। গোলাপের বাজারগুলো একদম জনশূন্য। স্তব্ধতা বিরাজ করছে পুরো এলাকায়।
আরও দেখা গেছে, গ্রামের বাগানগুলোতে ঢোকার পথে পথে কলাগাছ কেটে রেখে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কোনো দর্শনার্থী যেন প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য। করোনা ভাইরাসের কারণে এলাকাটি পর্যটনদের জন্য পুরোপুরি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
জানা গেছে, সকাল-সন্ধ্যা পুলিশ প্রশাসনের টহল থাকে এই গোলাপ গ্রামে। কোনো বহিরাগত লোক ঢুকতে পারে না আবার কেউ বের হতেও পারে না। চাষিরাও বাগানে যেতে পারছেন না বিধায় ফুলগুলো বিভিন্ন রোগ-বালাইসহ নানা কারণে পচে যাচ্ছে।
এদিকে গোলাপ বাগানে কোনো চাষিকে না পেয়ে বাগানগুলোর মালিকের খোঁজ করতে করতে এক বাড়িতে গিয়ে কথা হয় ইসমাইল নামে এক ফুল চাষির সঙ্গে। তিনি প্রায় ১৫ বছর ধরে ৩ বিঘা জমির উপর গোলাপ ফুলের চাষ করে আসছেন।
ইসমাইল বাংলানিউজকে বলেন, আমার এত বছরের ফুল চাষের বয়সে এমন পরিস্থিতিতে কখনো পরিনি। কত রকম রোগ হয়েছে ফুলে তারপর আবার সেরেও গেছে। কিন্তু এবার সারাদেশের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ফুলের বাগানগুলোতেও বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। এ অবস্থায় আমাদের এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে। আরেক ফুল চাষি আতাউল বাংলানিউজকে বলেন, আমি ৪ শতাংশ জমিতে গোলাপের গাছ লাগিয়েছি। করোনার কারণে ক্ষেতে যেতে পারছি না, এতো সুন্দর সুন্দর গোলাপগুলো গাছেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে বাজারও বন্ধ কোথাও গোলাপ বিক্রি হয় না। গোলাপ বিক্রি করলে আমাদের পেটে ভাত যায়, আর বিক্রি না হলে না খেয়ে থাকতে হয়।
সরকারের পক্ষ থেকে কোনো খাদ্যসামগ্রী বা সহয়তা পেয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না ভাই, এখন পর্যন্ত আমাদের এখানে কোনো রকম সাহায্য সহযোগিতা আসেনি। ঘরে যা জমানো টাকা ছিলো তা শেষের দিকে। কয়েকদিন পর পরিবার নিয়ে না খেয়ে মরতে হবে।
সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, আসলে সারাদেশে যে অবস্থা শুরু হয়েছে মানুষ জীবন বাঁচানো চেষ্টায় রয়েছে। কয়েকটি দিবসে ফুল চাষিরা ফুল বিক্রি করতে পারলো না। চাষিদের ঘরে এখন খাবারের অভাব। আমি যতটুকু পারছি সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা করছি৷ সরকার থেকে প্রাপ্ত সব উপহার চাষিদের ঘরে ঠিক মত চলে যাবে বলে আশাকরি।
গোলাপ গ্রামের নিরাপত্তাসহ জনসমাগমরোধে কাজ করে যাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এ বিষয়ে বিরুলিয়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (এসআই) অপুর্ব দত্ত বাংলানিউজকে বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা সবার মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে কাজ করছি৷ প্রতিদিন গোলাপ বাগানসহ তার আশপাশের এলাকায় টহল দেওয়া হচ্ছে। কোনোরকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমরা সব সময় প্রস্তত রয়েছি৷
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২০
আরএ