কিন্তু রামের বাবা দশরথের বন্ধু জটায়ু পাখি সীতার আর্তনাদ শুনলেন। জটায়ু তখন বৃদ্ধ, ঠিকঠাক উড়তেও পারেন না।
রাবণ বৃষ্টির মতো বাণ বর্ষণ শুরু করলেন। বৃদ্ধ হয়ে গেলেও কী হবে, তিনি বিষ্ণুর বাহন এবং ঋষি কশ্যপ ও বিনতার পুত্র গরুড় পাখির ছেলে। তিনিও কম যান না, সমানে ধারালো নখ ও ঠোঁট দিয়ে রাবণের মাথা, ঘাড় ও কাঁধে আঘাত করতে লাগলেন। খণ্ড খণ্ড করে ফেললেন রাবণের ধনুক। এভাবে চললো অনেক্ষণ।
কিন্তু রাবণও দেবতাদের বর পাওয়া বীর। তরবারি দিয়ে কেটে ফেললেন জটায়ুর একটি ডানা। এরপরও লড়ে গেলেন বৃদ্ধ জটায়ু। একডানায় ভর দিয়ে লড়ে যেতে লাগলেন রাবণের সঙ্গে। এভাবে আর কতোক্ষণ! রাবণ অন্য ডানাটিও কেটে দিলেন। এরপর একের পর বাণ নিক্ষেপ করলেন জটায়ুর শরীরে। একসময় মাটিতে পড়ে গেলো মুমূর্ষু জটায়ুর দেহ। রাবণ সীতাকে নিয়ে উড়াল দিলেন লঙ্কাপুরীর উদ্দেশে।
পরে মৃত্যু হয় জটায়ুর। কথিত রয়েছে, জটায়ুর মুমূর্ষু দেহ পড়েছিল ভারতের লেপাকশি গ্রামে। ভৌগলিকভাবে গ্রামটি অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের অনন্তপুর জেলায় অবস্থিত।
রামায়ণ অনুযায়ী, সীতা হরণের খবর পাওয়ার পর বনের পশু-পাখিদের কাছ থেকে শুনে শুনে জটায়ুর মরদেহস্থলে পৌঁছান রাম। কাতর হয়ে তার পাশে গিয়ে বলে ওঠেন— জাগো, পাখি। তেলেগু ভাষায় এর অর্থ, লে পাকশি। সেখান থেকেই গ্রামের নাম লেপাকশি।
বর্তমানে লেপাকশি গ্রাম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জটায়ুর প্রতি শ্রদ্ধা ও স্মৃতিতে খ্রিস্টাব্দ ১৪ শতাব্দীতে এখানে গড়ে ওঠে শ্রী বীরভদ্র স্বামী মন্দির। লোকবিশ্বাস, মন্দিরের এই জায়গাটিতেই পড়েছিল জটায়ুর দেহ।
মন্দিরে রয়েছে শিব, বিষ্ণু, বীরভদ্রসহ রয়েছে গ্রানাইট পাথরে খোদাই করা হাজারো দেব-দেবীর প্রতিকৃতি। রয়েছে ১৩শ শতাব্দীর বিজয়নগর আমলের অমূল্য ম্যুরাল ও চিত্রকর্ম। বীরভদ্র মন্দির ছাড়াও লেপাকশি গ্রামে রয়েছে পাপানাথেশ্বর, রঘুনাথ, শ্রীরাম ও দূর্গা মন্দির।
বীরভদ্র মন্দির থেকে মাইলখানেক দূরে রয়েছে গ্রানাইটে গড়া ভারতের সবচেয়ে বড় ‘নান্দী’ (ষাঁড়)। নান্দী হচ্ছে পূণ্যস্থান কৈলাসের দ্বাররক্ষক। যেখানে শিব ধ্যান করেন বলে সনাতনধর্মীদের বিশ্বাস। এসব মন্দির, প্রতিকৃতি ও প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন নিয়ে বিস্তারিত গল্প হবে অন্য পর্বে। এ পর্ব জটায়ু ও লেপাকশি নিয়েই হোক।
জটায়ুর গল্প তো হলো, এবার লেপাকশি যাওয়া যাবে কীভাবে! আগেই বলা হয়েছে, এটি অন্ধ্রপ্রদেশের একটি গ্রাম। এ রাজ্যের দু’টো রাজধানী- হায়দ্রাবাদ ও অমরাবতী। হায়দ্রাবাদ যদিও তেলেঙ্গানা রাজ্যেরও রাজধানী। বলে রাখা ভালো, তেলেঙ্গানা ২০১৪ সালের আগ পর্যন্ত অন্ধ্রপ্রদেশের মধ্যেই ছিলো।
কাজেই লেপাকশি যাওয়া যাবে অমরাবতী ও হায়দ্রাবাদ দুই রাজধানী শহর থেকেই। হায়দ্রাবাদ থেকে ৪৮৫ কিমি এবং অমরাবতী থেকে লেপাকশির দূরত্ব ৫৭৩ কিমি। যাওয়া যাবে ট্রেন, বাস বা কার ভাড়া করে।
তবে অন্ধ্রপ্রদেশে গ্রাম হলেও লেপাকশি যাওয়া সবচেয়ে সহজ ব্যাঙ্গালোর শহর থেকে। এখান থেকে দূরত্ব মাত্র ১২০ কিমি। ব্যাঙ্গালোর যদিও কর্ণাটকা রাজ্যের রাজধানী।
তবে ব্যাঙ্গালোর থেকে লেপাকশি ট্রেন-বাসে যাওয়াটা বেশ হ্যাপাই হবে। সহজ হবে কার ভাড়া করে গেলে। শহর থেকে বিভিন্ন রেন্টাল কার বা ওলা-উবারে যাওয়া-আসা যাবে। সময় লাগবে সর্বোচ্চ আড়াই ঘণ্টা। গাড়ি হিসেবে প্রতি কিমি নয় থেকে সর্বোচ্চ বারো রুপি পড়বে। ওলা-উবার ক্যাবে কোনো ওয়েটিং চার্জ নেই। সেই হিসেবে সর্বনিম্ন ২৩শ রুপিতে ঘুরে আসা যাবে লেপাকশি গ্রাম।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩৬ ঘণ্টা, আগস্ট ১৯, ২০১৭
এসএনএস