শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) এই পার্বন উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা করছেন অশ্বিনী কুমারের ব্রত। এই ব্রত ‘ব্রতের ভাতের পূজা’ নামেও পরিচিত।
সনাতনী ইতিহাস মতে, স্বর্গের চিকিৎসক অশ্বিনী কুমারদ্বয় সূর্যদেব ও সংজ্ঞা’র পুত্র। অভিশাপগ্রস্ত সংজ্ঞা জগজ্জননী পার্বতীর কাছে নিজের দুর্দশা থেকে মুক্তি চাইলে পার্বতী এক মুষ্টি চাল দিয়ে তাকে বলেছিলেন-আশ্বিন মাসের শেষ তারিখ পূর্বরাত্রে শেষ দিবস রেখে এই চাল ভক্তিপূর্বক রন্ধন শেষে মহাদেবের অর্চনা করতে হবে এবং কার্তিক মাসের ১ম দিবসে সেই অন্ন ভক্ষণে মনস্কামনা পূর্ণ হবে।
অশ্বিনী কুমারদ্বয় হলেন- নাসত্য ও দস্র। ঋগ্বেদ এবং সংস্কৃত সাহিত্যেও অশ্বিনীকুমারদ্বয়ের নাম এসেছে। মহাভারতের আদিপর্বের পৌষ্যপর্বাধ্যায়ে উপমন্যোপাখ্যানে দেব-চিকিৎসক হিসাবে তাদের ভূমিকার কথা জানা যায়।
‘আশ্বিনে রাঁধে, কার্তিকে খায়/যেই বর মাগে, সেই বর পায়’। সনাতন সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িয়ে আছে এই প্রবচন। আশ্বিন সংক্রান্তির রাতে সারারাত জেগে বিশেষ খাবার তৈরি করেন বাড়ির নারীরা। এর মধ্যে অন্যতম গুড়মিশ্রিত নারিকেল। কার্তিকের সকালে সেই নারিকেল ও বাংলা কলা দিয়ে পূজায় নিবেদন করা পান্তা ভাত খাওয়া হয়।
কার্তিক একসময় ছিল অভাবের মাস। সেই মাসের প্রথম দিনের সকালে সন্তানকে ভালোমন্দ খাইয়ে মায়েরা আশা করতেন- ‘পুরো বছরটা ভালো যাবে, সন্তান থাকবে দুধে ভাতে। ’
চট্টগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলে এই সময়টাতে ১৩/২১ বেজোড় সংখ্যার চাল-ডাল, শাপলার ডগা, কাচা কলা, পেঁপে ও নানান সবজি মিলিয়ে রান্না করা হয়। মোমবাতি বা কুপির আলোকশিখার ওপর কলাপাতা রেখে দেওয়া হয়। সকালে কলাপাতায় জমে থাকা কালি ছোটদের কপালে টিপ আকারে লাগিয়ে দেওয়া হতো, যেন কারও খারাপ দৃষ্টি না পড়ে। কালক্রমে এসব সংস্কৃতি এখন বিলুপ্তির পথে।
অশ্বিনী কুমারের ব্রত উপলক্ষে গত কয়েকদিন ধরে নগরে নারিকেল ও গুড়ের জমজমাট বিকিকিনি হয়েছে। দোকান-রাস্তের পাশে ভ্যানগাড়িতে বিক্রি হয়েছে নারিকেল ও বাংলা কলা। ছোট-বড় আকারের নারিকেল ৩৫-৫০ টাকা, গুড় কেজিপ্রতি ৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে বলে জানান দোকানীরা।
নবযুগ পঞ্জিকা মতে, শুক্রবার পঞ্চমী তিথিতে সন্ধ্যায় অশ্বিনী কুমারদ্বয়ের পূজা শেষে শনিবার (১৯ অক্টোবর) ব্রতের ভাত খাওয়া হবে।
এ ব্যাপারে পণ্ডিত মিঠুন চক্রবর্তী বাংলানিউজকে বলেন, বৃহত্তর চট্টগ্রাম ছাড়া দেশের অন্যান্য অঞ্চলে উপোস থেকে অশ্বিনীকুমারের ব্রত পালনের রেওয়াজ তেমন দেখা যায় না। বাংলা বর্ষপঞ্জি সংস্কারের ফলে শুক্রবার কার্তিক মাসের ২ তারিখ হলেও পঞ্জিকা মতে ৩০ আশ্বিন। তাই শনিবার ব্রতের ভাত খাওয়ার ক্ষণ নির্ধারিত হয়েছে। ভক্তি সহকারে ব্রতের ভাত খাওয়ার ফলে রোগমুক্তি হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৮, ২০১৯
এসি/টিসি