ঢাকা, মঙ্গলবার, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

কর্ণফুলীর চিত্র ভয়াবহ, নদী থাকবে কিনা সন্দেহ: ভূমিমন্ত্রী

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০১৯
কর্ণফুলীর চিত্র ভয়াবহ, নদী থাকবে কিনা সন্দেহ: ভূমিমন্ত্রী বক্তব্য দেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ।

চট্টগ্রাম: ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ বলেছেন, কর্ণফুলীর বর্তমান চিত্র ভয়াবহ। এভাবে যদি চলতে থাকে অদূরভবিষ্যতে এ নদী থাকবে কিনা আমার সন্দেহ আছে। এখন যে অবস্থায় আছে তা আর ক্ষতি করতে দেওয়ার সুযোগ নেই।

শনিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে নগরের ফিরিঙ্গিবাজারে কর্ণফুলী ঘাটে চ্যানেল আইয়ের ২১ বছরে পদার্পণ উপলক্ষে আয়োজিত গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।  

তিনি বলেন, সবই সরকার করে দেবে এমন নয়।

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আমাদের প্রবৃদ্ধি ৭-৮ শতাংশে থাকছে। রিজার্ভ বেড়েছে।
কর্মসংস্থান বেড়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হয়েছে ব্যাপক। এর সঙ্গে যদি আমাদের মাইন্ডসেট পরিবর্তন করতে না পারি তাহলে এসব অর্জন সাসটেইনেবল হবে না।

কর্ণফুলীর বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব বেশি উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বিশ্বের মধ্যে একমাত্র গড গিফটেড পোর্ট চট্টগ্রাম বন্দর। ২ হাজার ১০০ বছরের বেশি এ বন্দরের বয়স। কর্ণফুলী নদী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটিকে ঘিরে সরকারের অনেক পরিকল্পনা আছে। কর্ণফুলী নদী বন্দরের ব্যবহারের বিষয় আছে।

বন্দর চেয়ারম্যানের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, নদী রক্ষায় দ্রুত যা যা করার করতে হবে। ড্রেজিং ভেরি ইম্পর্টেন্ট। অ্যাগ্রেসিভলি কাজ করেন। আমরা তো আছি। আমি চাই আপনি থাকাবস্থায় একটি ম্যানুয়াল তৈরি করে যান। যাতে সাসটেইনেবল হয়। দরকার হলে স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে বসতে হবে। বন্দরকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।   

বালু এখন গোল্ডের মতো হয়েছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, বালুর দাম বেশি। অনেকে নানা ভাবে নদীর বালু নিয়ে যাচ্ছে। বন্দরকে দায়িত্ব নিতে হবে কর্ণফুলী নদী রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে।

তিনি বলেন, নিজেদের ইচ্ছেমতো চলা আর ঠিক হবে না। সবাই মিলে কর্ণফুলীকে রক্ষা করতে হবে। এটি আমাদের অহংকার, আমাদের প্রাণ। এটিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কর্ণফুলীর দুই পাড়ের শিল্পকারখানা সরাতে হবে। সিরিয়াসলি চিন্তা করতে হবে। না হলে হবে না। শিল্পকারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।

লাইটারেজ জাহাজের যত্রতত্র পার্কিং বন্ধের আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সাগরের সঙ্গে এ নদীর লিংক আছে। আমাদের বাণিজ্য বাড়ছে। লাইটারেজ জাহাজ বাড়ছে। আজ থেকে ১০ বছর আগেও এত জাহাজ ছিল না নদীতে। কেন?

ভূমিমন্ত্রী বলেন, হতে পারে নিন্মচাপ সৃষ্টি হলে জাহাজ আসবে নদীতে। কিন্তু পার্কিংয়ের জন্য এ নদী নয়। নেভিগেশনে সমস্যা হচ্ছে। সিলট্রেশন হচ্ছে। দূষণ হচ্ছে। বন্দর চেয়ারম্যানকে বিষয়টি কড়াভাবে দেখতে হবে। প্রয়োজনে কোস্টগার্ডের সহযোগিতা নিন।

তিনি বলেন, হালদা নদী একটি বিস্ময়। মৌসুমে মাছ ডিম ছাড়তে আসে। আবার চলে যায়। এটা প্রাকৃতিক বিষয়। কিন্তু কয়েক বছর ধরে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে শুনেছি।

পলিথিনের কারণে কর্ণফুলীতে ড্রেজার মেশিন অকার্যকর হয়ে যাওয়ার ছবি দেখিয়ে মন্ত্রী বলেন, পলিথিনের এই যদি অবস্থা হয়। এটা কার দায়িত্বে পড়ে। যত বেশি পারি সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।

সমন্বয়ের অভাব আছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, সবার সঙ্গে সবাই কথা বলে ধাপে ধাপে কাজ করলে সময় বাঁচবে, টাকা বাঁচবে। সিটি করপোরেশন বলেন সিডিএ বলেন সবাই কিন্তু সরকারের টাকা খরচ করছে। আলটিমেটলি জনগণের টাকা যাচ্ছে। প্রপার সমন্বয় থাকলে শুধু কর্ণফুলী নয়, সাসটেইনেবল সিটি হিসেবে চট্টগ্রামকে গড়ে তুলতে পারবো।  

কর্ণফুলী নদী রক্ষায় ড্রেজিংসহ যা যা করা দরকার সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেবেন বলে জানান মন্ত্রী।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, কর্ণফুলী আমাদের অস্তিত্ব। কর্ণফুলীকে দখল ও দূষণমুক্ত করতে হবে। কর্ণফুলী নদী কেন, কী কারণে, কী জন্য দূষণ হচ্ছে এটি কমবেশি সবাই জানি। সবাই বুঝি। সবাই যার যার অবস্থান থেকে নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করলে দখল-দূষণ থেকে নদী রক্ষা পাবে।

তিনি বলেন, আমাদের প্রতিজ্ঞা করা উচিত, নাগরিক দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করবো। তাহলে বাসযোগ্য, সাসটেইনেবল সিটি ফিরে পাবো। চার বছর মেয়রের দায়িত্ব পালনের তিক্ত ও ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা হচ্ছে নগরবাসীর সম্পৃক্ততা-সহযোগিতায় অনেক ঘাটতি আছে।

মেয়র বলেন, কর্ণফুলীর জন্য বন্দরকে দায়ী করা হয়। ক্যাপিটাল ড্রেজিংতো করতে পারছে না। পলিথিনের লেয়ার জমে গেছে। কোনো মেকানিজম কাজ করছে না। তাই নাগরিকদের ভূমিকা বেশি। জনসচেতনতা প্রয়োজন।  

বিশেষ অতিথি ছিলেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল জুলফিকার আজিজ, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহ, চট্টগ্রাম চেম্বারের সহ-সভাপতি ও সাইফ পাওয়ারটেকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার মো. রুহুল আমিন, বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি এমএ সালাম, দৈনিক আজাদী সম্পাদক এমএ মালেক।

উপস্থিত ছিলেন, হালদা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মনজুরুল কিবরীয়া, কর্ণফুলী বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইদ্রিস আলী, আইবিএফবি’র সভাপতি এসএম আবু তৈয়ব, স্থপতি আশিক ইমরান, কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব প্রমুখ।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিনিয়র সাংবাদিক ও কর্ণফুলী বাঁচাও আন্দোলনের উদ্যোক্তা আলীউর রাহমান। স্বাগত বক্তব্য দেন চ্যানেল আইয়ের চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রধান চৌধুরী ফরিদ।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২. ২০১৯
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।