জন্ম নিয়ে পৃথিবী চেনার আগেই এই শিশুদের দেখতে হচ্ছে নৃশংসতা। জীবনের শুরুতেই তাদের পরিচিত হতে হচ্ছে প্রতিকূলতার সঙ্গে।
উখিয়ার কুতুপালংয়ে অস্থায়ী শরণার্থী ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের দেখতে যান বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন কারিতাসের সহকারী নির্বাহী পরিচালক রঞ্জন ফ্রান্সিস রোজারিও।
সোমবার উখিয়ার কুতুপালং এলাকায় উদ্বাস্তু হয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী বসতি ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ নারীর কোলেই একজন করে শিশু। প্রতিটি ঘরেই ৫-৬ জন থেকে ১১ জন পর্যন্ত শিশু আছে। রোহিঙ্গা নারীরা কাউকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন। জ্বর, কাশিসহ বিভিন্ন অসুখে ভুগছে অনেক শিশু। প্রতিটি ঘরে নবজাতকের কান্না। ।
মিয়ানমারের মংডু জেলার ভুদাইসন থেকে আসা হালিমা বেগমের ৮ সন্তান। এরমধ্যে সবচেয়ে ছোট হারেসের বয়স ১০ মাস। ওমরের বয়স ২ বছর ও রফিকের বয়স ৩ বছর। বাকিদের বয়স ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে।
হালিমা বাংলানিউজকে বলেন, তিনটা এখনো কোলের বাচ্চা। বাকিরা বাইরে গিয়ে ত্রাণ সংগ্রহ করছে। ভিক্ষা করেও খেতে পারছে।
ভুচিদংয়ের ফাতিয়া থেকে আসা গুলবাহারের ৪ সন্তান। এর মধ্যে ইব্রাহিমের বয়স ৯ মাস। বাকি তিনজনের বয়স ৫ বছরের নিচে। একই এলাকা থেকে আসা সিতারার ৫ সন্তান। ছোট মেয়ে মিনারার বয়স ৮ মাস। বাকিদের বয়স ৫ বছরের নিচে।
ভুচিদংয়ের থামী থেকে ৮ সন্তান নিয়ে আসা মোস্তফা বেগমের সবচেয়ে ছোট সন্তানের বয়স ৯ মাস। একই জায়গা থেকে তাহেরা এসেছেন এক মাসের এক বাচ্চা এবং সঙ্গে আরও ৪ সন্তান নিয়ে।
ভুচিদং থেকে আসা ৮ সন্তানের মা মাহমুদা খাতুন আবারও সন্তানসম্ভবা। ৯ মাসের গর্ভবতী মাহমুদার কোলজুড়ে যে কোন সময় আসতে পারে নবজাতক।
জন্মের দিন রাতেই সদ্যজাত মেয়েকে নিয়ে মংডুর নাসিদং থেকে পালিয়ে এসেছেন সফুরা বেগম। মাত্র ২৬ বছর বয়সেই ৮ সন্তানের মা সফুরা।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা.আব্দুস সালাম বাংলানিউজকে বলেন, রোহিঙ্গাদের মধ্যে পরিবার পরিকল্পনার কোন বিষয় নেই। প্রত্যেক পরিবারেই ৭-৮টি করে বাচ্চা। একজনের ১১-১২ জন সন্তানও আছে। এত শিশু নিয়ে তারা এসেছেন তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেখাও বড় ধরনের সমস্যা। সেটা পুরোপুরি সম্ভবও নয়।
কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আয়াতুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এই শিশুরা যখন একটু বড় হবে, পর্যাপ্ত খাবার পাবে না, অনাহারে-অর্ধাহারে থাকবে। তখন তারা খুন-রাহাজানিসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। এটা নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করবে।
খেলাঘর কক্সবাজার জেলা কমিটির সভাপতি মো.কলিমউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, রোহিঙ্গা শিশুরা বড় হয়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে জড়িয়ে পড়বে। তারা কক্সবাজারের মূল শহরে, সমুদ্র সৈকতসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়বে। এতে দেশে অস্থিরতা তৈরি হবে।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা.প্রণব কুমার চৌধুরীর মতে, রোহিঙ্গা শিশুদের মধ্যে যাদের বয়স ২-৩ বছর কিংবা তারও বেশি তাদের মধ্যে নির্যাতন, কষ্ট করে বাংলাদেশে প্রবেশ, এসব দুঃসহ স্মৃতি তাদের পক্ষে ভোলা সম্ভব হবে না। তারা মনোবৈকল্য রোগে ভুগবে। তাদের বেড়ে উঠা স্বাভাবিক হবে না।
মিয়ানমারে সেনাচৌকি ও চেকপোস্টে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর গত ২৩ আগস্ট থেকে সেখানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে সীমান্ত পার হয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে শুরু করেছেন রোহিঙ্গারা। অনুপ্রবেশের স্রোত এখনও অব্যাহত আছে।
কি পরিমাণ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন তার সঠিক হিসাব কারও কাছে নেই। তবে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে বলে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৭
আরডিজি/আইএসএ/টিসি
মিয়ানমারে ফিরতে রাজি নন নির্যাতিত রোহিঙ্গারা
পথে পথে তল্লাশি, রোহিঙ্গাদের সতর্কে মাইকিং
রোহিঙ্গাঢলে হুমকির মুখে পর্যটন শিল্প
কত রোহিঙ্গা এসেছে, সঠিক হিসেব নেই কারো কাছে
সক্রিয় দালালচক্র, পুঁজি রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ
রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ৪ চেকপোস্ট
পাহাড়-বন দখল করে উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের বসতি
‘ওপারে বাদশা ছিলাম, এপারে ফকির হলাম’
মঙ্গলবারের মধ্যেই রোহিঙ্গাদের মায়ানমার ছাড়ার আলটিমেটাম
স্ত্রীদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে প্রতিরোধ যুদ্ধে স্বামীরা