ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

জলজট-যানজটে দুর্ভোগ, চট্টগ্রামে ভূমিধসের শঙ্কা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৯
জলজট-যানজটে দুর্ভোগ, চট্টগ্রামে ভূমিধসের শঙ্কা বহদ্দারহাট-মুরাদপুর সড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: ভারী বর্ষণে সৃষ্ট জলজটে ডুবে গেছে সড়ক। হাঁটু কিংবা কোমর পানিতে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে আছে যানবাহন। দীর্ঘ যানজটে অচল নগরে সীমাহীন ভোগান্তিকে সঙ্গী করেই বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সারাদিন পার করলেন চট্টগ্রামের মানুষ।

সকাল থেকে বৃষ্টি শুরু হলেও সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা ভারী বর্ষণে রূপ নেয়। বেলা ১১টার পর থেকে ডুবতে শুরু করে চট্টগ্রাম নগরের নিম্নাঞ্চল।

কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমর সমান পানিতে ডুবে যায় সড়ক, দোকান, বাসা-বাড়ি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কয়েকঘণ্টার টানা বর্ষণ এবং জোয়ারের কারণে নগরের অক্সিজেন, বাকলিয়া, চান্দগাঁও, মুরাদপুর, ষোলশহর, ওয়াসার মোড়, প্রবর্তক মোড়, আগ্রাবাদ এবং হালিশহরের অধিকাংশ এলাকা ডুবে যায়।

পানিতে ডুবে যায় প্রবর্তক মোড়।  ছবি: সোহেল সরওয়ার

নগরের নতুন ব্রিজ থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রধান সড়কের বেশ কয়েকটি এলাকা পানিতে ডুবে যাওয়ায় যানচলাচলে ধীরগতি নেমে আসে। নগরজুড়ে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। এতে আটকা পড়েন বিমানবন্দরের যাত্রী, রোগীসহ নানা শ্রেণি ও পেশার মানুষ।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উত্তর চট্টগ্রাম থেকে নগরে প্রবেশের প্রধান দ্বার অক্সিজেন এলাকা পানিতে ডুবে যাওয়ায় দুপুরে সেখানে প্রায় আধা কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ফেরৎ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

অক্সিজেন থেকে মুরাদপুরমুখী সড়কে যান চলাচল থেমে থেমে চললেও বহদ্দারহাট থেকে ষোলশহর পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়। ভারী বর্ষণে জলাবদ্ধতার কারণে দেওয়ান হাট, আগ্রাবাদ, হালিশহরসহ বেশ কয়েকটি সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

বৃষ্টির কারণে জোয়ারের পানিতে আগ্রাবাদ মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের নিচতলায় হাঁটু পানি জমে। এতে হাসপাতালের শিশু বিকাশ কেন্দ্র, জেনারেল ওয়ার্ড, বহির্বিভাগ ও প্রশাসনিক কার্যালয় বন্ধ করে দেওয়া হয়।

আগ্রাবাদ মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের নিচতলায় হাঁটু পানি জমে।  ছবি: উজ্জ্বল ধর

পতেঙ্গা আবহাওয়া কার্যালয়ের সহকারী পূর্বাভাস কর্মকর্তা রিকান্ত কুমার বসাক বাংলানিউজকে জানান, বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টা থেকে পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৯৪.৪ মিলি মিটার বৃষ্টির রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টা জুড়েও চট্টগ্রামে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।

তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের কারণে সাগর উত্তাল রয়েছে। এ কারণে চট্টগ্রাম বন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়াও ভারী বর্ষণের কারণে ভূমিধসের সম্ভাবনা থাকায় পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস করা লোকজনকে সরে যেতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ভারী বর্ষণে ভূমিধসের শঙ্কা থাকায় নগরে সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন ১৭ পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস করা লোকজনকে সরাতে কার্যক্রম চালিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।

পাহাড়ে মাইকিং করে জেলা প্রশাসন।  ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দেলোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ভারী বর্ষণে ভূমিধসের সম্ভাবনা থাকায় নগরের বিভিন্ন পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস করা লোকজনকে সরিয়ে নিতে মাইকিং কার্যক্রমসহ সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছে জেলা প্রশাসন।

তিনি বলেন, সেখান থেকে লোকজনকে সরে আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে উদ্বুদ্ধ করছেন আমাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস করা এসব লোকজনের জন্য ৮টি আশ্রয়কেন্দ্র এবং পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চলতি বছরে বর্ষার আগেই টানা অভিযান চালিয়ে নগরের ১৭ পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস করা ৮৩৫টি পরিবারকে উচ্ছেদ করে ওইসব পাহাড় সংশ্লিষ্ট মালিক ও সংস্থাকে বুঝিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন। তবে সংস্থাগুলোর তদারকির অভাবে ফের সেখানে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস করতে শুরু করে নিম্ন আয়ের মানুষ।

অভিযোগ রয়েছে, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী স্থানীয় কিছু ব্যক্তি সেবা সংস্থাগুলোকে ম্যানেজ করে এসব ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ দিয়েছে। সেখানে অবৈধভাবে ঘর তৈরি করে ঘর প্রতি দেড়-দুই হাজারে ভাড়া দিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। ফলে স্থায়ীভাবে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বাস করা লোকজনকে সরানো সম্ভব হচ্ছে না।

জলাবদ্ধতা চট্টগ্রামের দীর্ঘ দিনের ‘দুঃখ’ হলেও সরকার জলাবদ্ধতা নিরসনে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প হাতে নেয়। এর মধ্যে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। যদিও প্রকল্প হাতে নেওয়ার বেশ কয়েক বছর পার হতে চললেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখা যায়নি। তবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষ হলে চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১২, ২০১৯
এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।