রোববার সকালে রাঙামাটি যাওয়ার পথে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার ইছাখালী বাজারে হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এতে মির্জা ফখরুল ইসলাম, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ চারজন আহত হয়েছেন।
পরে রাঙামাটি না গিয়ে নগরীতে ফিরে আসেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। দুপুর একটায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ভূমি ধসে নিহতদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদার নির্দেশে চারজনের প্রতিনিধি দল ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে আসি।
পথে জানতে পারলাম রাঙামাটি সড়কে ভাঙন আরও বেড়েছে। তাই কাপ্তাই হয়ে নদীপথে রাঙামাটি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। খসরু, নুরুল আলম, ডা. ফাওয়াজ এবং চট্টগ্রামের নেতারাসহ বিমানবন্দর থেকে রাঙামাটির উদেশ্যে রওয়ানা হই।
ইছাখালী যেতেই প্রচন্ড বৃষ্টি শুরু হয়। আমাদের গাড়িবহর ইছাখালী বাজারের কাছাকাছি পৌঁছলে হঠাৎ করে ৩০-৪০ জন যুবক লোহার রড, রামদা, হকস্টিক, বড় বড় পাথর নিয়ে আ্ক্রমণ শুরু করে। প্রথমে একটি বড় পাথর দিয়ে খসরু সাহের গাড়ির সামনের কাঁচের গ্লাস ভাঙলো। পরে হকস্টিকের আঘাতে গাড়িতে ভাংচুর চালানো হয়। খসরু হাতে রক্তাক্ত হয়েছে। নুরুল আলম ও শামীম মাথায় আঘাত পেয়েছে। আমি নিজেও আহত হয়েছি।
‘আমাদের উপর আঘাত বড় কথা নয়, এ আঘাত মুক্ত চিন্তা ও গণতন্ত্রের উপর, বাংলাদেশের রাজনীতিতে যারা মুক্তচিন্তা করেন, সরকারের খারাপ কাজের বিরোধিতা করেন, গণতন্ত্রের পক্ষে সোচ্চার হন তাদের প্রতি এ আঘাত। এ আক্রমণ প্রমাণ করছে সরকার সম্পূর্ণ গায়ের জোরে ফেসিস্ট ওয়েতে দেশ পরিচালনা করছে। ’
আওয়ামী লীগ বলে তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। এ হামলা প্রমাণ করে তারা গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয়। আমরা সেখানে জনসভা করতে যাচ্ছি না, দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে যাচ্ছিলাম। আমাদের উপর যদি এভাবে হামলা হয় তাহলে সাধারণ মানুষের কি অবস্থা।
নিরাপত্তা না থাকায় ফিরে এসেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা রাঙামাটির নেতাদের বিষয়টি জানিয়েছি। তারা সেখানে প্রতিবাদ করেছে। আমরা দুর্গত মানুষের জন্য যে ত্রাণ সামগ্রীর ব্যবস্থা করেছিলাম তা বিতরণ করবে। সোমবার সাংগঠনিক সম্পাদক রাঙামাটি যাবেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, তাদের প্রতি আমরা সুস্পষ্ট করে বলতে চাই। আজ আওয়ামী লীগের চরিত্র আরও বেশি স্পষ্ট হয়েছে। তারা সবসময় বলে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। আসলে তারা গণতন্ত্র বিশ্বাস করে না। সহনশীলতা বলতে তাদের মধ্যে কিছু নেই। আমরা জনসভা বা পার্টির মিটিং করতে যাচ্ছি না। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে যাচ্ছিলাম। সেই পথে আক্রমণ আমাদের কাছে দুঃস্বপ্নের মতো মনে হয়েছে। আমাদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হয়েছে।
সুস্থ চিন্তা, মুক্ত বুদ্ধির যারা মানুষ রয়েছে তাদের প্রতি এ আক্রমণ ভয়াবহ ঘটনা। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে ফেসিস্ট সরকারকে প্রতিহত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই আমাদের বিজয় হবে।
সরকার বিএনপিকে কাজ করার সুযোগ দিচ্ছে না অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য, তারা আমাদের কোন স্পেসই দিচ্ছে না।
রাঙামাটিতে ভয়াবহ যে দুর্যোগ তাতে জাতীয় দুর্যোগ দিবস ঘোষণা দেওয়া উচিত ছিল মন্তব্য করে তিনি বলেন, এতগুলো মানুষ মারা গেল। তাদের জন্য রাষ্ট্রিয় শোক ঘোষণা করা হয়নি। কারণ জনগণের প্রতি সরকারের কোন দরদ নেই। জবাবদিহিতা নেই।
তিনি বলেন, এখনও পর্যন্ত সড়ক যোগাযোগ সচল হয়নি। ঢিমে তালে কাজ চলছে। এরই মধ্যে খাদ্যদ্রব্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। দুর্যোগ এলাকা ঘোষণা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত ছিল। প্রয়োজনে হেলিকপ্টারে করে খাদ্য পাঠানো দরকার ছিল। কিন্তু সেটা আমরা দেখছি না।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক, চট্টগ্রাম বিষয়ক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. ফাওয়াজ হোসেন শুভ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ঘণ্টা, জুন ১৮, ২০১৭
এমইউ/টিসি