ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৪ পৌষ ১৪৩১, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৬ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মানসিক দৃঢ়তা থাকলে যেকোনো কাজ নারীও পারে: আতিয়া

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৩৭ ঘণ্টা, মার্চ ৮, ২০২০
মানসিক দৃঢ়তা থাকলে যেকোনো কাজ নারীও পারে: আতিয়া বাংলার জয়যাত্রা জাহাজে ক্যাডেট আতিয়া

চট্টগ্রাম: মানসিক দৃঢ়তা থাকলে পুরুষদের মতো যেকোনো কঠিন কাজই নারীরা করতে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন দেশের অন্যতম সমুদ্রজয়ী নারী ডেক ক্যাডেট আতিয়া।

রোববার (৮ মার্চ) আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে এভাবেই মন্তব্য করলেন তিনি।

কর্ণফুলীর পাড়ের বাংলাদেশ মেরিন একাডেমির ৪৯তম ব্যাচে ২ বছর পড়াশোনা, ১ বছর সমুদ্রগামী জাহাজে ইন্টার্নশিপ (সি টাইম, অনবোর্ড প্রশিক্ষণ), ১ বছর একাডেমিতে পড়াশোনা শেষে সম্প্রতি ৮ মাস ওশান গোয়িং ‘বাংলার জয়যাত্রা’ জাহাজে উত্তাল আটলান্টিক, ভারত মহাসাগর পাড়ি দিয়েছেন তিনি।

একই জাহাজে ছিলো আরও ৪ নারী ক্যাডেট।

ঝিনাইদহের মহেশপুরের মেয়ে আতিয়া।

মা নাজমা ইসলাম একটি কলেজের প্রভাষক ও বাবা আজিজুর রহমান বেসরকারি চাকরিজীবী। আতিয়ার ছোট ভাইও মেরিনার। ছোট একটি বোনও আছে।

জাহাজের চাকরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাহাজে চাকরিটা নিঃসন্দেহে চ্যালেঞ্জিং। বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) ২৭ বছর পর যুক্ত হওয়া নতুন বহরের প্রথম জাহাজ ‘বাংলার জয়যাত্রা’য় কাজ করার সুযোগ পাই। আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকা, শ্রীলংকা, ভারতের অনেক বন্দরে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। আটলান্টিক কয়েকবার পাড়ি দিয়েছি। পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ভ্রমণ হয়েছে জাহাজে।

সচরাচর বাসায় টেলিভিশন ও রেডিওতে আমরা আবহাওয়ার সংবাদে ঘূর্ণিঝড়ের খবর শুনি। সাগর উত্তাল, বিশাল ঢেউ। কিন্তু সরাসরি দেখার সুযোগ সবার হয় না। সবাই নিরাপদ অবস্থানে চলে যান। কিন্তু সমুদ্রগামী জাহাজে চাকরির সুবাদে অনেকবার সাগরে ঝড়ের মুখোমুখি হতে হয়েছে। মধ্য সাগর থেকে কূলে ফেরার উপায় থাকে না। প্রচণ্ড প্রতিকূল পরিবেশে লড়াই করে টিকে থাকতে হয়। সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জাহাজ চালাতে হয়। একটি জাহাজের অনেক বেশি দাম, কার্গোর (পণ্য) নিরাপত্তা, নিজের ও সহকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়। এ সময় টিমওয়ার্কটা খুবই জরুরি।

বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজে কর্মরত ক্যাডেট আতিয়াতিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরে ২ বার, আটলান্টিকে ২ বার, ভারত মহাসাগরে ২ বার ঘূর্ণিঝড়ে পড়ি। রোয়ানু, মোরা যখন আঘাত হানে তখনও আমি জাহাজে ছিলাম।

জাহাজ থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ সুবিধা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সিস্টেম আছে কথা বলার কিন্তু সব জাহাজে নেই। এটা কস্টলিও। ভারত থেকে আফ্রিকা যেতে এক মাস সময় লেগেছে। এ সময় পরিবারের সঙ্গে দুই দিন কথা বলতে পেরেছি। পরিবার, স্বজনদের অসুস্থ কেউ মারা যাচ্ছে কিনা জানার সুযোগ থাকে না। বন্দরে থাকলে পরিবারের সঙ্গে কথা বলা যায় সহজে।

আমি মেয়ে হিসেবে ল্যান্ড ২০-২২ বছর ছিলাম। এরপর জাহাজে যাই। আমাকে তুলনা করতে বললে বলবো, একটা মেয়ের জন্য ভালো জাহাজের কাজের পরিবেশ অনেক ভালো, নিরাপদ। আমার পছন্দ জাহাজে কাজ করা। যদিও জাহাজের কাজ, বাসার বা অফিসের কাজের তুলনায় অনেক বেশি কষ্টের।

ক্যাডেট আতিয়া বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। প্রধানমন্ত্রী নারীদের এগিয়ে নিতে অনেক সুযোগ দিচ্ছেন, তাই নারীরা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছেন। যদি মেরিন একাডেমিতে নারীর পড়ার সুযোগ না থাকতো, বিএসসির বহরে নতুন সমুদ্রগামী জাহাজ যুক্ত না হতো বাংলাদেশের একজন মেয়ে হিসেবে আমার পক্ষে সম্ভব হতো না লাল-সবুজের পতাকাবাহী জাহাজে চড়ে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যাওয়া। আমি মেরিন একাডেমির সব শিক্ষক, প্রশিক্ষক, বিএসসি, নৌবাণিজ্য দফতর, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, মা-বাবা পরিবারসহ দেশবাসীর প্রতিও কৃতজ্ঞ।  

তিনি বলেন, ছেলেদের চেয়ে শারীরিক শক্তি কম। কিন্তু আমি মনে করি, একটা মেয়ে যদি চায় মানসিক শক্তি বেশি থাকলে যেকোনো প্রতিকূলতা ওভারকাম করা সম্ভব। আমরা প্রথম জয়েন করি ক্যাডেট হিসেবে। ডেক ক্যাডেট বা ইঞ্জিন ক্যাডেট। এখন আমি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। পরীক্ষায় পাস করলে থার্ড অফিসার হতে পারবো ইনশাআল্লাহ।  

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০২০
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।