কোনো গাড়ি সেই পথ দিয়ে যেতেই ক্ষুধার্ত রোহিঙ্গাদের ভিড় ঘিরে ধরে সেই গাড়িকে। ভিড় থেকে ভেসে আসে– ‘খাবার দেন-টাকা দেন, দুই-তিনদিন ধরে খাইনি।
শনিবার (০৯ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১টায় ওই পথ ঘুরে ঘুরে দেখা মিলেছে এমন হাহাকারের চিত্র।
গত মাসে রাখাইন রাজ্যে পুলিশ ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের হামলার পর সেখানে নতুন করে শুরু হয়েছে অস্থিরতা।
এরপর থেকে তাদের কারো জায়গা হয়েছে সড়কে, কারও বা পাহাড়ে-জমিতে। তাদের কারো কারো মাথার ওপর ত্রিপল থাকলেও বেশিরভাগই একেবারে খোলা আকাশের নিচে।
এদেরই একজন কালা মিয়া। বছর ষাটের কালামিয়ার মংডুর ঘরাখালী এলাকায় ছিল গ্যারেজ। তাতে বেশ ভালোই চলে যাচ্ছিল সংসার। কিন্তু নতুন করে অস্থিরতা শুরু হলে সেই গ্যারেজ-তিলে তিলে গড়ে তোলা বাড়িঘর ফেলে পালিয়ে এসেছেন বাংলাদেশে। জায়গা হয়েছে একটি গ্যারেজে। তাই কিছুদিন আগেও টাকা পয়সার মালিক থাকা কালা মিয়া এখন একেবারেই পথের ভিখারি।
কালা মিয়া বলেন, ‘আমার গ্যারেজ ছিল, তাতেই বেশ ভালোই চলে যেত সংসারের খরচপাতি। কিন্তু অস্থিরতা শুরু হলে সেনাবাহিনী আমার এক ছেলেকে গুলি করে মেরে ফেলে। তাই পরিবারের ৯ সদস্যকে নিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছি। এরপর এক পরিচিতের মাধ্যমে গ্যারেজে উঠেছি। গত দুইদিনে আমরা একবেলা খেতে পেরেছি। তাই ভিক্ষা করছি। ’
পাশেই ভিক্ষা করছিল রহমত উল্লাহ নামে আট বছর বয়সী এক শিশু। রহমত উল্লাহ বলে, গত পরশু থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত মাত্র একবেলা খাবার খেয়েছে সে। তার দাবি বাবাকে সেনাবাহিনী গুলি করে মেরে ফেলেছে। তার মা তার আরেক ছোটভাইসহ তাকে নিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে এসেছে। এখন কিছু খাবার কিনতে ভিক্ষা করছে সে।
বালুখালী এলাকায় কথা হয় আসমা নামের এক নারীর সঙ্গে। হেঁটে দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া ও খিদের জ্বালায় স্বামী সৈয়দুল আমিন খুব অসুস্থ। আসমা দাবি করেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী তার এক ছেলে ও এক মেয়েকে পুড়িয়ে মেরে ফেলছে। পরে তারা কোনোরকম পালিয়ে এসেছেন। এরপর থেকে চিড়া-বিস্কুট জুটেছে তাদের কপালে।
তবে হোসনে আরা নামের আরেক নারীর কপালে কিছু খাবার জুটেছে। তিনি বলেন, ‘আমার তিন আনা পরিমাণ কানের দুল ছিল। সেই দুল আট হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করেছি। ফলে আপাতত ভাত খেতে পারছি। কিন্তু টাকা শেষ হলে আমাকেও ভিক্ষাবৃত্তিতে নামতে হবে। ’
পথে পথে কথা হয় আরও অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থীর সঙ্গে। তাদের প্রায় সবারই এক কথা-তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আত্মীয়স্বজনদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। প্রায় সবাই এক কাপড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন।
এদিকে ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন সামাজিক ও ইসলামিক সংগঠন ট্রাকে করে ত্রাণ নিয়ে যাচ্ছেন সেখানে। পরে ট্রাক থেকে সেই ত্রাণের প্যাকেট তারা রোহিঙ্গাদের উদ্দেশ্যে ছুঁড়ে মারছেন। শুধু খাবার নয়, কেউ কেউ নতুন ও পুরনো কাপড়ও দিচ্ছেন রোহিঙ্গাদের।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯, ২০১৭
আরডিজি/আইএসএ/টিসি