সোমবার (১৪ অক্টোবর) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে ৫০তম বিশ্ব মান দিবসের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিভাগীয় কমিশনার মো. আবদুল মান্নান এসব কথা বলেন। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল ‘ভিডিও মান বৈশ্বিক সম্প্রীতির বন্ধন।
তিনি বলেন, মিনারেল ওয়াটারের নামে যা বিক্রি হচ্ছে তা আদৌ মিনারেল ওয়াটার? বিএসটিআই'র আওতার বাইরে থাকা পণ্যগুলোর কী অবস্থা? এত ভেজাল খাচ্ছি আমাদের দেহ পচে কিনা সেটিই এখন দেখার বিষয়। সম্রাট নেপোলিয়নের মরদেহ অনেক বছর পর সমাধি থেকে তোলার পর দেখা গেলো পচেনি।
প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব মান দিবসের বাণীতে বলেছেন, ভিডিএ হচ্ছে একটি উন্নত ও আধুনিক প্রযুক্তিগত মাধ্যম, যার মাধ্যমে কোনো বিষয়কে সহজে প্রকাশ করা যায়। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বিভিন্ন তথ্যাদি ও ছবি ভিডিওর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী জনগণের মধ্যে পারস্পরিক বিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। ‘ভিডিও মান’ বৈচিত্র্যময় বিশ্বকে একত্রিত করে সম্প্রীতির বন্ধন সৃষ্টির মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নসহ সকল ক্ষেত্রে অভিন্ন নিয়ম অনুসরণের ফলে পৃথিবীকে বিশ্বস্ততার বন্ধনে আবদ্ধ করতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। বিশ্বায়নের যুগে সকলের জন্য নিরাপদ ও বিশ্বাসযোগ্য পৃথিবী গড়তে ‘আন্তর্জাতিক মান’র ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
বিভাগীয় কমিশনার বলেন, দেশে হার্টের রিং পরানোতে নৈরাজ্য চলছিল। একেক হাসপাতালে একেক রকম দাম ছিল। সরকার এটি নিয়ন্ত্রণে এনেছে কঠোরভাবে। এখন তারা বিভিন্ন দামের, বিভিন্ন দেশের রিং রাখছে। সরকার সব অনিয়ম অপকর্ম রোধে কঠোর ভূমিকা নিয়েছে।
তিনি বলেন, একসময় এমএলএম কোম্পানিতে সয়লাব হয়েছিল দেশে। তারা ফুড সাপ্লিমেন্ট, বিভিন্ন ধরনের নিম্নমানের আমদানি পণ্য বিক্রি করতো। সংসদে বক্তব্য রেখে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদ এসব বন্ধ করেছিলেন।
বিএসটিআই’র সেবা বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে বলেন, টেস্টিং ল্যাব ঢাকার মতো চট্টগ্রামেও থাকতে হবে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল সব মেটারিয়াল এখানে। জাহাজভাঙা শিল্প, জাহাজ নির্মাণ শিল্প থেকে শুরু করে সব ধরনের কারখানা এ জনপদে আছে। এগুলো পরীক্ষার জন্য বার বার ঢাকা যাওয়া অসুবিধার। সময় ও খরচের ব্যাপার। তাই চট্টগ্রামে উন্নত ল্যাব দরকার।
বিএসটিআই’র ৬০০ জনবল দিয়ে ১৭ কোটি মানুষের দেশে পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ কীভাবে সম্ভব প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, জেলা পর্যায়ে লোকবল ও সাংগঠনিক কাঠামো বাড়ানো দরকার। বিভাগীয় পর্যায়ে এক ছাতার নিচে সব টেস্ট নিয়ে আসতে হবে। যাতে শুধু একজায়গায় (ঢাকা) দৌড়াতে না হয়। আমাদের বিসিএসআইআরে অনেক জায়গা পড়ে আছে। দু-একটি পণ্যের জন্য ঢাকায় যেতে হতে পারে। আপনারা যারা এ প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, তারা এসব বলবেন। আপনারা আইডিয়া দেবেন সরকারকে। এর জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পুরস্কারও দিচ্ছে। সরকার কাজ করার জন্য প্রস্তুত।
তিনি বলেন, বিএসটিআই'র সক্ষমতা বাড়াতে হবে। আমদানি করা খাদ্যপণ্যের মান কঠোর ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ছোলা, ডাল, চিনিসহ সব ধরনের খাদ্যপণ্যের মান নিশ্চিত করতে হবে। বেশিদিন বাঁচতে হলে খাদ্যমানে আপস করা যাবে না। মান কিন্তু শুধু খাবারের নয়, যত পণ্য আছে স্ট্যান্ডার্ড রক্ষা করতে হবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কিন্তু ওজন। মাপে সঠিক দিতে হবে। সিল-পাল্লার দিন শেষের পথে। ডিজিটাল পাল্লা ভোক্তাদের কিছুটা স্বস্তি দিয়েছে। টাকা নেবেন, ওজনে কম দেওয়া যাবে না। এটা বড় অপরাধ। নিজে সজাগ হতে হবে। অন্যদেরও সজাগ করতে হবে। যদি ভোক্তাদের সঙ্গে প্রতারণা করেন তবে মনে রাখবেন আপনি মা-বাবা, ভাই-বোন, স্বজনদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী প্রমুখ। বিএসটিআই চট্টগ্রামের পরিচালক প্রকৌশলী মো. সেলিম রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ বক্তব্য দেন বিএসটিআই'র শওকত ওসমান।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৪, ২০১৯
এআর/টিসি