বিষয়টি নিশ্চিত করে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহসেন উদ্দিন আহমদ বাংলানিউজকে বলেন, স্পেশাল আয়া-ওয়ার্ডবয়দের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এজন্য তাদেরকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বিকল্প পদ্ধতিতে জনবল নিয়োগ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে এক দফা জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আয়া-ওয়ার্ডবয়দের স্থলে তারা দায়িত্ব পালন করবে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রায় সাড়ে তিনশ স্পেশাল আয়া-ওয়ার্ডবয় হাসপাতালে দায়িত্বরত ছিলেন। তাদেরকে কোনো সম্মানি দেওয়া হতো না। অবৈতনিক হিসেবে হাসপাতালে যোগ দিতেন তারা।
তবে প্রতি রোগীকে সেবা দেওয়ার বিপরীতে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা আদায়ের নিয়ম করে দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এ সুযোগে মানুষকে জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল তারা।
এদিকে, অব্যাহতি পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্পেশাল-ওয়ার্ডবয়রা। হাসপাতালে ছয় বছর ধরে আয়ার কাজ করেছেন রোকেয়া বেগম। অব্যাহতি পাওয়ার আগ পর্যন্ত দায়িত্বে ছিলেন নয় নম্বর শিশু মেডিসিন ওয়ার্ডে।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমরা এত বছর এ হাসপাতালে কাজ করেছি। কর্তৃপক্ষ আমাদের কোনো সুযোগ না দিয়ে অব্যাহতি দিলো। আমরা পুনর্বাসনের সুযোগ চাই।
হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার কামরুজ্জামান বলেন, হাসপাতালে যত অভিযোগ, বেশিরভাগ এদের বিরুদ্ধে। কিন্তু তারা হাসপাতালের কর্মচারী নয়।
হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, টাকা ছাড়া এরা কোনো কাজ করে না। প্রায় সময় রোগী ও স্বজনদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। জিম্মি করে টাকা হাতিয়ে নেয়। টাকার বিনিময়ে বেড ভাড়া দেয়। চুরি করে ফেলে রোগীর ওষুধপত্রসহ প্রয়োজনীয় জিনিস। দালালদের ওয়ার্ডে ঢুকতে সহায়তা করে। হাসপাতালের যন্ত্রপাতি চুরির অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আখতারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, জনবল সংকট থাকায় তাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে অহরহ অভিযোগ আসছে। এজন্য সেবা নিশ্চিতে নতুনভাবে জনবল নিয়োগ করে এদেরকে কাজ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সরা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এসব আয়া-ওয়ার্ডবয়দের অপকর্মের কারণে হাসপাতালের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে।
বৃহত্তর চট্টগ্রামবাসীর চিকিৎসার শেষ আশ্রয়স্থল এ হাসপাতাল। প্রতিদিন গড়ে আড়াই থেকে তিন হাজার রোগী এ হাসপাতালে ভর্তি থাকেন। জরুরি চিকিৎসা নিতে আসেন আট থেকে নয়শ রোগী। বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন দেড় থেকে দুই হাজার রোগী।
কিন্তু পাঁচশ শয্যার জনবল দিয়ে চলছে এক হাজার ৩১৩ শয্যার এ হাসপাতাল। তাই জনবল সংকটে সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মরতরা। এজন্য (অবৈতনিক) আয়া-ওয়ার্ডবয় নিয়োগ দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারা বিভিন্ন অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৯
এসইউ/টিসি