বুধবার (৪ মার্চ) দুপুরে আগ্রাবাদের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারের বঙ্গবন্ধু কনফারেন্স হলে দেশি শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের ভূমিকা, শুল্ক সংক্রান্ত সহায়তা বিষয়ে মতবিনিময় ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ট্যারিফ কমিশন ও চট্টগ্রাম চেম্বার এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনামের মতো রফতানি আয় বাড়াতে হলে দক্ষ জনশক্তি দরকার আমাদের। ইজি অব ডুয়িং বিজনেসের সুযোগ তৈরি করতে হবে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কঠিন জিনিস, নিষ্ঠুর প্রতিযোগিতার জায়গা। বৈধ কাগজপত্র, স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হয়। বিদেশিরা এসে নথিপত্র দেখতে পারে। নানা সার্টিফিকেশন, মানবিকতা, মানবাধিকার, শ্রমিকদের অধিকার দেখতে হয়। নানা দেয়াল টপকাতে হয়। এক দেশের পণ্য অন্য দেশের ওপর দিয়ে তৃতীয় দেশে রফতানি হয়ে থাকে।
জি-২০ কান্ট্রির সদস্য ও বিশ্ববাণিজ্যের দশমিক ০৫ শতাংশ হলে ডেভেলপড কান্ট্রি ধরা হয় উল্লেখ করে কমিশন চেয়ারম্যান বলেন, তৈরি পোশাকে আমাদের বড় প্রতিযোগী দেশ ভিয়েতনাম। তারা যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নে শূন্য ট্যারিফ সুবিধা পায় তাহলে আমাদের অনেক পণ্য রফতানিতে কঠিন সমস্যা হতে পারে। দেশে ৩৭টির মতো রফতানি পণ্য ক্যাশ ইনসেনটিভের আওতায় রয়েছে। এটা দীর্ঘমেয়াদি নয়। উদ্যোক্তাদের এ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে ব্যবসা দাঁড় করানো, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রফতানি বৃদ্ধির জন্য।
তিনি ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ, ডলারের দাম পুনর্নিধারণের সুবিধা-অসুবিধা, লিড টাইম কমানো, কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস ইত্যাদি বিষয়ে কথা বলেন।
চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার এবিএম আজাদ, চট্টগ্রামের কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনার মোহাম্মদ এনামুল হক, কাস্টম হাউস কমিশনার এম ফখরুল আলম ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আবু হাসান।
এম ফখরুল আলম বলেন, দেশি শিল্পের স্বার্থ সংরক্ষণে সরকারি দফতরগুলো কাজ করছে। সরকারের কিছু নীতি আছে লিখিতভাবে না। ট্যারিফ শিডিউল, এসআরও, অন্যান্য ডিউটি স্ট্রাকচারের ভিত্তিতে শুল্কহার নির্ধারিত হচ্ছে। যারা স্বচ্ছতার ভিত্তিতে আমদানি করেন তাদের সর্বোচ্চ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। বেসিক ক্যাপিটাল মেশিনারিতে শুল্ক শূন্য থেকে ১ শতাংশ। ট্যারিফ কমিশনের গবেষণা সেল আছে। গবেষণার ভিত্তিতে সরকারকে সুপারিশ করে।
তিনি বলেন, ব্যাপক স্টাডির ভিত্তিতে দীর্ঘমেয়াদের জন্য ট্যারিফ ও শুল্কহার নির্ধারণ করা ভালো। কিন্তু ভোক্তাস্বার্থও দেখতে হবে। সরকারের পরিপূর্ণ শিল্পনীতি, ট্যারিফ নীতি দরকার।
চেম্বার সভাপতি বলেন, অনেক ব্যবসায়ী ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশ সম্পর্কে জানেন না। এ কমিশন এনবিআর, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে সুপারিশমালা দিয়ে থাকে। তাই ব্যবসায়ীদের এ কমিশনের কাছে যেতে হবে। স্থানীয় শিল্প না থাকলে কর্মসংস্থান হবে না।
তিনি বলেন, আমাদের ডাটাবেজ খুবই জরুরি। কত গম, চিনি, তেল, ছোলা ইত্যাদি লাগবে সেই ডাটা নেই। কোনো পণ্যের ওভার ইমপোর্ট হচ্ছে, কোনোটি ঘাটতি পড়ছে। তিনি ভ্যাট মেলা করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সঞ্চালনায় ছিলেন বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সদস্য শাহ মো. আবু রায়হান আলবেরুনী।
পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনে ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের কার্যক্রম তুলে ধরেন মাহমুদুল হাসান।
প্রশ্নোত্তর পর্বে অংশ নেন চেম্বার পরিচালক সৈয়দ জামাল আহমেদ, অঞ্জন শেখর দাশ, ব্যবসায়ী সালাউদ্দিন ইউসুফ, জসীম আহমেদ, চবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহিউদ্দিন, মেট্রোপলিটন চেম্বারের সচিব এম সলিমুল্লাহ প্রমুখ।
চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, দেশে ব্যবসা বাণিজ্যের অগ্রগতিতে বড় চ্যালেঞ্জ আমদানি-রফতানি, চাহিদা, উৎপাদনের ডাটা বেজ না থাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০২০
এআর/টিসি