মায়ানমার থেকে সর্বশেষ পর্যায়ে যেসব রোহিঙ্গা নারীপুরুষ বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করছেন তারা এসব কথা জানিয়েছেন।
শনিবার মায়ানমার সীমান্তবর্তী কক্সবাজার জেলার উখিয়ার কুতপালং, বালুখালী, পালংখালী এলাকা ঘুরে শরণার্থীদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে এই তথ্য।
তাদের ভাষ্যমতে, মাইকিং করে বলা হচ্ছে, ‘‘মায়ানমার তোমাদের দেশ নয়। তোমরা বাঙালি।
উখিয়ার কুতপালং এলাকায় টেলিভিশন উপকেন্দ্রের সামনে দেখা হয় মায়ানমারের মংডু জেলার থামি থেকে আসা দিলারার সঙ্গে। দিলারা স্বামী-সন্তানসহ পাঁচজন নিয়ে এসেছেন।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের পাড়ায় প্রায় ৫০০ পরিবার ছিল। গত এক সপ্তাহে ২১ জনকে কেটে হত্যা করা হয়েছে। এরপর গতকাল (শুক্রবার) থেকে আবার মাইকিং করে আমাদের ১২ তারিখের মধ্যে চলে যেতে বলছে। তাই আর সেখানে থাকার সাহস পাইনি। দুইদিনেই আমাদের পুরো পাড়া সাফ হয়ে গেছে। সবাই বাংলাদেশে চলে এসেছে। ’
মায়ানমারের রাচিদং থানার শিলখালী এলাকা থেকে আসা মোক্তার আহমদ (৩০) বাংলানিউজকে জানান, ১৫ দিন আগে হঠাৎ করে পাড়ায় ঢুকে মায়ানমারের সেনাবাহিনী এলোপাতাড়ি গুলি করতে শুরু করে। মোক্তার গুলিবিদ্ধ হয়ে পালিয়ে আসে বাংলাদেশে।
‘আমার পরিবারে আরও ১১ জন ছিল। গত (শুক্রবার) রাতে তারা সবাই চলে এসেছে। সেখানে নাকি মাইকিং করে চলে যেতে বলেছে। সেজন্য সবাই এসে গেছে। ’ বলেন মোক্তার।
উখিয়ার বালুখালী মাদ্রাসার সামনে দেখা হয় মায়ানমারের রাচিদংয়ের ধইনচ্যাপাড়ার বাসিন্দা সাইফুল্লাহর সঙ্গে।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘মাইকিং করে চলে যেতে বলছে। আবার অতর্কিত এসেও ঘরে আগুন দিচ্ছে। গুলি করছে। বার্মার মগরা যা ইচ্ছা তা-ই করছে। ’
মংডু জেলার নাইছ্যাপুর গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমাদের গ্রামে ৬০০ ঘর ছিল। একদিন আগে মাইকিং করে চলে যেতে বলা হল। আমরা চলে এসেছি। এরপর তার সব ঘরে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে সেখানে বার্মার (মায়ানমার) পতাকা উড়িয়ে দিয়েছে। ’
মংডু জেলার ভুচিদং থানার বাসিন্দা নূরুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘এলাকায় মাইকিং করে বলছে, ১২ তারিখের মধ্যে চলে যাও। তোমাদের দেশ বাংলাদেশ। বাংলাদেশে চলে যাও। না হলে কেটে ফেলব। ’
গত মাসে মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুলিশ ক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর সেখানে নতুন করে সহিংসতা শুরু হয়েছে। নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ এবং ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার পর দলে দলে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে শুরু করেছেন রোহিঙ্গারা।
এর মধ্যে শনিবার জাতিসংঘ তথ্য দিয়েছে, বাংলাদেশে ইতোমধ্যে তিন লাখ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে।
এছাড়া সহিংসতা শুরুর পর মায়ানমার প্রায় রোহিঙ্গাশূন্য হতে চলেছে বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে তথ্য এসেছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯৫৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৯,২০১৭
আরডিজি/টিসি