ঢাকা, শুক্রবার, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বছরজুড়ে দেশ ঘুরে

সুন্দরে এতো হিংসে কেন!

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৬, ২০১৬
সুন্দরে এতো হিংসে কেন! চিত্রা এক্সপ্রেসের একটি বগি/ ছবি- আসিফ আজিজ

চিত্রা এক্সপ্রেস থেকে: সুন্দর ট্রেনটি সার্চ লাইটের মতো চোখ জ্বেলে বিমানবন্দর স্টেশনে প্রবেশ করতেই শুরু দৌড়ঝাঁপ। প্ল্যাটফর্মে থামতেই পড়ি মরি করে আগে ওঠার প্রতিযোগিতা। উঁচু ঝোলানো লোহার সিঁড়ি বেয়ে দ্রুত ওঠাও একেবারে সহজ নয়! তাই পিছঠেলা মতো করে ব্যাগ-ব্যাগেজের সঙ্গে শিশু সন্তানকে আগে ওঠানো।

কিংবা ওপর থেকে ঝোলার মতো টেনে তোলা। তাতেও বিপত্তি কম নয়, বড়রা মিনিট পাঁচেক ট্রেনটি থেমে থাকার মধ্যে উঠতে পারবেন ভাব নিলেও ভ্যাগদেবতা সহায় হন না সবসময়।

রেক্সিনের সিটও রেহাই পায়নি হিংসে থেকে
 
সিনেমায় রেলস্টেশনে নায়ক-নায়িকার চিরায়ত বিচ্ছেদ দৃশ্যের মতো ঘটনার অবতারণা হতে দেরি হলো না। বছর দশেকের তিন ভাগ্নেকে আগে উঠিয়ে নিচে রয়ে গেলেন মামা।
হাত উঁচিয়ে শুধু দৌড়ানোর চেষ্টাই সার হলো। অগত্যা ট্রেন অ্যাটেনডেন্টরা স্টেশন মাস্টারের মাধ্যমে খবর পেয়ে টাঙ্গাইলে নামানোর দায়িত্বটুকুই নিতে পারলেন। জানালাগুলোতে দুষ্ট মনের আঁচড়
 
সে অন্য কথা। বাইরে থেকে দেখতে সুন্দর চিত্রা ট্রেনটির ভেতরটাও তকতকে ঝকঝকে। যাবে ঢাকা থেকে খুলনায়। এয়ারটাইট এসি বগিতে উঠেই মন ভালো হয়ে গেলো। এটা বাংলাদেশের ট্রেন! ভারতের দ্বিতীয় দ্রুততম ট্রেন মুম্বাই দূরন্তের সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করছিলাম। কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেলো না, এটা তার চেয়ে ভালো কোনো অংশে। যদিও এ বগিগুলোও তৈরি ভারতে। ময়লা ফেলার ঝুড়ি
 
ল্যাপটপ-মোবাইলের চার্জার পয়েন্ট, প্রতি সিটের জন্য স্পট লাইট, ময়লা ফেলার ঝুড়ি, টয়লেটে হ্যান্ডপুশ, সাবান, হ্যান্ডওয়াশ, ফ্ল্যাশ, বেসিন সবই আছে এ ট্রেনে। ননএসি বগিগুলোও গ্লাস ফেলে দিলে বাতাসবন্দি। তাই শীত-বর্ষায় ক্ষতি নেই।

কিন্তু বিপত্তি অন্যখানে। সব সুন্দরের মাঝে ঢুকে পড়েছে কিছু অসুন্দর মন। মনে কী তাদের হিংসে! সাড়ে চার ফুট বাই তিন ফুটের শক্ত গ্লাসের জানালাগুলোতে দুষ্ট মনের আঁচড়। আগস্টের শেষে উদ্বোধন হওয়া ট্রেনটির অনেকগুলো গ্লাস ফেটেছে ঢিলের আঘাতে। সুন্দরকে ধ্বংস করাই যেনো ওইসব দুষ্টু মনের কাজ। চিপসের প্যাকেট
 
প্রতিটি বগি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে প্লাস্টিকের ঝুড়ি রাখা আছে। সেখানেও দুষ্টু মনের আঁচড়। শীতে ওম করা জায়গা ছেড়ে ওঠার আলসেমি অথবা শরীরে ভর করা শয়তানের জিম্মায় চিপস, বাদাম খেয়ে তাল করে রাখা হয়েছে সিটের পাশেই। যেনো খাবার টেবিলে হাড়-কাঁটা চিবিয়ে বোনপ্রিজে ফেলার অভ্যাসটুকুও নেই ভদ্রজনদের! ঢাকা থেকে ছাড়া সুন্দর পরিচ্ছন্ন ট্রেনটিকে ময়লার ভাগাড়, ডাস্টবিন বানাতে বেশি দেরি লাগলো না। টাঙ্গাইল আসতেই অপভ্যাসে সে কাজ সম্পন্ন।

ব্রডগেজ লাইনের বড় বগিগুলোর প্রতি দুই সারি সিট পরপর ‘অনুগ্রহপূর্বক সিটের হাতলে বসবেন না’ লেখা থাকলেও হরহামেশাই সেদিকেই থাকে নজর। প্রতি মুহূর্তে অ্যাটেনডেন্টদের হাতলে না বাসানোর সংগ্রামে লিপ্ত থাকতে হয় বলেই জানালেন এসি বগির অ্যাটেনডেন্ট আসাদুজ্জামান।

প্রতি স্টেশনে থামার আগে স্পিকারে ঘোষক বলে দেন কীভাবে টয়লেট ব্যবহার করতে হবে, সিটের হাতলে বসা যাবে না, ধূমপান করা যাবে না। সিগারেটের প্যাকেট ও খোসা
 
কিন্তু ‘শয়তান’ ভর করেছে টয়লেট ও এর আশপাশেও। নিষেধ অমান্য করে ঠিকই লুকিয়ে তামাক শলাকা সেবন এবং তার পুচ্ছ অংশ পায়ে ডলে ফেলে পরিচ্ছন্ন মেঝে নোংরা করার মাঝেই যেনো সব স্বার্থকতা। সঙ্গে পরিণামে মৃত্যুর বীভৎস ছবি সম্বলিত কাগজের প্যাকেটটির ভবিষ্যতও তাই। অথচ টয়লেটের সঙ্গেই রয়েছে ডাস্টবিন। কিন্তু ঠিক বিনের নিচেই চিপসের প্যাকেট কিংবা সিগারেটের পুচ্ছের ছড়াছড়ি।

টয়লেটগুলোর অবস্থাও ব্যবহার করতে না পারার গুণে করুণ! সব সুবিধা থাকা সত্ত্বেও রাখা হয়েছে নোংরা করে। ননএসি বগির রেক্সিনের সিটও রেহাই পায়নি হিংসে থেকে। দাঁড়িয়ে-বসে হাত যেনো নিশপিশ করে ছেঁড়ার জন্য। ভালোর ভালো সহ্য হয় না। না হলে সুন্দর সিটগুলোর পিছে কেন লাগা!প্লাস্টিকের প্যাকেট
 
অ্যাটেনডেন্ট আসাদুজ্জামান জানালেন, যাত্রীদের নিষেধ করেও মানানো যায় না। আমরা কতক্ষণ খেয়াল রাখবো। মাছ নেওয়া নিষেধ থাকলেও কেউ কেউ নেয়। সিগারেট খায়, নিষেধ করলে চুরি করে এসে খায়। হাতলে না বসার জন্য প্রতিদিন বলতে হয়। বাথরুমটিও নোংরা করে। অথচ প্রতিদিন একবার সম্পূর্ণ ওয়াশ করা হয়। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে তবেই যাত্রা শুরু করা হয়। এখন যাত্রীরা যদি খুলনা রুটের সবচেয়ে সুন্দর সুবিধাসম্পন্ন এ ট্রেনটিকে সুন্দর রাখতে না দেয় তাহলে কার কি বলার, করার আছে।

‘আপন হতে বাহির হয়ে বাইরে দাঁড়া’তে আমরা সহজে পারি না। সুন্দরের প্রতি হিংসে ছাড়া একে আর কি বলা উচি‍ৎ।

বাংলাদেশ সময়: ০৩৩৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৭
এএ/এসই/জেডএস/এটি

সহযোগিতায়

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।