গুলি আর আগুনের মুখে টিকতে না পেরে আশপাশের কয়েক গ্রামের মানুষ রাতের আঁধারেই বেরিয়ে পড়েন। পাহাড়ি পথ বেয়ে মিয়ানমারের কাঁটাতারের বেড়া ডিঙিয়ে এক কাপড়ে আশ্রয় নেন তুমব্রু সীমান্তের নো-ম্যানস ল্যান্ডে।
মিয়ানমারের ঢেকিবুনিয়া থেকে পালিয়ে নো-ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নেওয়া আহমদ শফী (৪৫) ত্রাণ হাতে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে বাংলানিউজের কাছে সেদিনের দুঃসহ স্মৃতির কথা তুলে ধরেন।
কান্নাজড়িত কন্ঠে নিজের ভাষায় আহমদ শফী বাংলানিউজকে বলেন, ‘আঁরা বার্মার মানুষ। বার্মার মিলিটারি আঁরারে গুলি গইরয্যে, ঘরত অইন দিয়ে। আর বাংলাদেশর মানুষ আঁরারে মহব্বত গরি আনিয়রে খানা দের। ’ (আমরা মিয়ানমারের মানুষ। মিয়ানমারের মিলিটারি আমাদের গুলি করেছে। ঘরে আগুন দিয়েছে। আর বাংলাদেশের মানুষ ভালোবাসা দিয়ে আমাদের এনে খাবার দিচ্ছে। )
গুলির মুখে পালিয়ে আসার পথে মগরা কেটে দুই টুকরো করে ফেলে ঢেকিবুনিয়া গ্রামের তাজুলের বাবা সিদ্দিকুল ইসলামকে। মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের যখন তাজুলের মাথায় হাত দেন তখন কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
তাজুল বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের একজন মন্ত্রী আমাদের খাবার দেওয়ার জন্য এসেছেন। বাংলাদেশ সরকার, বিজিবি আমাদের জন্য অনেক করছে।
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী গ্রাম তুমব্রুতে পৌঁছেন। মন্ত্রী আসার খবর পেয়ে নো-ম্যানস ল্যান্ড থেকে তমব্রু খাল পার হয়ে দলে দলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করতে শুরু করেন। সীমান্তে দায়িত্বরত বিজিবি সদস্যরা তাদের সুশৃঙ্খলভাবে সারিবদ্ধ করে তুমব্রু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নিয়ে যান।
সেখানে মন্ত্রী নো-ম্যানস ল্যান্ডে বসবাসরত এক হাজার পরিবারের মধ্যে চাল, ডাল, বিস্কুটসহ বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন। ত্রাণ নিয়ে তমব্রু খাল পার হয়ে আবারও রোহিঙ্গারা ফিরে যান নো-ম্যানস ল্যান্ডে।
ত্রাণ বিতরণের আগে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, এখানে (নো-ম্যানস ল্যান্ডে) ১৫ হাজার লোক আছে। আমাদের বিজিবি তাদের খাওয়াচ্ছে। বিভিন্ন মানবিক সেবা দিচ্ছে। খুব শীঘ্রই তাদের উখিয়া উপজেলায় যে ২০০০ একর জমি রোহিঙ্গাদের থাকার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে সেখানে পুনর্বাসন করা হবে।
মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে বান্দরবানের তমব্রু, কোণাপাড়া এবং ঘুমধুম এলাকায় প্রায় ২০ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বলে তথ্য আছে বিজিবির কাছে।
গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে পুলিশ ও সেনাচৌকিতে একযোগে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের হামলার পর সেইদেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও মগরা নির্বিচারে হত্যার পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। প্রাণের ভয়ে রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসতে শুরু করেন বাংলাদেশে।
বান্দরবান এবং কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্ত পার হয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার রোহিঙ্গা অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করছে বাংলাদেশে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থার হিসাবমতে, বাংলাদেশে এ পর্যন্ত ৪ লাথ ৭০ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে। তবে স্থানীয়দের মতে, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের পরিমাণ ৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।
একমাসে গণহত্যা-গণধর্ষণ-অগ্নিসংযোগ সবই করলো মিয়ানমার
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭
আরডিজি/টিসি