ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ পৌষ ১৪৩১, ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯ রজব ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বাবার চেয়ারে বসবেন ছেলে

নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২৫
বাবার চেয়ারে বসবেন ছেলে সাঈদ আল নোমান, মীর হেলাল, হুম্মাম কাদের চৌধুরী (ওপরে), সামির কাদের চৌধুরী, ইসরাফিল খসরু, ওমর ফারুক (নিচে)।

চট্টগ্রাম: হাটহাজারীর ১৬টি ইউনিয়ন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী, ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ড নিয়ে চট্টগ্রাম-৫ সংসদীয় আসন। এখানে মোট ভোটার ৪ লাখ ৭৫ হাজার ৭১৩ জন।

 

২০০৮ সালের আগের নির্বাচন পর্যন্ত এই আসনটি ছিল বিএনপির। দলের ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সঙ্গে রাখছেন ছেলে ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিনকে, যিনি বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক।

বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত মীর নাছির সাম্প্রতিক সমাবেশে বলেছেন, ‘দলের নেতা নির্বাচনে ডিএনএ টেস্ট করতে হবে। আমরা রাজনীতিতে নতুন প্রেক্ষাপট সৃষ্টি করবো’। এর প্রেক্ষিতে তাঁর সমর্থকরা বলছেন, হাটহাজারী আসনে দল থেকে মীর হেলাল প্রার্থী হতে পারেন।  

একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে মনোনয়নপত্র নিয়েছিলেন মীর হেলাল। তৎকালীন নির্বাচন কমিশন তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করায় প্রার্থী হতে পারেননি। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে উপস্থিত থেকে এরইমধ্যে তিনি প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। বলেছেন, ‘হাইকমান্ডের নির্দেশনা মেনে কাজ করছি। আশা করি, দল মূল্যায়ন করবে। ’

বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমানের রাজনীতির বয়স অর্ধশতাব্দীরও বেশি। চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং-হালিশহর-পাহাড়তলী-খুলশী) আসন থেকে আগামী নির্বাচনে তিনি অংশগ্রহণ না করলে প্রার্থী হতে পারেন ছেলে সাঈদ আল নোমান।

এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৬৩৮ জন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হন আবদুল্লাহ আল নোমান। চট্টগ্রাম-৯ (কোতয়ালী) আসন থেকেও নির্বাচন করে ১৯৯১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।

আবদুল্লাহ আল নোমান দলীয় কর্মসূচিতে ছেলেকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। ছেলে সাঈদ আল নোমান চট্টগ্রামের ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ভাইস চেয়ারম্যান। সাবেক প্রধানমন্ত্রী, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসার উদ্দেশ্যে লন্ডন যাত্রার আগে রোববার (৫ জানুয়ারি) রাতে চেয়ারপারসনের গুলশানের বাসভবন ফিরোজায় সাক্ষাৎ করেন আবদুল্লাহ আল নোমান। এসময় সঙ্গে ছিলেন ছেলে সাঈদ আল নোমান।

সাক্ষাতে কী কথা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘সেখানে সংগঠনের অগ্রগতির বিষয়ে কথা হয়েছে। আমাদের কাজ ফল দেবে, আমাদের কাজের মধ্য দিয়ে মানুষ মূল্যায়ন করবে’।

প্রয়াত বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরীও আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হতে তৎপরতা চালাচ্ছেন। তবে কোন আসন থেকে নির্বাচন করবেন, তা নির্ভর করছে দলীয় সিদ্ধান্তের ওপর। চট্টগ্রাম-৭ আসনে (রাঙ্গুনিয়া, বোয়ালখালী আংশিক) মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১৩ হাজার ৯১ জন। এখানে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য ছিলেন।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রামের ৩টি আসনে (রাউজান, রাঙ্গুনিয়া ও ফটিকছড়ি) সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ভাই গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, স্ত্রী ফরহাত কাদের চৌধুরী ও তার ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বিএনপির প্রার্থী হওয়ার লক্ষ্যে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাউজানে বিএনপির মনোনয়নের চিঠি পান গিয়াস কাদের চৌধুরীর ছেলে সামির কাদের চৌধুরী।

রাঙ্গুনিয়ার পারুয়া সাহাব্দিনগর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, ‘যেভাবে চিন্তা করেন না কেন- হয়ত আমার জেদ হয়ে বসেছে, এই আসন বিএনপির হাতে ফেরত দিতে হবে আমাদের। নির্বাচনে দল আমাকে মনোনয়ন দেবে কী দেবে না, ওটা পরোয়া করি না’।  

চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে ১৯৯১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত টানা ১৫ বছর ধানের শীষে জয় পান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। এই আসনে মোট ভোটার ৫ লাখ ১ হাজার ৮৫২ জন। এবারও নির্বাচন করতে পারেন আমীর খসরু। তবে রাজনীতির তালিম দিচ্ছেন ছেলে ইসরাফিল খসরুকে। বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, অনুষ্ঠানে সরব ইসরাফিল।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহতদের দেখতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে সমবেদনা জানান ইসরাফিল খসরু। ইপিজেড থানাধীন দক্ষিণ হালিশহর ওয়ার্ড বিএনপি’র বিজয় দিবসের র‍্যালি ও সমাবেশে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, দলে ত্যাগী নেতাদের অবশ্যই মূল্যায়ন করতে হবে। আগামী নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশ ও তারেক রহমানের প্রদর্শিত দিক নির্দেশনা অনুযায়ী দল পুনর্গঠনে সবার সহায়তাও চান তিনি।

চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ-সাতকানিয়া আংশিক) আসনে একাধিকবার সংসদ সদস্য হন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি ও সাবেক যোগাযোগ মন্ত্রী ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম। বেঁচে থাকা অবস্থায় ছেলেকে চন্দনাইশবাসীর হাতে তুলে দিতে চান তিনি।

সভা-সমাবেশে তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন, তুমি আর নির্বাচন করবে না। আপনাদেরও একটা চিন্তা ছিল- আমি চলে গেলে আপনাদের দায়িত্ব কে নিবে? কোনো বাটপার, লাফাঙ্গা যদি এই এলাকার দায়িত্ব নেয় তাহলে সব শেষ করে দেবে।  সেজন্য ছেলেকে তৈরি করেছি। তাকে লেখাপড়া করিয়েছি আমেরিকার বোস্টন ইউনিভার্সিটিতে। সেটা বিশ্বের সেরা ইউনিভার্সিটির একটা। লন্ডন ইউনিভার্সিটিতেও পড়িয়েছি। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেছে। তাকেই আপনাদের জন্য তৈরি করেছি। আমি মনে করি, জীবিত থাকা অবস্থায় আমি তাকে (ছেলেকে) আপনাদের হাতে যাতে তুলে দিতে পারি। সে যদি তখন কোনো ভুল-ভ্রান্তি করে তার বিরুদ্ধে আমাকে অভিযোগ করতে পারবেন’।

পাশে থাকা বড় ছেলে ওমর ফারুককে দেখিয়ে তাদের কাছে তুলে দিতে পারবেন কি-না, সমাবেশে উপস্থিত লোকজনের প্রতি জিজ্ঞাসা করলে তারা হাত তুলে হ্যাঁ সূচক উত্তর দেন। জনতার উদ্দেশে বর্ষীয়ান এ নেতা বলেন, ‘আপনাদের জন্যই তাকে তৈরি করেছি। চন্দনাইশ-সাতকানিয়ায় সে নির্বাচন করবে’।

ঢাকার ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ওমর ফারুক সানি জানান, বাবা তাঁকে এলাকাবাসীর সামনে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে অংশ নিয়ে যোগ্যতার ছাপ রাখবেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২৫ 
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।